(আচ্ছা পাঠক বলুনতো পৃথিবীতে এমন কোন ট্রেন কি আছে যেই ট্রেনের কোন গন্তব্য নেই?সময়ের চেয়েও দ্রুত গন্তব্যহীন যে ট্রেন ছুটে চলেছে অনন্ত নক্ষত্রবীথি ছাড়িয়ে?
ট্রেনে বসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাই আমার মাথায় অদ্ভুত চিন্তা আসে।এখনো আসছে।আমি হিমশীতল এক বগিতে চাঁদর পেঁচিয়ে বসে আছি।আমার পাশে পুরোপুরি বাঙালি সুন্দরী এক মেয়ে।যে একটু পর পর চোখ পিটপিট করে আমার ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকাচ্ছে।আমি ব্রাইটনেস কমিয়ে দিয়ে গল্প বানাতে শুরু করি।)
***********
সাল ২১৭১।পাকিস্তানের বেলুচ সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অকুতোভয় যোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদ মোস্তাকিম ১৬ চট্টগ্রাম,২১ রাঙ্গামাটি,৩৩ ঢাকাকে সম্পূর্ণ বেলুচে ছড়িয়ে দিয়েছে।বাংলাদেশের অতর্কিত আক্রমণে অস্থির বেলুচিস্থান সহ সমগ্র পাকিস্তান।ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদ মোস্তাকিমের অনুগত অফিসার মেজর রিজভি গভীর রাতে বেলুচির প্রত্যেক ঘরে তল্লাশি রত।এমন করেই সে প্রবেশ করে এক বাড়িতে,তার সাথে অস্ত্র সুসজ্জিত যোদ্ধা।বাড়ির সকল সদস্যকে জড় করা হয় এক রুমে।ভয়ে আতঙ্কে অস্থির সেই পাকিস্তানী পরিবারকে দেখে মেজর রিজভি ২০০বছর পূর্বে ফিরে যায়।
সে চোখ বুজেও স্পষ্ট দেখতে পারে এই বেলুচেই জন্ম নেওয়া পাকিস্তানী অফিসার বিগ্রেডিয়ার আবরার ১৯৭১সালে বাংলাদেশে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট গ্রামে কি তান্ডব লীলাই না চালিয়েছিল।একরাতে সে ১৮জন নিরাপরাধ শিশুকে হত্যা করেছিলো।মাত্র দু'মাসে সেই গ্রামের ৩৩জন নারীকে সে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিলো।মেরে ফেলার আগে উপড়ে ফেলাছিলো স্তনের বোটা,বাঁশের কঞ্চি ঢোকানো হয়েছিলো যোনিপথে।
২০০বছর পর সে বিষাদমাখা ইতিহাস মনে করে শিউরে ওঠে মেজর রিজভি।তার রক্তে ডাক ওঠে,শরীর চন্মন করে।সে লাল চক্ষু নিয়ে বন্দী পাকিস্তানী শিশু আর নারীদের দিকে তাকায়।আতঙ্কে নীল হয়ে যায় সেই পাকিস্তানি পরিবার।তারা বুঝতে পারে মৃত্যু অতি সন্নিকট।
মেজর রিজভি এক শিশুর কাছে এগিয়ে যায়,হাঁটু ভাঁজ করে তার সামনে বসে পরে।তারপর শিশুর মাথা কাছে এনে কপালে চুম্বন করে।দাঁড়িয়ে আবার নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে চিৎকার করে পাকিস্তানি পরিবারের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে।
"আমি এখানে শিশু এবং নারী হত্যা করতে আসিনি।২০০বছর পর আমি কুত্তার বাচ্চা আর বাঘের বাচ্চার পার্থক্য বোঝাতে এসেছি"।
মেজর রিজভির মত বাংলাদেশের সকল সূর্যসন্তান পাকিস্তানের প্রত্যেকটা ঘরে একি রব তোলে।
"আমরা এখানে শিশু এবং নারী হত্যা করতে আসিনি।২০০বছর পর আমরা কুত্তার বাচ্চা আর বাঘের বাচ্চার পার্থক্য বোঝাতে এসেছি"।
পাকিস্তান ছেড়ে বাংলাদেশের যোদ্ধারা দেশের পথে।রাস্তার দু'পাশে দাঁড়িয়ে গেছে সকল পাকিস্তানি নারী এবং শিশুরা।একি সাথে তারা মোনাজাত ধরেছে।
"হে গফুরুর রাহীম যে জাতি প্রতিশোধ আর ঘৃণার ওপরে উঠে ভালোবাসা আর মানবতা দিয়ে অনন্ত নক্ষত্রবীথি জয় করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ সেই বীর জাতিকে আপনি নিরাশ করবেন না"।
২০০বছর আগে গত হওয়া ত্রিশ লক্ষ হৃদয় কি সেই মোনাজাত শুনছে?হয়তো শুনছে।হয়তো শুনছে না।
-কাজী রিফাত
তূর্ণা এক্সপ্রেস।
১৭জুলাই,২০১৬
রাত ১১টা বেজে ১১মিনিট।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:২৭