শিক্ষিত মধ্যবিত্ত্ব, যারা বেশীরভাগ সময়ই জরুরী মুহূর্তে কোন রেডিক্যাল অবস্থান নিতে পারে না হরেক সুবিধাবাদিতার কারণে, তাদের একটা আক্রোশ অবশ্যই আছে অশিক্ষিত মৌলভিদের প্রতি, যারা জরুরী অবস্থায় কথা বলে, প্রতিবাদ করে, ভাঙ্গে, পৌত্তলিক সমাজের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য আইকনগুলো। যারা কোন সুবিধাভোগি নয়, যারা এইসবকে প্রত্যাখ্যান করেছে, উদ্ধত, জঙলি এবং অসভ্য উপায়ে, সভ্য মানুষের ভাষায়।
এখানে একটি ব্যাপার স্মর্তব্য, ফ্যাশন কোম্পানি যখন চে'কে নিয়ে ব্যবসা করে, আর রোমান্টিক একটিভিস্টরা অই পোশাক পরে ঘুমের মধ্যে বিপ্লব সাধন করে, তখন অই দৃশ্য দেখে আমার বোধোদয় ঘটে যে, চে কেন ছবি তোলাটাকে এত অপছন্দ করেছেন সব সময়। একই ব্যাপার, লালনের মূর্তি নিয়ে আমাদের কান্নাকাটি দেখেও। এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতো রীতিমতো হাজ্বীদেরকে আত্মশুদ্ধির জন্য মনের মূর্তি সরানোর পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্তু ঘটনা হলো তিনি এই ব্যাপারটির প্রতি নিজের পৌত্তলিক বিরাগটারে সরায়ে ফেলতে পারেন নাই। যদি পারতেন, তাহলে, এর সংস্লিষ্ট আরো কিছু বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা পেতাম, যেগুলি দরকারি।
মৌলভিদের মূর্তিবিরোধিতার মোকাবেলায় অইটার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ফ্যানাটিসিজম দিয়ে আলাপ সারা আর ফাজলামো করা একই কথা। কারণ এই আলোচনাটির সাথে দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক আলোচনাটি জড়িত। আনকন্ডিশন, নিরাকারকে আকার প্রদান, ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বিজত্বের ধারণা, পৃথিবীতে ধর্মের বিবর্তনের যে ইতিহাস, এইসব ব্যাপারগুলিতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং স্ট্যাণ্ডপয়েন্ট আলোচনায় আনতে হবে।
মৌলভিদের প্রতিবাদের উত্তরে প্রতিক্রিয়াশীল মধ্যবিত্তিয় অবস্থান ও অবস্থান-সঞ্জাত ভাষাকে মোকাবেলা করার ও এই সকল অবস্থান উৎপত্তির মনন কাঠামো বোঝার একটি চমৎকার ও কার্যকর বুদ্ধিবৃত্তিয় অবস্থান তৈরী হয়েছে আজকের উপরোক্ত ঘটনার আলোকে, যা কিনা একই সাথে আমাদের রাষ্ট্রের বর্তমান সংকটের মূল বিন্দুসমূহের একটি গুচ্ছকেও নির্দেশ করে বলে আমার মনে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৯