ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জজ, ব্যারিস্টার, বড় চাকরীজীবী বা বড় ব্যবসায়ী আমরা সবাই হতে চাই, কিন্তু কয়জন আমরা মানুষ হতে চাই?
ছোটবেলায় কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করতো আমি বড় হয়ে কী হতে চাই, আমি নির্দ্বিধায় উত্তর দিয়ে দিতাম ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। ডাক্তার, জজ, ব্যারিস্টার কিংবা অন্য কোনো কিছুর প্রতি আমার কোনো কালেই কোনো আগ্রহ ছিল না, কখনো ভাবতামও না। অবশ্য এর মানে এই নয় যে আমি ওসব পেশাকে অপছন্দ করি, ওসব পেশাকে আমি অনেক পছন্দ করি এবং যথেষ্ট শ্রদ্ধাও করি। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত আগ্রহটা ছোটবেলা থেকেই টেকনিক্যাল বিষয় কেন্দ্রিক হওয়ায় বরাবরই ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছি। তবে বছর কয়েক যাবত আমার ইচ্ছার কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। এখন কেবল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া নয়, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাশাপাশি নিজের একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর ইচ্ছা আছে; দুটো মিলে যাকে বলা যায় উদ্যোক্তা হতে চাওয়া, ইংরেজিতে বলে অন্ট্রপ্রনর (Entrepreneur)।
এখন শহরাঞ্চলে থাকায় কখনো খালি পায়ে মাটিতে হাঁটা হয় না বা হাঁটতে চাইলেও হাটার জন্য সেই জায়গাটা পাওয়া যায় না। অথচ খালি পায়ে মাঝেমাঝে মাটিতে হাঁটা নাকি অনেক ভালো। তাই আমি যখন গ্রামের বাড়িতে যাই তখন সুযোগ পেলে খালি পায়ে থাকি এবং মাঝেমাঝে খালি পায়ে দৌড়াদৌড়ি বা যাকে বলে জগিং করি। তো এবার পহেলা বৈশাখে বাড়ি গিয়েছিলাম। আসার আগেরদিন সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে বসে ছিলাম, তখন হঠাৎ মনে হলো একটু খালি পায়ে দৌড়ে আসি। পাশে বসে ছিল ছোট বোন পূর্ণতা। ওকেও বললাম আমার সাথে দৌড়ানোর জন্য, রাজী হলো। তো দৌড়াতে দৌড়াতে এক পর্যায়ে ওকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, বড় হয়ে কী হতে চাস? ও উত্তর দিল ডাক্তার। তখন আমি ওকে শেখালাম, এরপর থেকে কেউ তোকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে বলবি মানুষ হতে চাস। ডাক্তার হবি জীবিকা নির্বাহের জন্য কেবল, কিন্ত তোর প্রকৃত লক্ষ্য থাকতে হবে একজন মানুষ হওয়া। দুটো হাত, দুটো পা, দুটো চোখ ইত্যাদি সব থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না, মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজন মনুষ্যত্ব। ও অনেক ছোট, ক্লাস ফোরে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়গুলো ওর এত সহজে বোধগম্য হওয়ার কথা না। তাই আমি ওকে কিছু উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। শোন, তোকে কেউ যদি কখনো মেরে আহত করে তাহলে তুই তাকে কখনো প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মারবি না। তুই অপেক্ষায় থাকবি কখন তাকে অন্য কেউ মেরে আহত করে। সেদিন তুই গিয়ে ওর সেবা করবি। জুনায়েদ ইভান ভাইয়ের একটা বাণীও ওকে শোনালাম, কেউ তোকে মেরে রক্তাক্ত করলে তুই অপেক্ষায় থাকবি কবে তার রক্তের প্রয়োজন পড়ে, সেদিন তুই নিজে ওর রক্ত জোগাড় করে দিবি। কখনো কারো সমালোচনা করবি না। আর কেউ কোনো ভালো কিছু করলে অবশ্যই তার প্রশংসা করবি। পরীক্ষায় তর চেয়ে কেউ ভালো রেজাল্ট করলে হিংসাবশত তাকে ছোট করতে তার নামে কখনো আজেবাজে কথা ছড়াবি না, এতে তুই নিজেই ছোট হয়ে যাবি। বরং তার প্রশংসা করবি এবং উৎসাহ দিবি। চেষ্টায় থাকবি তার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করার। ভালো রেজাল্ট করে যখন তারচেয়ে বড় হবি তখন সে এমনিতেই ছোট হয়ে যাবে। এভাবে আরো অনেক বাস্তব উদাহরণ দিয়ে চেষ্টা করেছি আমার ছোট বোনকে যথাসম্ভব মনুষ্যত্বের শিক্ষা দেওয়ার। ছোটবেলা থেকেই এরকম শিক্ষা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। দেখা যাক, তার মাঝে কতটা পরিবর্তন আসে।
গ্রন্থগত বিদ্যা অর্জন করে হয়তো কিছু সার্টিফিকেট ও ডিগ্রি লাভ করা যায়, কিন্তু মানুষ হতে হলে আপনাকে কিন্তু মনুষ্যত্ব অর্জন করতেই হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জজ, ব্যারিস্টার, বড় চাকরীজীবী কিংবা ব্যবসায়ী হওয়ার লক্ষ্যের সাথে সাথে মানুষ হওয়ার লক্ষ্যটাও যোগ করা উচিৎ আমাদের। দেশে ওসব পেশাজীবীর অভাব নেই, কিন্তু মানুষের যে বড্ড অভাব!
লিখায়: রিহানুর ইসলাম প্রতীক
ফেসবুকে লেখক: Rihanoor Protik
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



