somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক

০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উইকিলিকস এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ খুব শীঘ্রই ফেস অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড হতে যাচ্ছে। বিশ্বখ্যাত টাইমস ও অন্যান্য মিডিয়ার জরীপে সে ফলাফল আসন্ন প্রায়। এদ্দিনে আমরা এর কারণ, ব্যাখ্যা ও পেছনের ঘটনা নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ আজ হিরো তাঁর এই নায়কোচিত ভূমিকা যতটা উজ্জ্বল ঠিক ততটাই অন্ধকার মুরুব্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চেহারা। জুনিয়ান মানব সভ্যতার ইতিহাসে নতুন কেউ নন, তার আগেও সাহসী মানুষরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে ইতিহাস উজ্জ্বল করে আছেন। মুসকিল এই, তাদের বেশির ভাগই নির্মমভাবে নিহত, অপহূত অথবা রহস্যজনকভাবে অন্তর্হিত হয়ে ছিলেন।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ধন্যবাদ দিতে হয়, এ অবদি সে পরিনতি বরণ করতে হয়নি। সাংঘাতিক ভুল বা উন্মাদনার শিকার না হলে সাম্রাজ্যবাদ সহসা সেটা করতেও পারবে না, মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নেয়, ভুল থেকে, ভ্রান্তি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করে, জুলিয়ান নিঃসন্দেহে মেধাবী, তাই তিনি সঠিক সময়ে সঠিক থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে জানে বেঁচে গেছেন। ওয়েস্ট মিনিস্টারের পরিবর্তে লিভারপুল বা অন্য থানায় আত্মসমর্পণ করলে কি হতো? বলা দুরূহ, ওয়েস্ট মিনিস্টারের সাথে সভ্যতার সূতিকাগার নামে পরিচিত বিলেতের আত্মসম্মান জড়িয়ে। তা ছাড়া ঐ জায়গাটি মিডিয়ার আগ্রহ ও খবরাখবর তৈরির কেন্দ্র বিন্দুও বটে। মেধাবী জুলিয়ান জানতেন, ঐ থানায় আত্মসমর্পণ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।

জুলিয়ানকে ধন্যবাদ দেয়ার দ্বিতীয় কারণ তিনি নিজে কিছু করেন না। তাঁর উইকিলিকসে মানুষ তথ্য দেয়। মানুষ জানিয়ে দেয় কোথায় কি অন্যায় ঘটতে যাচ্ছে। বলাবাহুল্য, অনুসন্ধান ও তথ্য আদায়ের সে প্রক্রিয়াকে সর্বতো সমর্থন করা যায় না। এক জাতীয় অনুপ্রবেশের মাধ্যমেই গোপন নথিপত্র নিয়ে আসা হয়। যদি নৈতিকতার প্রশ্নই তুলি, কোনটি ভয়ানক? দেশে দেশে অস্ত্র ব্যবসা, জঙ্গিবাদের মদত, তেল, গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে আগ্রাসন, নাকি তা জানিয়ে দেয়া?

লক্ষণীয় আনীত অভিযোগগুলোর কোথাও জুলিয়ানকে উইকিলিকসের জন্য দায়ী করার প্রচেষ্টা নেই। এর দুটো কারণ, প্রথমতঃ বিষয়গুলো নিয়ে নাড়া-চাড়া মানেই নিজেদের বিপদ ত্বরান্বিত করা। তাকে ফাঁসাতে হলে অন্য কোন ঘুর পথ, সেই পুরনো ধান্দা নারী, যৌন কেলেংকারী এগুলোর বিকল্প নেই। সে চোরা গোপ্তা পথটাই বেছে নিয়েছে তথ্য সাম্রাজ্যবাদ। তারা এখন বলছেন, জুলিয়ান সাংবাদিক নন, প্রচলিত অর্থে তাকে সাংবাদিক বলা যাবে কিনা এ নিয়ে তর্ক হতেই পারে। প্রচলিত সাংবাদিকতা কি এখন তার বৃত্ত ভেঙ্গে তিনি এগুতে চাইছে না? কি দ্বৈত ভূমিকা, কী অসভ্য আচরণ। যে দেশ দুনিয়া জুড়ে তথ্য আর গণতন্ত্রের স্বাধীনতা ফেরি করতে প্রাণান্ত, সেই কিনা উইকিলিকসের ব্যাপারে প্রাচীন পন্থি। চাইছে, প্রাগৈতিহাসিক সংজ্ঞার মোড়কে ফেলে শাস্তি নিশ্চিত করতে। কিন্তু তা কি সম্ভব? জুলিয়ান তো নতুন যুগের দূত। তিনি এসেছেন নব হাওয়ার তোড়ে পুরনো কে ভেঙ্গে অজানা সত্য তুলে ধরতে। তিনি এখন একা কোন মানুষ নন। তার সাথে মিলে মিসে একাকার হয়ে গেছে সভ্যতা ও যুদ্ধবিরোধী প্রগতির জনস্রোত। খোদ আমেরিকান সিভিল সোসাইটিও বলছে তিনি অর্থাৎ জুলিয়ান এসেছেন তার উইকিলিকস এসেছে আমাদের গণতন্ত্রকে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করতে।

ভয়টা কোথায় সেটা আমাদের কারো অজানা নয়। শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রতাপশালী শাসক জানে আমেরিকার ভিত্তি মূলত গণতন্ত্র, নির্বাচন থেকে ক্ষমতারোহণে গণতন্ত্রই চালিকা শক্তি, ফলে আগামী দিনগুলোতে জবাবদিহিতা, মুখোমুখি হবার দুঃস্বপ্নকে ভয় পেয়ে জুলিয়ানকে এক হাত নিতে চাইছেন তারা। তা ছাড়া মুখ ও মুখোশের দ্বন্দ্বে মুখোশহীন মানুষগুলোর কদর্য চেহারা নিজেদেরকেই আতঙ্কিত করে তুলেছে হয়তো বা।

জুলিয়ান অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। এদেশের নাগরিক হিসেবে তার অধিকার, মর্যাদা, পর দেশে লাঞ্ছিত হবার সময়কালে রাষ্ট্রের ভূমিকা আমার জন্য কৌতূহলের, এমনকি চমকে ওঠার ব্যাপারও বটে। নাগরিকত্বে আমিও অস্ট্রেলিয়ান, এ যাবৎ বিভিন্ন দেশে ছোট বড় অপরাধ বা অন্য কারণে অপমানিত অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকায় বরাবর গৌরব বোধ করে এসেছি। কখনো কখনো সরকারি আচরণ এক দেশে বা নিজ নাগরিকের প্রতি সমর্থনে অন্ধ হবার পরও মনে হয়েছে একেই বলে সভ্য দেশ, একেই বলে গণতান্ত্রিক মানবিকতা, ইন্দোনেশিয়ায় মাদক পাচারে দোষী সাব্যস্ত শেকল করবি থেকে অনেক দৃষ্টান্তেই তা প্রমাণ করা সম্ভব। অথচ জুলিয়ানের ক্ষেত্রে সে জাতীয় অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে না। উল্টো কর্তৃপক্ষ মনে করছে, তার বিরুদ্ধে তথ্য হরণের জন্য মামলা হওয়া উচিৎ। তাদের মতে যথাযথ অনুমোদন ব্যতীত সরকারি নথিপত্র সংগ্রহ ও বিতরণ মামলাযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এ দেশের বুদ্ধিধারী লেখক, শিল্পী, তথ্য কমর্ী, সাংবাদিকরা তা মনে করেন না। বিশেষজ্ঞ আইনজীবী রবার্টসন সিডনি থেকে লন্ডন উড়ে গেছেন। উদ্দেশ্য আইনী সহয়তা দান। মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াস চমস্কি থেকে এ দেশের মুক্তবুদ্ধির মানুষের স্বাক্ষর করা প্রতিবাদ পত্র গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের হাতে। জুলিয়ানের জন্মভূমি ব্রিসবেন শহরে মিছিল বেরিয়েছে। সে মিছিলে উচ্চকিত শেস্নাগান ছিল 'আমরাই জুলিয়ান এসেঞ্জ। বিলেতে বসবাসরত অসি বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক জন পিলজার জানিয়েছেন, উইকিলিকস ও জুলিয়ানের পক্ষে দাঁড়ানোই এখন তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দের জন্য ভয়ংকর হয়ে ওঠা জুলিয়ানের পরিণতি এখন সময়ের হাতে। কিন্তু উইকিলিকস কি আমার জন্য জন্মেছে? আমার জন্য জন্মেছিলেন মার্টিন লুথার কিং? থেমেছেন কি ফিদেল ক্যাস্ট্রো?

দুনিয়া কাঁপানো এই উইকিলিকস আর তার স্রষ্টা জুলিয়ান এসেঞ্জকে তুলনা করা হচ্ছে আর্জেন্টাইন বিপস্নবী চে গুয়েভারার সাথে, তবে কি সে পরিণতিই বরণ করতে হবে তাকে? দুনিয়াজোড়া বস্নগ ও অন্যান্য লেখালেখিগুলোয় চে' বিরোধীরাও একমত, ইনিই নতুন যুগের চে'! হোক বা না হোক,


অজয় দাশ গুপ্ত (The Daily Ittefaq)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×