বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে বুয়েটছাত্রের মৃত্যু
অনেকদিন পর লিখতে বসছি ,জানি না মনের কথা গুলান বলতে পারব কি না।কিন্তু তারপরও লিখছি। যাকে নিয়ে লিখছি তাকে নিয়ে কোনদিন লিখব জানতাম না। কিন্তু তারপরও লিখছি। যখন আমি লিখছি তখন সৌরভ ভাই ,আমাদের কে ছেড়ে ঘুম না ভাংগার দেশে চলে গেছেন। ভাইয়া অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে ,অনেক আশা বুকে নিয়ে খুব সহসাই চলে গেলেন ।
অনেক ই এ চলে যাওয়াকে অকাল মৃত্যু বলবে ,কিন্তু আপনার যখন যাওয়ার সময় তখন ই আপনি চলে গেছেন।হয়ত সে যাওয়াটা একটু তাড়াতাড়ি ই হয়ে গেল । আল্লাহ বলেছেনঃ , “তারা বলে আমাদের হাতে যদি কিছু করার থাকতো, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। তুমি বল, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও তারা অবশ্যই বেরিয়ে আসত নিজেদের অবস্থান থেকে যাদের মৃত্যু লিখে দেয়া হয়েছে। তোমাদের বুকে যা রয়েছে তার পরীক্ষা করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা, আর তোমাদের অন্তরে যা কিছু রয়েছে তা পরিষ্কার করা ছিল তাঁর কাম্য। আল্লাহ মনের গোপন বিষয় জানেন। ”
(Aali Imraan: 154)
আর এভাবেই পৃথিবীর বুক থেকে আমাদের চির বিদায় নিতে হবে । জীবনের এই যাত্রা পথে আমরা কেউই চিরদিন থাকতে আসি নি । পৃথিবী থেকে যাওয়ার টিকিট নিয়েই আমরা এসেছি , কিন্তু এই অমোঘ সত্য আমরা যতক্ষন বেঁচে থাকি ভুলে থাকি ।আমরা ভুলে যাই সাময়িক মোহের কারনে এক মহা সত্যকে । আমরা কি নিয়ে দুনিয়াতে আসছি আর কি নিয়ে যাচ্ছি সে হিসাব আমাদের করার সময় হয়ে ওঠে না পরীক্ষা ,সেশনাল আর বার্সা-রিয়ালের খবর রাখতে রাখতে। কিন্তু কবর আমাদের ভোলে নাই ,সে সময় মত আমাদের কাছে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে ।
হয়ত যে খাটিয়ায় আজ আপনি শুয়ে আছেন ,কাল আমিও সেখানে শুয়ে থাকবে ।সবাই আমার জণ্য কান্নাকাটি করবে ,বন্ধুরা হতবিহবল হয়ে যাবে । এই শোক ভুলবার নয় । কোন বাবা-মা সন্তানের এই অকাল প্রয়ান সহ্য করতে পারে না ।আপনার শোকাহত পরিবারকে শান্তনা দেয়ার কোন ভাষা নেই ।অনেক স্বপ্ন নিয়ে আপনার মা বসে আছে ,ছেলে বড় ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ঘরে আসবে। বাবা অপেক্ষায় আছে ছেলে অনেক বড় হবে । কিন্তু হায় ছেলে ত আজ সাদা কাপড় পরে ঘরে ফিরে এসেছে । মা কিভাবে ছেলে কে শেষ বিদায়্ জানাবে , বাবা কিভাবে ছেলে র লাশ কাধে নেবে ?? নিয়তি কেন এমন হয় ????
আমরা সবাই অনেক রঙিন স্বপ্ন দেখি । কিন্তু রাত পোহানোর পর আমাদের সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় । এটাই মহাসত্য ।আমাদের জীবনের সবকিছুই আপেক্ষিক । আজ আমরা স্বপ্নের পেছনে ঘুরে সে সত্য থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি । কিন্তু কাফনের কাপড় গায়ে দিলে নিজের আমল ছাড়া কোন কিছুর দাম নেই । টাকা-পয়সা ,বন্ধু-বান্ধবী কেঊ আমাদের সাথে যাবে না । কবরে আমাদের একা যেতে হবে । তবু আমরা ভুলে থাকি ।আল্লাহ বলছেন; “আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। ” (An-Nisaa: 18)
গুনাহ করতে করতে আমাদের আমল নামা কালো হয়ে গেছে । তবু আমরা আল্লাহ কে ভুলে আছি। আর এই ভুলে থাকার মধ্যেই আমাদের মরন আসলে জাহান্নাম ছাড়া আমাদের কোন গতি নাই । দুনিয়া নামক পরীক্ষার হলে বসে আমরা হাসি-ঠাট্টা করতেছি। কিন্তু জীবনের সব পরীক্ষায় A+ পেয়ে এই পরীক্ষায় ফেল করলে সব কিছুই শূণ্য । আমাদের দিন কাটে হারামে , রাত কাটে হারামে। আর এভাবে করে আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে চলছি । এই দুনিয়ায় কেউ কারো না । কারো পাপের বোঝা কেউ নিবে না । আল্লাহ বলছেনঃ “হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারণা না করে। এবং সেই প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে। (Faatir: 5)”
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে ,মৃত্যু আসন্ন । পালাবার কোন উপায় নেই ।সব কাজের হিসাব কড়ায় গন্ডায় দেয়া লাগবে । সেদিন আমাদের কাছ থেকে সব আনন্দ বিনোদন চলে যাবে, থাকবে কাফনের কাপড় আর সাড়ে তিন হাত মাটির বিছানা । আল্লাহ বলছেন; “বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে।“ (Al-Jumu'a: 8)
সৌরভ ভাইয়া ,
আল্লাহ আপনার এই মৃত্যুকে শাহাদাতের মৃত্যু হিসেবে কবুল করে নিক। আল্লাহ আপনার জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দিন আপনার কবর জান্নাতে বাগিচা হয়ে যাক , আপনার আমল নামা সহজ হয়ে যাক ,এই দোয়া রইল ।বিনা হিসেবে আল্লাহ আপনাকে বেহেশত দান করুন । আল্লাহ যেন আপনাকে জান্নাতুল ফেরদোউসে স্থান দান করুন ।আল্লাহ আপনার বাবা-মাকে ধৈর্য ধরার শক্তি দান করুক ।আপনার এই মৃত্যুর উছিলায় আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:০৮