somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭১ হারিয়ে যাওয়া শিশু হালিম(বর্তমানে ৪২বছর) মা-বাবা কে খুজছে?

২৬ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একাত্তরের ২৫ মার্চ সেই ভয়াল রাতে মাত্র তিন বছর বয়সে আবদুল হালিম হারিয়ে ফেলে বাবা-মাকে। তারপর লক্ষ্মীপুরের দরিদ্র এক পালক পিতার আশ্রয়ে কেটে যাচ্ছে একে এক পরবর্তী ৩৯টি বছর। পালক পিতার অভাবের সংসারে হয়ে উঠেনি লেখাপড়া। কখনও হোটেল বয়, কখনও রিকশা চালক আবার কখনও কাজ না পেলে বসে থাকতে হয় বেকার। বিয়ে করেছেন পালক পিতারই মেয়ে মরিয়মকে। দুই মেয়ে এক ছেলে নিয়ে সংসার। বড় মেয়ে পারভিন পড়ত ষষ্ঠ শ্রেণীতে। ওই শ্রেণীর চারূপাঠে 'রক্তেলেখা মুক্তিযুদ্ধ' গল্পের সঙ্গে বাবার জীবনের মিল খুঁজে পায় পারভিন। বাবাকে পড়ে শোনায় গল্পটি। গল্প শুনে চমকে ওঠেন হালিম। এটাই তো তার জীবনের গল্প। তৃঞ্চার্ত মন বাবা-মাকে দেখার জন্য হয়ে পড়ে ব্যাকুল। জন্মদাতা বাবা-মার খোঁজে তাই পাগলের মতো ছুটে যান ঢাকায়। গল্পের লেখিকার ঠিকানা সংগ্রহ করে তার কাছে গিয়ে জানতে চান বাবা-মার খোঁজ। অসম্পূর্ণ ঠিকানার কারণে দিতে পারেননি কোনও সন্ধান। পরে হালিম বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে গল্পের হারিয়ে যাওয়া শিশুটি যে তিনি তা তুলে ধরেন। এরপর তাকে নিয়ে লেখালেখি অব্যাহত থাকলেও হালিম পায়নি তার হারিয়ে যাওয়া পিতা-মাতাকে। অন্যদিকে মারাত্নক অর্থকষ্টে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতেই থেমে গেছে বড় মেয়ের লেখাপড়া। ছোট মেয়ে এবার ষষ্ঠ শ্রেণীতে। পালক পিতার সূত্রে বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের জেএমহাট সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা হালিম।
যেভাবে হারিয়ে যায় হালিমঃ হালিমের পালক পিতা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি, রহমান আর আবদুল খালেক সে সময় ফুলবাড়িয়া স্টেশনে কাজ করতাম। রাজমিস্ত্রি ও যুগালি, কখনও কুলি। রহমান আর খালেকের বাড়ি বরিশালে। তখন আমার বয়স ৩৩ বছর। স্ত্রী সাফিয়া খাতুন আর মা থাকতেন পশ্চিম লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়িতে। রাতে থাকতাম ফকিরাপুলের ঝিলপাড়ার একটি টংঘরে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১২টা থেকে একটার দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। চারদিকে কান্নাকাটি, আহাজারি। বিপদ টের পেয়ে আমি পানিতে ঝাঁপ দেই। ঝিলের কিনারা থেকে ১০-১২ হাত দূরে বুক সমান পানিতে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকি। ফজরের আযানের পর আমি ওঠে আসি। ঘরে গিয়ে দেখি সঙ্গী দু’জনের মধ্যে একজন মরে পড়ে আছে ঝিলের কিনারে । ওই দৃশ্য দেখে মন ভেঙে যায়। ফকিরাপুলের দিকে হাঁটতে থাকি। অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখি। পানির টাঙ্কির কাছে গিয়ে দেখি দুই- তিন বছরের একটি ছেলে কাঁদছে। কেউ তাকে নেয় না, কিছু জিজ্ঞাসাও করে না। ছেলেটির গায়ে (স্যান্টু) গেঞ্জি ছিল। নাম জিজ্ঞাসা করি। বাসা কোথায় তা জিজ্ঞাসা করি, কিছু বলতে পারে না। কেবল আম্মু আম্মু বলে কাঁদছিল। তখন আমি তাকে তুলে নিই। মোহাম্মদ আলী বলেন, ওকে লেখাপড়া শেখানোর মতো আমার তেমন সামর্থø ছিল না। ওর মা-বাবাকে খুঁজে তাদের হাতে তুলে দেবো তাও সম্ভব হয়নি। ঘটনার কথা আমাদের গ্রামের সবাই জানে। ওর বাবা-মার দেয়া নাম কী ছিল আমরা জানি না। আবদুল হালিম নামটি আমরাই রাখি। পরে আমার বড় মেয়ে মরিয়মের সঙ্গে ওর বিয়ে দেই। এদিকে আবদুল হালিম জানান, মোহাম্মদ আলীর সংসারে ছোটবেলা থেকেই তিনি বুঝতে পারেন তার জীবন অন্য সবার মতো নয়। পাড়ায় খেলতে গেলে সমবয়সী অনেকেই বলত- ওর বাড়ি তো ঢাকায়, কুড়াইয়া আনছে। বয়স যখন ৮/৯ বছর তখন মোহাম্মদ আলী (পালক পিতা) তাকে কীভাবে পেল ঘটনাটি খুলে বলেন। হালিম বলেন, তারপর মাঝে মাঝেই ঢাকায় চলে যেতাম। ঢাকায় রেস্তোরায় কাজ করতাম। ফাঁকে ফকিরাপুল এলাকায় গিয়ে সেখানকার বাসাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আবদুল হালিম বলেন, ২০০৬ সালের ১৬ নভেম্বর। আমার বড় মেয়ে তখন জব্বর মাস্টার হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। চারূপাঠের গল্পটি পড়ে বলে- বাবা এ তো তোমার জীবনের গল্প! ওই কাহিনী পড়ার ক'দিন পর আবারও ঢাকায় যাই। ফকিরাপুল এলাকায় ঘোরাঘুরি করি। কীভাবে আমার মা-বাবাকে খুঁজবো ভেবে পাই না। এরপর হাইস্কুলের আখতার মাস্টার আমাকে চারূপাঠের ১৫ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে লেখিকা সাহিদা বেগমের আড়াইহাজার থানার ঠিকানাটি লিখে দেন। ওই লেখিকার কাছে গিয়েও তিনি তার মা-বাবার কোনও সন্ধান পাননি।
পিতা-মাতাকে হারিয়ে যে শিশুটি আজ অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। জীবনের এতটি বছর পার করে এলেও পাননি পিতা-মাতার নূনতম পরিচয়। জীবনযুদ্ধের এ পর্যায়ে আসতে যাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে নানামুখি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। সেই আবদুল হালিমকে হতে হয়েছে বহু বিড়ম্বনার শিকার।

এই লেখাটির তথ্য গুলো পাটিয়েছেন-জহির উদ্দিন,লক্ষ্মীপুর, থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×