somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দুরুদ ও সালাম পেশ সন্ক্রান্ত

০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


“নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর নবীর প্রতি সালাত-দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।” (সূরা আহযাব ৫৬ আয়াত)


‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার দরুন তার উপর দশবার দুরুদ পাঠ করবেন।” (মুসলিম) [1]

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ পড়বে।” (তিরমিযী, হাসান) [2]

আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” লোকেরা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন।” (বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে।) (আবু দাউদ, বিশুদ্ধ সানাদ) [3]

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অভিশাপ দিলেন যে, “সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরূদ পড়ল না।” (অর্থাৎ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম’ বলল না।) (তিরমিযী হাসান)[4]

উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে করে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশ-কৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সূত্রে) [5]

উক্ত রাবী হতে এটি বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কোনো ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।” (আবূ দাউদ- বিশুদ্ধ সানাদ) [6]

(এর ধরন আল্লাহই জানেন। অবশ্য এর অর্থ এ নয় যে, তাঁর জবাব কেউ শুনতে পায়।)

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হল), অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ) [7]

ফাযালা ইবনে উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লোককে নামাযে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদও পড়েনি। এ দেখে রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি তাড়াহুড়ো করল।” অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন, “যখন কেউ দো‘আ করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা যোগে ও আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করে দো‘আ আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী) [8]

আবূ মুহাম্মদ কা‘ব ইবনে ‘উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের নিকট এলে। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় তা জেনেছি, কিন্তু আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পাঠাব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলোঃ-

‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’

যার অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ তথা মুহাম্মদের পরিবারবর্গের উপর দরুদ পাঠ করো; যেমন দরূদ পেশ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও অতি সম্মানার্হ। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযিল কর; যেমন বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।” (বুখারী ও মুসলিম) [9]

আবূ মাসঊদ বদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সায়াদ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলে। বাশীর ইবনে সা‘আদ তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহান আল্লাহ আমাদেরকে আপনার প্রতি দরূদ পড়তে আদেশ করেছেন, কিন্তু কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়ব?’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরুত্তর থাকলেন। পরিশেষে আমরা আশা করলাম, যদি (বাশীর) তাঁকে প্রশ্ন না করতেন (তো ভাল হত)। ক্ষণেক পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা বলো,

‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ তথা মুহাম্মদের পরিবারবর্গের উপর সালাত পেশ কর; যেমন সালাত পেশ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। আর তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযিল কর; যেমন বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।

আর সালাম কেমন, তা তো তোমরা জেনেছ।” (মুসলিম)[10]

আবূ হুমাইদ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কিভাবে আপনার প্রতি দরূদ পেশ করব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলো, “আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।”

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর সালাত পেশ কর; যেমন তুমি ইব্রাহীমের বংশধরের উপর সালাত পেশ করেছ। আর তুমি মুহাম্মদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর যেমন তুমি ইবরাহীমের বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। (বুখারী ও মুসলিম)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×