somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা গল্প লিখেছি। পড়ে মন্তব্য করবেন :)

১৬ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পের নামঃ উৎসর্গ


গতকাল রাতে ও বাসায় ফিরার আগেই চট করে দোকান থেকে এক দিস্তা হোয়াইট প্রিন্ট ও একটি জেল পেন কিনে নিয়ে এলাম। বাসায় যদিও কাগজ কলমের অভাব নেই তবুও ওর জিনিসে আমি হাত দিতে চাই না। আমার গুলো আমার, ওর গুলো ওর। টেবিল ভর্তি ওর কাগজ কলম - অগোছালো, সেলফ ভর্তি বই - আরো অগোছালো। থাকুক অগোছালো, ওগুলো আমার দেখার বিষয় না। কিসব ছাইপাশ লেখালেখি করে বসে বসে, তাই দিয়েই ইদানিং ওর বই বের হয়। বিভিন্ন ম্যাগাজিন/পত্রিকা আসে ওকে অনুরোধ করতে। মানুষ যে এতরকমের পাগল হতে পারে, তা ওর ফ্যানদের না দেখলে বোঝা যায় না। একেকবার ওর একেকটা বই বের হয় আর একগাদা চিঠি এসে ঘর ভরে যায়। মাঝে মাঝে দু একটা চিঠি চুপিচুপি খুলে পড়েছি। ওগুলো আর ওকে দেখাইনি। এত চিঠি, কে কয়টার খবর রাখে। কিছু চিঠিতে অনেকে নিজেই কবিতা লিখে পাঠায়। কেউ কেউ গল্প লিখে জানতে চায় কেমন হয়েছে। হায়রে মানুষ! কেউ কেউ আবার প্রেম নিবেদনও করে। ওকে করে প্রেম নিবেদন! ওর প্রেমে কেউ পড়েও! ভাবতেই ভালো লাগছে যে আমার মত বোকাও পৃথিবীতে আরো কিছু আছে।

আমিও ওর প্রেমে পড়েছিলাম! কিন্তু তখন জানতাম না, ও একজন লেখক। তাহলে ভুলেও ওর দিকে ফিরে তাকাতাম না। কিন্তু তখন বয়স অল্প ছিল। ও ছিল আমার হোম টিউটর। কঠিনভাবে ওর প্রেমে পড়েছি। "তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না" টাইপ প্রেম। যেদিন ওকে বলেছি "আমি তোমাকে ভালবাসি", সেদিন কি রকম বোকার মত আমার দিকে তাকিয়ে ছিল ফ্যাল ফ্যাল করে। যেন আমি হিব্রু ভাষায় ওকে অকথ্য কিছু বলেছি। ওর এই ফ্যালফ্যালানি বেশিক্ষণ সহ্য করতে না পেরে রুমে ঢুকে খিল দিলাম। ওটাই ছিল আমার ভুল। বাড়ির সবাই যখন হাজার ধাক্কিয়েও দরজা খোলাতে পারছিল না, তখন ও এসে বলল, "দরজা খুলো"। আমিও বোকার মত দরজা খুলে দিলাম। আধা ঘন্টার মধ্যে আব্বা কাজী এনে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে। এটা আব্বা কোন কাজ করল? অল্প বয়সে ছেলেমেয়েরা ভুল করবেই; সেটাকে প্রশ্রয় দিতে আছে?

তাও চলছিল ভালোই। ওকে ভালোবাসতে বাসতে আমিই পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। ওর বাসায় এসে বাসা ভর্তি বই দেখে একটুও অবাক হই নি। জানতাম ও পড়ুয়া ছেলে। কিন্তু যখন জানলাম বেশির ভাগ বই-ই ওর লেখা, তখন অবাক হওয়ার পাশাপাশি খুশিও হয়েছিলাম। একজন গুণীর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে; ভালোবেসে ভুল করিনি তাহলে। দুদিন পরেই টের পেলাম "কী মস্ত ভুল করেছি"! আমার বই পড়ার তেমন কোনো অভ্যাস নেই। তবুও ও একদিন বাসায় ছিল না, ওর লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়ার জন্য বই দেখছিলাম। একটা ছোট-খাটো সুন্দর মলাটের বই হাতে নিয়ে খুললাম। এই প্রথম ওর কোন বই খুলেছি আমি। প্রথম পাতায় উত্সর্গটা দেখে "মাথা নষ্ট" - উত্সর্গ আমার প্রিয় তমাকে। "তমা"! সে কে? কোনোদিন শুনিনি তো! রাগে দুঃখে তখনই বই বন্ধ করে লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে আসলাম। নাহ্, ওকে কিচ্ছুটি বলব না। ভুল তো আমিই করেছি। ও তো আমাকে ভালোবাসি বলেনি। আমিই মনে হয় তমার কাছ থেকে ওকে আলাদা করে নিয়েছি। সেদিনই আমি বুঝেছি ও কেন উদাস থাকে। ও কেন আমাকে ভালোবাসি বলেনি, সেদিন কেন ও শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।

যা হোক, আমি কেন কাগজ কলম আনলাম তা তো বলা হয়নি। আমিও লিখব। ওর মত নয়। ওর চেয়ে ভাল লিখব। উত্সর্গ করব শাওন, সুদীপ, নির্ঝর, কাজল, সজল, মানিক-রতন সবাইকে। ওদেরকে আমি চিনি না, তবুও ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য ছেলেদেরকে উত্সর্গ করে আমি বই লিখব।

দু ঘন্টা হলো কাগজ কলম নিয়ে বসে আছি। এর মাঝে কিছুই লিখতে পারিনি। আম্মা দুবার ফোন করেছিল। আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে অন্যমনস্ক হয়ে কাগজে কিসব ছাইপাশ আঁকিবুকি করেছি। কাগজ নষ্ট করেছি অনেক। এবার লিখতে হবে। বিছানার ওপর একটা বই পড়ে আছে। ওর বই। গতরাতে আমাকে গিফট করেছে। উপলক্ষ আমার জন্মদিন। বইটা খুলেও দেখিনি। দেখতেই মন চাচ্ছে না। কিন্তু আমি যে কিছুই লিখতে পারছি না। আচ্ছা একটা লেখা কিভাবে শুরু করতে হয়? কিভাবে সাজাতে হয়? একটু দেখি তো। বইটা হাতে তুলে নিলাম। খুলতেই নজরে এল-উত্সর্গ আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে। উহ্ ঢং। হঠাত্ ই মাথাটা ক্যাচ করে উঠল। কি দেখেছিলাম সেদিন আমি? দৌড়ে লাইব্রেরীতে গেলাম। চোখ বুলাচ্ছি বইগুলোর উপর। নাহ্ পাচ্ছি না- গেল কোথায়? সময়মত কিচ্ছু পাওয়া যায় না। চট করে নজরে এল একদম কোনায় রাখা বইটা। দ্রুত হাতে তুলে নিলাম। খুললাম-আরে প্রথম পৃষ্ঠাটা কই-উত্সর্গ কোথায়? দ্রুততায় সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ পেয়েছি। কি লেখা? উত্সর্গ আমার প্রিয়তমাকে। কিন্তু সেদিন যে দেখলাম "প্রিয় তমাকে"-মাঝখানে স্পেসটা গেল কোথায়? দ্রুত ভিতরটা খুললাম। ওমা, এ যে আমাকে নিয়েই লেখা বই!

বেল বাজছে। টুং টাং....টুং টাং। ও অফিস থেকে চলে এসেছে। দৌড়ে ঘরে এলাম।কাগজ কলম লুকাতে হবে। আরে লুকাবো কি? এগুলো ময়লার ঝুড়িতেই ফেলে দেব। ইচ্ছে করছে দরজা খুলে ওর গলা জড়িয়ে ধরে আরো একবার বলি "আমি তোমাকে ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি"।
২৫টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×