১) স্টেশন এ বসে আছি। একটা দোকানে বসে আছি। কথায় কথায় সময় পার করছি। এমন সময় দোকানি মামার ছোট ভাতিজাকে নিয়ে তার ভাই হাজির। যা হওয়ার সেই ফুটফুটে বাবুটিও অন্য সব শিশুর মতোই আচরণে লিপ্ত। দোকানে প্রবেশ করতেই তার আক্রমণ শুরু। চকলেট চানাচুর চুইংগাম এসবে। তবে একটা বিষয় তার সবার চাইতে আলাদা। তার পিতা বললো এই দেখেন হাতে যে সিরাপ এই নিয়া সে কি করে। নতুন নিয়ে এসেছে। বোতল টি খুলল আর সেই বোতল হতে এক চামচ সিরাপ পিচ্চির মুখে দিলো। খাও বাবা খেলে অসুখ ভালো হয়ে যাবে। সে সিরাপ খেয়েও নিলো একদম ভদ্র শিশুর মতো , তবে যা আমি দেখার জন্য চিন্তাও করিনাই সেটা হল সে আরো খাবে আর সিরাপ আরো খাওয়ার জন্য কান্না শুরু করলো। আমরা জানি শিশু কোন সিরাপ খেতে চায়না, আর সেটা যদি স্বাদ ভালো না হয়। তাহলে তো কোনদিন মুখে দিবে না। আমরাও তাই করেছি যখন ছোট ছিলাম। ২
২)মানুষ অনেক রকমের জীবন নির্বাহ করে। অনেকে জন্মের পর থেকেই অনেক কষ্ট দেখে আর জীবনে কষ্ট বরদাস্ত করা শিখে যায়।
তারা সকালে এক কাপ চা, আর একটা পেয়ারা, ফল, বা রুটি খেয়ে রিকশা চালাতে নেমে যায় রাস্তায়। তাদের কাছে কোন পছন্দ করার একাধিক অপশন থাকে না। তারা যা পায় সেটাই খায়। লোকে তাও তার মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখে। ওই পিচ্চির মতোই। শান্ত আর সুখের হাসি। হয়তো রোগ ভালো হয়ে যাবে এই আশা পেয়ে শিশুটির মতো তারা দুঃখকে দুঃখ ভাবে না আশা রাখে একদিন এই খারাপ দিন চলে যাবে।
৩)আমি এক ডাক্তার কে চিনতাম।তিনি প্রফেসর চিলেন। অবসরপ্রাপ্ত। তার বন্ধু ছিলো একজন জ্ঞানী শিক্ষক। সেও অবসর প্রাপ্ত। ডাক্তার অবসর নিলেও কিছু কিছু রোগী দেখে। আর আমার স্যার তিনিও আমাদের কে পড়ান। তার আর কোন ছাত্র নাই। এই ৪জন। যাই হোক স্যারের কাজ ছিল সারাদিন পড়া। নানান বই তিনি পড়তেন। আর তার ডাক্তার বন্ধুর বাড়ি গিয়ে আড্ডা দিতেন।স্যার এমন জ্ঞান পিপাসু লোক যে তিনি কুরান, বাইবেল সব পড়েন।যদিও তিনি হিন্দু তার বন্ধুর কাহিণী বাঝে মাঝে বলতেন।যে তার বাড়িতে প্রতিদিন ৮,১০ রকম খাবার রান্না করা হয়। কম হলেও ২০জনের রান্না হয়। প্রতিবার নতুন নতুন রান্না। কোন বেলা আগের বেলার পুরাতন খাবার টেবিলে আনা নিষেধ ।অথচ ডাক্তার আর তার স্ত্রী ছিলো দুজনই ডায়াবেটিকস ব্লাড প্রেসার এর রোগী। তারা কিছু খায়না। তার পরেও ৮,১০ রকমের খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখতে হয়। সেটা আবার নতুন। কাজের লোকের অভাব নাই। ওই খাবার সব কাজের লোকেরাই খায়। এই হল জীবন তাদের।
ডাক্তার খুব ভালো লোক ছিলো। আবার খুব টাকা নষ্ট করা লোক। মানে তার অনেক অভ্যাস ছিলো আরকি।
৪)কথা ওইটা নয়। কথা হল কেউ অনেক টাকার মালিক। তবে তার খাবার খাওয়ার শক্তি নাই। সে টেবিল ভর্ত খাবার দেখেই মনের শান্তি নেয়। তার নিজের খাবার খাওয়ার অধিকার নাই। শুধু দেখো।
৫)কারো ক্ষুধা আছে, খাবার খাওয়ার জন্য ইচ্ছা শক্তি সব ই আছে। শুধু খাদ্য খাওয়ার টাকা নাই এই হল উপর আর নীচের পার্থক্য।
৬)আমাদের সমাজে।কেউ কেউ খাবার খাওয়ার সময় মানুষ খুঁজে মরে। কারন তার পরিবারের মানুষ তো আছে, ভালোবাসা নাই। তাই পিতা মাতা এক বাড়িতে, স্বামী আলাদা স্ত্রী আলাদা । সন্তান থাকে হোস্টেলে। তাই তাদের খাদ্য টাকা পয়সা আছে। সুখ নাই। সুখের খুব অভাব। তারা এক বাড়িতে থাকতে মনে হয় ভয় পায়।তাদের সবার আলাদা আলাদা আয়ের উৎস থাকে। তাই কেউ কারো কথা শুনেনা।
কেউ কাউকে মূল্য দেয়না নিজের পায়ে দম থাকলে কে কার কথা শুনে?
৭)আবার কিছু বাড়িতে মানুষ এতো বেশি যে। তাদের খাদ্যাভাব দেখা দেয়। পরিবারে বাবা মা, স্বামী স্ত্রী , সন্তান (কম হলেও ৪বা ৫জন) সবাই মিলে এক বাড়িতে থাকে। তবু তাদের মাঝে সুখের অভাব নাই। তারা অর্থের অভাবে ভোগে। তবে সুখের অভাবে ভোগে না। একজনের আয়ের উপর পরিবার চলে।উপার্জন করে একজন পরিবার তার উপার্জনে চলে। সে পরিবারের কর্তা হয়। আর সবাই তাকে মুরুব্বী মানে। সে হয় দয়ালু আর সবার আপনজন।
৮)কেউ খাবার নষ্ট করে। কেউ খাবার খেতে পারেনা। শুনেছি অনেক দেশ খাদ্য সংকট তৈরি করে খাদ্য দ্রব্য এর মূল্য বৃৃদ্ধি করার জন্য খাদ্য পর্যাপ্ত রপ্তানি করেনা। সে খাদ্য সমুদ্রে নষ্ট করে দেয়। এই হল বাজার তৈরির হাতিয়ার ।খাদ্য অভাব, উৎপাদন কম আমদানি কম এসব বলে খাদ্য দ্রব্য দাম বৃৃদ্ধি করে দেয় কিছু ব্যবসায়ী
৯)আমাদের সবার জীবনে সুখ এখটা অদৃশ্য পাখির মতো। আপনি যদি মনে করেন আপনি সুখে আছেন " তাহলে সম্পদ কম হলেও সুখ আছে । আপনি যদি মনে করেন আপনার সুখ নাই ; তাহলে কোটি টাকাও আপনার মনে সুখ নামক পাখিকে প্রবেশ করাতে পারবেনা বাকিটা টাকা পয়সাতো জীবনে আসবে যাবে। বেশি আসবে কম আসবে। এইভাবে তার চক্রাকার প্রবাহ চালাবেই। তবে আপনি তখনি সুখে থাকবেন যখন আপনার সকল পরিবারের ; মানুষ সুখে থাকবে।আপনি মন থেকে সুখে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৩