somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাল লাগা থেকে স্বপ্নের অপমৃত্যুতে একজন অরুণ চৌধুরী ...

১৯ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগের কথা। সে সময় ৩ মাসের ব্যবধানে দুটি কিশোর ম্যাগাজিনের প্রকাশ শুরু হয়। বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন তারকালোকের পাশাপাশি কিশোর প্রকাশনা হিসেবে "কিশোর তারকালোক" বের করার ৩ মাসের ব্যবধানে সেবা প্রকাশনী থেকে বের হয় "কিশোর পত্রিকা"। তবে দুটি পত্রিকাই সে সময় শুধু কিশোরদেরকেই নয়, বরং সব শ্রেণীর পাঠকদেরই নজর কেড়েছিল।

মূলত "কিশোর তারকালোক" কে বিনোদনমূলক ম্যাগাজিনের কিশোর সংস্করণ বললেও অতুক্তি হবে না। অন্যদিকে "কিশোর পত্রিকা" ক্ষুদে পাঠকদের অভিজ্ঞতা লেখা আহবানের মাধ্যমে বেশ কিছু লেখকও তৈরি করেছিল। ফলে দুটি পত্রিকা দুটি ভিন্ন ছাঁচে বা আদলে গড়ে ওঠে। "কিশোর তারকালোক" বর্তমানে প্রকাশিত হলেও "কিশোর পত্রিকা"-র প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় বেশ আগেই।

দুটি পত্রিকার মধ্যে সুস্পষ্ট একটি পার্থক্য ছিল বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ নিয়ে। "কিশোর তারকালোক" বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করলেও "কিশোর পত্রিকা" তা করতো না। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল "কিশোর তারকালোক"-এর বিশেষ ঈদ সংখ্যা, ভূত সংখ্যা, সায়েন্টিফিক সংখ্যা, রহস্য সংখ্যা প্রভৃতি। বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত এসব সংখ্যার মধ্যে ঈদ সংখ্যায় বিভিন্ন লেখকরা ছাড়াও দেশের প্রথিত যশা ব্যক্তিরা লিখতেন। এদের মধ্যে অরুণ চৌধুরী প্রতি বছর কেবল "কিশোর তারকালোক"-এর ঈদ সংখ্যায় একটি ধারাবাহিক সায়েন্টিফিক উপন্যাস লিখতেন। তখন বাংলাদেশে সায়েন্টিক লেখা পাওয়া যেত কেবল সেবার বই পড়ে। অরুন চৌধুরীর সেই ধারাবাহিক উপন্যাসটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। আমার এখনও মনে পড়ে, কেবল সেই উপন্যাসটি পড়ার লোভেই পরবর্র্তীতে বেশ কয়েক বছর "কিশোর তারকালোক" কিনতাম। কিন্তু তখনও জানতাম না তিনি কে, কি করেন?

পরবর্তীতে ২০০০ সালে যখন "আজকের কাগজে" কাজ শুরু করলাম তখন জানতে শুরু করলাম অরুণ চৌধুরী সম্পর্কে। তার লেখা উপন্যাস পড়তাম বা নাটক দেখতাম আগ্রহ নিয়ে। একটা ভাল লাগা ছিল তার লেখক সত্ত্বাকে ঘিরে। পরবর্তীতে যখন মিডিয়া জগত নিয়ে আরও জানলাম তখন অরুণ চৌধুরীর ব্যক্তিক পরিচয় নিয়েও বেশ অনেক ধরণের খবর শুনতাম। স্ত্রী চয়নিকা চৌধুরীর সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক ভাল নয় বা চয়নিকার ব্যক্তিক ইমেজও খুব সুবিধের নয় বলে মিডিয়া মহল থেকে মাঝে-সাঝেই শুনতাম। কিন্তু অরুণ চৌধুরীর স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে হাস্যজ্জ্বোল গ্রুপ ছবিটি দেখে অধিকাংশ খবরকেই ভিত্তিহীন মনে করতাম।

অবশেষে ৩.১ মেগাবাইটের ছোট একটি ভিডিও ক্লিপিংস্ অরুণ চৌধুরী সম্পর্কে জানা-অজানা সব তথ্যের ভিত্তিহীনকে ভিত্তির মূলে দাঁড় করিয়ে দিলো। নিজের ব্যক্তি ইমেজ ও অবস্থানকে ব্যবহার করে তিনি যেভাবে মিডিয়ার নতুন মেয়েদেরকে ব্যবহার করেছেন সেটি যে তার অত্যন্ত দুর্বল ও নিম্ন মানসিকতারই পরিচায়ক সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন আনন্দধারা পত্রিকার সম্পাদক ছাড়াও নাট্যাঙ্গনে নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে নিজের যে ব্যক্তিক ইমেজটি তিনি গড়ে তুলেছিলেন সেটির নিঃসন্দেহে অপব্যবহার করেছেন। সাম্প্রতিক মিডিয়ায় স্ক্যাণ্ডালের অস্থিরতার ভীড়ে অরুণ চৌধুরীর এই ভিডিওটি নিয়ে ব্লগ ও ফেসবুকে রীতিমত আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে।

আনন্দধারার একটি সোর্স থেকে আজ খবর পেলাম যে, অরুণ চৌধুরী আনন্দধারার সম্পাদক হিসেবে আর থাকছেন না। তাকে সম্পাদক পদ থেকে ইতিমধ্যে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে তিনি যেমন নিজের ক্যারিয়ারের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন তেমনি অসংখ্য পাঠককে করেছেন হতাশ। ঠিক এমনি আরেকটি হতাশ হয়েছিলাম হুমায়ূন আহমেদের কীর্তি দেখে!

একজন লেখক, সাহিত্যিক বা মিডিয়াকর্মী শুধু নিজের সত্ত্বারই পরিচায়ক হন না, বরং তিনি অন্যদের জন্যও আইডল হিসেবে চিহ্নিত হন। অথচ আমরা যাদেরকে আইডল হিসেবে নেব তারাই আজ ইমেজ সংকটে ভুগছেন। এক একটি স্বপ্নের অপমৃত্যৃ হচ্ছে প্রিয় মানুষটিকে নিজের ব্যক্তিগত লালসার কাছে পরাজয় হতে দেখে।
অথচ এমনটা কখনোই কাম্য ছিল না।
অথচ এমনটিই ঘটছে।
আর মানতে কষ্ট হচ্ছে, কারণ এটাই যে বাস্তবতা!

**********************************************

[ barta24.net-এ প্রকাশিত]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×