১৯৯৭-৯৮ সালের কথা। এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে রোজ বিকেলে আড্ডা না দিলে, এখন একদিন ফেসবুকে ঢুঁ না মারলে যেমনটা লাগে ঠিক তেমনই লাগতো! তখন দেশে মোবাইল ফোনের বিস্তার ছিলো হয়তো হাজারে একটির মতো! আর ডেস্কটপ কম্পিউটার সবে মাত্র ঘরে ঘরে ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে আড্ডা হতো ঠিক আড্ডারই মতো। আড্ডায় পারস্পরিক বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোও যে আসতো না তা কিন্তু নয়।
তবে দিন পাল্টে গেছে। এখন ৫ জন বন্ধুর আড্ডায় বসলে দেখা যায় একজন মোবাইল ফোনে ফেসবুকে চ্যাট করছে, একজন হয়তো বা ফোনে প্রেমালাপ করছে। আর একজন ল্যাপটপ নিয়ে গুটুর গুটুর করছে, যা অন্য দুজন মন দিয়ে খেয়াল করছে। এই হলো এখনকার আড্ডার একটা নমুনা। আড্ডার মতো আড্ডাও যে হচ্ছে না এমনটা নয়। তবে সেখানেও উপদ্রব হিসেবে কাজ করে মোবাইল ফোন। মিনিটে মিনিটে কারো না কারো ফোনে কল আসবে আর আড্ডায় বিরতির ঘন্টা বাজবে। এভাবে আর যাই হোক আড্ডা তো জমে না ...
××××××××××××××××××××××××××××××××××××××××××××
২০০৭-০৮ সালের কথা। সামহোয়ারইন ব্লগে তখন অনলাইনে থাকতো ১৫-২০ জনের মতো! আমি তখন দৈনিক যায়যায়দিনে কাজ করি। যায়যায়দিনে ব্লগিং করতাম আমরা প্রায় ২০ জনের উপরে। এক সময় এমন দাঁড়ালো, অফিসের সাব-এডিটর কিংবা রিপোর্টার মধ্যে খুব কমই ছিলেন, যিনি সামহোয়ারইনে ব্লগিং করতেন না। ফলে পুরো পত্রিকা অফিসেই কাজের পাশাপাশি ব্লগিং-মুখর একটি পরিবেশ বিরাজ করতো। তখন ব্লগে রেটিংয়ে সেরা পোস্টটি আলাদা ভাবে স্টিকি করা হতো। ফলে রেটিংয়ের ক্ষেত্রে যায়যায়দিন ব্লগারদের ক্ষমতা ছিল ব্যাপক!
আস্তে আস্তে যায়যায়দিনের ব্লগাররা বিভিন্ন পত্রিকায় চলে গেলেন। ব্লগিংয়ের মিলিত উদ্যমে ভাটা পড়ায় প্রায় প্রত্যেকেই ব্লগিং থেকে পেশাগত কাজেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
সামহোয়ারইনের ব্লগারদের মধ্যে সম্প্রীতির একটি বাঁধনও এসময়ই মূলত গড়ে উঠে। ব্লগাররা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতেন। পরস্পর পরস্পরকে চিনতে আগ্রহী হতেন। এখন সামহোয়ারইনে অসংখ্য ব্লগার। হয়তো অনেকেই ভীষণ মজা করে ব্লগিং করেন। কিন্তু আমি ও আমার সমসাময়িক অনেকেই এখন আর ব্লগিংয়ে মজা পান না। পাঠকের মৃত্যুর মত হয়তো অজান্তেই ব্লগারয়েরও মৃত্যু ঘটেছে...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৪৪