somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী"

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি । স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জেলা গ্রন্থমেলার আয়োজন সেই প্রথমবারই বোধহয় ময়মনসিংহে হল । এই বইটা সেই গ্রন্থমেলা থেকেই কেনা । “Let Newton Be” বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের নাম । লেখক আমাকে একি সাথে আনন্দিত এবং আতঙ্কিত করলেন । চ্যালেঞ্জিং লেখনী আমাকে মুগ্ধ করলো ।অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে বইটা পড়া শেষ করলাম । এরপর হাতে এল “মহাবিশ্বে প্রান ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে” । আমার মুগ্ধতা অটুট থাকল ।

ক্লাস সেভেনে থাকতে প্রথম যখন হাতে ইন্টারনেট আসলো ,গুগলের আগে মুক্তমনার সাইটে ঢুকলাম । আস্তিক নাস্তিক বোধ তখনো আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে সাপোর্ট করত না ।আজও করেনা । মুক্তমনা তখন আমার কাছে বড়দের উচ্চ পর্যায়ের চিন্তা ভাবনার অংশ বলে মনে হত । জল বহুদূর গড়াল । আজকের দিনে আপনার মন চাইলে আপনি ক্লাস ৬/৭ এর একটা বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন নাস্তিক মানে কি । মানুষ নাস্তিক কেন হয় । সেই পিচ্চি যেই উত্তরই দিক না কেন , তা নির্দ্বিধায় আপনাকে অবাক করবেই ।

আচ্ছা, অভিজিৎ রায়কে মরতে হল কেন ?
সে কি রাষ্ট্রদ্রোহী ছিল ?
দেশটার খুব বড় কোনো ক্ষতি করেছিল ?
আমার জানা নেই ।
প্রিয় লেখকের মৃত্যুর স্বাদ আমি আগেও পেয়েছি । কিন্তু যখন দেখি খবরের হেড লাইনে “মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় 'খুন' ” তখন কিভাবে নিজেকে আতকে রাখব ?

অভিজিত রায় বাংলাদেশে আছেন তাও আমি জানতাম না । তার সর্বশেষ লেখাটা পড়েছি খুব সম্ভব জিরো টু ইনফিনিটিতে । সেখানে দেশের বাইরে আছেন এমন কিছু লেখা ছিল ।
কই ?
ইমরান এইচ সরকারকে তো মরতে হল না ?
লাকি আক্তার তো খুন হল না ?
শুধু অভিজিৎ রায় খুন হবেন কেন ?
পুরোপুরি রাজনৈতিক ব্লগার তো তিনি ছিলেন না ?
তবে ?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন কি ?
"রাজাকারদের মত এটা শুধুই উগ্র হেফাজত জামাত চ্যালাদের কাজ"- আমাকে মরা অভিজিৎ রায় উঠে এলেও আমাই তা বিশ্বাস করব না । বুদ্ধিজীবী হত্যার মত উচ্চমার্গের চক্রান্ত বুদ্ধি এক চ্যালাদের মাথায় থাকেনা । এইটা বুঝার জন্য ঘুড়ার ডিমের তদন্তও লাগে না । চোখ-কান-নাক-মুখ বন্ধ করে বলতে পারি ,পেছনে "বড় কিছু" কলকাঠি না হোক , এট লিস্ট লাকড়ি ঠিকই নাড়ছে ।

#এক_কথায়_উত্তরঃ
প্রশ্নঃ মানুষ নাস্তিক হয় কেন ?
উত্তরঃ ছাগুদের অত্যাচারে ।
দেশটারে চালানোর জন্য এক হাজারটা ধর্মান্ধ জঙ্গি ছাগুর চে একটা দেশপ্রেমিক কট্টর নাস্তিক অনেক অনেক দামি । সারাদিন জায়নামাজে মাথা ঠুকে , জামাতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে দিনশেষে "গরীবের বাচ্চাকে" লাথি মেরে হাজার টাকা দিয়ে দান বাক্স ভর্তি করে যারা খোদাকে "তোষামদ" করতে চায় , তাদের তুলনায় দানবাক্স চুরি করে গরীবের বাচ্চাকে এক বেলা পেট ভরে খাওয়ানোর সেই বদ কুলাঙ্গার ফাসিককে আমি সালাম করি । জাতি খালি জিহাদী হাদিসই পড়ল , অথচ যে কাফির মহিলা একটা তৃষ্ণার্ত কুকুরকে শুধুমাত্র পানি খাওয়ানোর পুণ্যে স্বর্গবাসী হলেন তার কথা একবারো শুনলনা ।

অভিজিৎ রায়ের ব্যক্তিগত জীবন আমার জানার বিষয় না ।তার ধর্ম চিন্তা আলাদা হতেই পারে , মত প্রকাশের মাঝে দোষের কিছু নাই । সেটাও মুখ্য না আমার কাছে । পাঁচবছর আগে আমার প্রথম পড়া অসম্ভব যুক্তিবাদী বইয়ের লেখকই আমার কাছে মুখ্য ।সেই অভিজিৎ রায় আমার কাছে মহান মানুষ ।
কই ?
তখন তো আমাকে একটা বারের জন্যও judge করতে হয়নি তিনি কতটুকু আস্তিক ?
আমরা আজব , আমাদের চিন্তা আজব , দেশে থাকা "মানুষগুলা"(!) তার চেয়ে আজব ।
এই দেশে রাজাকারদের দালালী করতে আইনজীবি পাওয়া যায় ,মানবতাবিরোধী অপরাধীদের জন্য মানবতার কত শত বাহার দেখানো হয় , আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকার নিরাপত্তা(?) বেষ্টনীর মাঝে দুইটা মানুষের উপ্রে কুপাকুপি চলে- তখন কাউকে আসতে দেখলাম না কেনো ?
তার অপরাধ ?
সে নাস্তিক ,মুরতাদ ,আল্লাহর গজব নেমেছে তার উপর ।
আমরা তাকে বাঁচানোর কে ?
অনেকদিন আগে একটা পোস্ট পড়েছিলাম-
“যুদ্ধাপরাধী কাকে বলে জানেন ? যুদ্ধ করে যারা অপরাধ করে ফেলসে তারা যুদ্ধাপরাধী”
আসলেই তো । যে দেশকে অজয় রায় শক্ত করে বুকে আগলে রেখে যুদ্ধ করলেন ,সেই দেশ কি পারলো তার ছেলেকে বুকে আগলে রাখতে ।বরং সেই দেশের মানুষই তো "গাদ্দারী" করল ।মুক্তিযুদ্ধ করে তার "কচুটা" লাভ হল ।রাত দুপুরে মশা মাছি মারার মত বুদ্ধিজীবি পুত্র মরে পড়ে থাকে ,দেশের জন্য যুদ্ধ করে এর ছেয়ে ভাল প্রতিদান অজয় রায় পাবেন তা ভাবাই যায় না ।
আর তার পুত্র হচ্ছে বুদ্ধির ঢেঁকি ।ঢেঁকি দিয়ে লাভ কি? কারন পৃথিবী এখন #দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে সরল রেখায় ছুটছে । সেও বুঝে গেছে ঘুরে ঘুরে বেশি লাভ নাই ,destination এ তো পৌঁছান লাগবে! আমরাও তার আগে পিছে না দেখে এশার নামাজ পড়ে শুয়ে পড়ি ,বাকিরা ধুপ ধুনা দেয় ,জিসাসের নাম জপ করে ।তাতেও অবশ্য আমাদের ঘোর সমস্যা । তবে আমাদের এত টেনশন নেওয়ার কিছু নেই ।আমাদের জেহাদী ভাইয়েরা আছেন ,তারা থাকতে আমাদের "মহান ধর্মের বর্ম" নষ্ট হয় কি করে ?

আর তারা মাংনা কাজ ত করছে না !বেহেস্তে পার জিহাদী ৭২টা হুরপরি বরাদ্দ আছে ...... তার লোভ কি করে সামলায় ? তাদের কাচের মত স্বচ্ছ চামড়া ,তার জন্য রোদে পোড়া চামড়া তুলে নিলেও তেমন একটা অসুবিধা নেই ।

ব্যাপার না ।ডিসেম্বর মাসে এক পিচ্চি মরল , আমরা কিছুদিন নাচলাম ।২দিন পর নতুন ইস্যু আসবে ।অভিজিৎ রায়ের মত "ফাউপাব্লিক" রে আমরা তখন আর মনে রাখব । ব্যাটার কপালে মৃত্যু ছিল ,কিন্তু আমাদের তো বাঁচা লাগবে । বাঁচবো ,শক্তির তোয়াজ করব ।আঁধারের যাত্রীর সাথে নিজের কপাল জড়িয়ে কি লাভ ?অই সব ব্লগার ফ্লগার হইলে ভাত নাই ।

মুখপোড়া না হাতে আলো টালো কি একটা রাখসিল ? সেই নাপাক জিনিসটা কেউ ছুঁয়েছে বলে মনে হয়না । সেইটা রাস্তায় লুটোপুটি খেল ।হুদাই ।ব্যাটা কলেমা জপ করত ,অন্তত হরি নাম জপ করত ,দুই দেশেই দুই খোদার একজনের তো পুন্যি পেত ,তা না !

বেটা মরার আগে দেশের বুকে আগুনটা লাগায়াই গেল !

২৬/০২/২০১৫,রাত ১১ঃ১৫ মিনিট


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×