somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রামকৃষৃ্ঞ
রামকৃষ্ণ মজুমদার বর্তমানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত ভূমিকম্প প্রকৌশল ও গবেষণা ইন্সিটিউট এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।nhttps://sites.google.com/site/rkmazumder/

ভূমিকম্প সহনশীল ইটের বাড়ি নির্মাণ প্রকৌশল

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে বড় শহরগুলো ছাড়া ছোট ও মফস্বল শহরের অধিকাংশ স্থাপনাই ইটের তৈরি। মুলতঃ নব্বইয়ের দশকের শেষদিক হতে ইটের বাড়ির পরিবর্তে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরির প্রবনতা কয়েকগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কনক্রিটের সাথে সাথে স্টিল এর স্থাপনা তৈরির হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পেছনে প্রধান কারন হচ্ছে কনক্রিট ও স্টিল এর দীর্ঘস্থায়ীত্ত্ব এবং ভূমিকম্পের সময় ইটের তৈরি স্থাপনার চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভাল আচরণ। কনক্রিটের স্থাপনায় রেইনফোর্সমেন্ট ব্যবহার করার ফলে ভূমিকম্পের সময় মাটির বা ইটের তৈরি স্থাপনার চেয়ে ভাল আচরণ করে। এছাড়া স্থাপত্য নকশার সোন্দর্য্য ও স্থায়িত্ত্ব বিবেচনা করে স্টিলের কাঠামো ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য কনক্রিট কিংবা স্টিল উভয়ই ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এখনো ইটের তৈরি স্থাপনাই প্রথম পছন্দ। যদি সঠিকভাবে ভূমিকম্প প্রতিরোধী কৌশলগুলো ইটের তৈরি স্থাপনায় প্রয়োগ করা যায়, তাহলে খুব সহজেই কম খরচে অল্প থেকে মাঝারি মানের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ইটের তৈরি স্থাপনা ভূমিকম্প সহনশীল হতে পারে। এই প্রবন্ধে ইটের ভবন কিভাবে শক্তিশালী করা যাবে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।

ইটের বাড়ির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এটি ভূমিকম্পের মত শক্তিশালী আনুভুমিক বলের সময় অতন্ত্য দুর্বল আচরণ করে থাকে। এ কারণে পূর্ববর্তী ভূমিকম্পের সময় ইটের ভবনগুলো সবচেয়ে বেশি পরিমানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, নির্মাণ সামগ্রির মধ্যে ইট অত্যন্ত ভঙ্গুর ম্যাটেরিয়ালস। সাধারনতঃ ইটের তৈরি ভবনে কয়েকটি বিশেষ দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত, ভূমিকম্পের সময় দুটি দেওয়ালের সংযোগস্থল বরাবর ফাটল এর সৃষ্টি হয়। পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, যে পথ বরাবর ভূমিকম্প তরঙ্গ সঞ্চালিত হয় সেই সঞ্চালনের পথের সাথে লম্বভাবে অবস্থিত দেওয়ালে ভূমিকম্প সৃষ্ট আনুভুমিক বল অপেক্ষাকৃত বেশি অনুভুত হওয়ায় তা দুর্বল আচরন করে থাকে (চিত্র ১, খ দেওয়াল এর ন্যায়), এ ধরনের দেওয়ালে সৃষ্ট বলকে আউট-অব-প্লান-ফোর্স হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । অপরদিকে ভূমিকম্প সঞ্চালন রেখা বরাবর সমান্তরালে থাকা দেওয়ালগুলো অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী আচরণ করে (চিত্র ১, ক দেওয়াল এর ন্যায়), এ ধরনের দেওয়ালে সৃষ্ট বলকে ইন-প্লান-ফোর্স বলা হয়। ইটের ভবনে এই দুই ধরনের বাহ্যিক বলের কারণে পাশাপাশি দেওয়ালগুলোর সংযোগস্থলে ফাটলের সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, ইটের ভবনে দরজা জানালার ফাঁকাস্থানগুলোর পাশাপাশি ও মাঝামাঝি অংশের দেওয়ালে কর্ণ বরাবর চিত্র ২ এর ন্যায় ফাটল সৃষ্টি হয়ে থাকে। আরও একটি প্রধান দুর্বলতা হছে ভূমিকম্পের সময় দরজা-জানালার উপরের ও নীচের অংশের দেওয়ালের মাঝে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভ্রামক বলের সমবিন্যাস না হলে দেওয়ালে রকিং ও ক্রাশিং সৃষ্টি হয়, যা চিত্র ২ এর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। রকিং হচ্ছে দেওয়ালের বিভিন্ন অংশে মোচড়ের সৃষ্টি হওয়া এবং ক্রাশিং হচ্ছে সৃষ্ট মোচড়ের কারণে দেওয়ালের বিভিন্ন অংশের প্রান্তে ক্ষয় হয়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে পড়া, চিত্রে বৃত্তের মাঝে ক্রাশিং দেখান হয়েছে। এছাড়া ভবনের দেওয়ালের পুরুত্ব উচ্চতা ও দৈর্ঘ্যের তুলনায় যথেষ্ট না হলেও তা ভূমিকম্পের সময় দুর্বল আচরণ করে থাকে। একারনে অতীতের ভূমিকম্পের সময় গির্জা, মন্দির বা মসজিদ এর মত স্থাপনায় দেওয়ালের পুরুত্বের তুলনায় উচ্চতা বেশি হওয়ায় কারণে সাধারণ ভবনের চেয়ে প্রার্থনালয়গুলো বেশি পরিমানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।





ইটের ভবনে যদি এই কয়েকটি প্রধান দুর্বলতা কাটিয়ে তোলা সম্ভব হয় তাহলে খুব সহজেই ইটের তৈরি ভবন নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য হবে। এখনো দেখা যায় যে পৃথিবীর অধিকাংশ পুরাতন শহরেগুলোতে ইটের তৈরি স্থাপনার সংখ্যাই বেশি। এমনকি ইউরোপের মত উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ইটের স্থাপনা হাজার বছর ধরে টিকে আছে কোন ধরণের ক্ষতি ছাড়া। এ জন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিচর্যা, এই সকল দেশে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ভবনগুলোর সংস্কার কাজ করা হয়ে থাকে। যদি নিয়মিতভাবে কয়েক বছর পর পর স্কার কাজ করা যায়, ভবনগুলো দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ থাকে। নিয়মিতভাবে সংস্কার করতে খরচও কম হয়। এ ধরনের ভবন নিয়ে গবেষণায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে পর্তুগাল ও ইতালি। পরীক্ষাগারে ভবনগুলোর ছোট ছোট মডেল করে কৃত্তিম উপায়ে ভূমিকম্প তৈরি করে দেখা গেছে যে, ইটের তৈরি সাধারণ ভবনের চেয়ে ‘কনফাইন্ড ম্যাসোনারি’ ভবন ভাল আচরণ করে। এমনকি ভূমিকম্পের পরে এই ধরনের বাড়ির ক্ষেত্রে ভাল কল পাওয়া গেছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বিভিন্ন শহরেও আজকাল এই ধরণের বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও কম খরচে দেশীও কাঁচামাল ব্যবহার করে এ ধরনের ভবন তৈরি করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ মিস্ত্রি দিয়ে সঠিকভাবে ভূমিকম্প সহনশীল কৌশলসমূহ প্রয়োগ করা। এখন আসা যাক ‘কনফাইন্ড ম্যাসোনারি’ ভবন বলতে আসলে কি বোঝানো হয়! ইটের তৈরি ভবনের পাশাপাশি দেওয়ালগুলোকে যদি একে অপরের সাথে যুক্ত করে দেওয়া যায় তাহলে ভুমিকম্পের সময় দুর্বল দেওয়ালে সৃষ্টবল অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দেওয়াল কর্তৃক শেয়ার করবে। এভাবে ভবনের সকল প্রান্তের পাশাপাশি দেওয়াল যদি যুক্ত করে দেওয়া যায় তবে ভবনটি একটি বাক্স এর ন্যায় আচরণ করবে (চিত্র ৩)। এ ধরণের নকশার ভবনকে ‘কনফাইন্ড ম্যাসোনারি’ বলা হয়ে থাকে। দেয়ালগুলোর মাঝে আনুভুমিক রেইনফোর্সমেন্ট ব্যবহার করে যুক্ত করা হয়। সাধারণতঃ দেওয়ালের প্রান্ত থেকে ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত ইংরেজি L ন্যায় রেইনফোর্সমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এমনকি রেইনফোর্সমেন্ট এর বিকল্প হিসেবে কাঠও ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে দরজা জানালা ভবনের দেওয়ালের প্রান্তে রাখা হয়না। এধরনের সংযোগ স্থাপন করায় দুই দেওয়ালের মাঝে ফাটল সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা অনেকাংশে কমে যায়। দেওয়ালে সৃষ্ট রকিং ও ক্রাশিং প্রতিরোধে ফাঁকাস্থানের পাশে ও দেওয়ালের প্রান্তে উলম্বভাবে এবং জানালার উপর-নীচ বরাবর আনুভুমিকভাবে রেইনফোর্সমেন্ট ব্যবহার করা হয় (চিত্র ৪) । স্বাভাবিকভাবে এই দুইধরনের রেইনফোর্সমেন্ট ব্যবহারের কারণে দেওয়ালের মাঝে কর্ণ বরাবর ফাটল সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ হয়। কন্‌ক্রিটের ছাদ ব্যতীত ভবনের ক্ষেত্রে টিনের তৈরি ছাদ ও দেওয়ালের মাঝে লীন্‌টেল এর মত ব্যান্ড ব্যবহার করতে হবে যাতে ভূমিকম্পের সময় ভবনের উপরের অংশ সুদৃঢ় আচরণ করে। এছাড়া ভবনের ফাউণ্ডেশ্‌ন ও দেয়ালের মাঝে একই রকমের ব্যান্ড ব্যবহার করলে ভবন অধিকতর শক্তিশালী হবে। আমরা যদি উল্লেখিত কৌশলসমূহ আমাদের দেশে নতুন ভবনের জন্য প্রয়োগ করতে পারি তাহলে খুব সহজে ও কম খরচে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী এবং ভূমিকম্প সহনশীল ইটের ভবন বানানো সম্ভব। এমনকি এই ধরণের ‘কনফাইন্ড ম্যাসোনারি’ দুর্বল ডিজাইনের কনক্রিটের ভবন অপেক্ষা শ্রেয়তর।


ছবির উৎসঃ EQTIPS,IITK
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×