মাটি ও মানুষের কথা ২
কেমন করে এলাম
মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে আমার যোগ দেওয়ার ব্যাপারটা কাকতালীয়। জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যোগ দেই ১৯৭৮.১৯৭৯ ও ৮০ সালে। খুলনার আযমখান কমার্স কলেজের দলের সদস্য ও দলনেতা হিসেবে মোট ৫ বার এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। তখন পরিচয় আলিমউজজামানের সাথে। আলিমউজ্জামান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক, বাড়ী যশোরে। খুলনার দলের সাথে আসি বলে আমাদের কাছে তিনি ছিলেন আপনজনের মতো। তার সাথে কাজ করতেন আতিয়ার রহমান। তিনি আবার আমার আত্মীয়। সব মিলিয়ে সম্পর্কটা গাঢ় হতে থাকে।
৮১ সালে চলে আসি ঢাকায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছি। থাকি মালিবাগে চাচার বাসায়। সেখান থেকে হেটে যেতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিকেলে ফেরার সময় মগবাজার কফি হাউজে দেখতাম আলিমউজ্জামান আড্ডা মারছেন সাথে অভিনেতা অভিনেতা জহুর আমেদ, গোলাম মুস্তাফা এবং সৈয়দ হাসান ইমাম। তখন তো হাসান ইমাম, গোলাম মুস্তাফারা আমাদের কাছে স্বপ্ন পুরুষের মতো। একদিন ফেরার পখে দেখা হলো আলিম উজ্জামানের সাথে। তিনি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন সবার সাথে। বললেন টেলিভিশনে যেতে।
৮২ সালের কোনো ডিসেম্বর মাসে কেবলমাত্র তার সাথে দেখা করতেই একদিন টেলিভিশন গেলাম। তিনি আমাকে সরাসরি বললেন-- আমি নতুন একটা অনুষ্ঠান পেয়েছি- কৃষি বিষয়ক, আপনি করবেন?
প্রস্তাবটা লোভনীয় কিন্তু ভয়ও কাজ করছিল। আমি বললাম-- আমি কি পারবো?
আলিমউজ্জামান বললেন - আমার তো মনে হয় আপনি পারবেন।
সাথে সাথে আমি বললাম- আপনি যখন বলছেন তাহলে আমি নিশ্চয়ই পারবো।
ব্যস শুরু হয়ে গেল পথ চলা। জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে একবার গেলাম কেবল দেখার জন্য। কিভাবে হয় অনুষ্ঠানটি। দ্বিতীয় সপ্তাহেই সরিষার মাঠে আমার হাতে মাইক্রোফন ধরিয়ে দিলেন আলিমউজ্জামান। আমি উত্তেজনায় কাঁপছিলাম। ক্যামেরায় ছিলেন সমীর কুশারী। তখনকার অনুষ্ঠান ধারণ কারাটাই শেষ। স্পট এডিটেড অনুষ্ঠান। ক্যামেরা ওপেন করলে উপস্থাপনা, ধারাবর্ণনা সাক্ষাতকার একসাথেই করতে হবে। কোনো কাট চলবে না। কোনো সম্পাদনা সুবিধা ছিল না। তাই যা একবার বলবো সেটাই শেষ কথা। অনেকটা ভয়ে কিন্তু অন্যদের প্রেরণায় দাড়িয়ে গেলাম মাঠে টানা ১৪ মিনিট কথা বললাম, সাক্ষাতকার নিলাম এবং হযে গেল অনুষ্ঠান। পরের অংশটুকু শেষ করলেন দেওয়ান সিরাজ।
এমন করেই শুরু। ১৯৮৩ সালের জানুয়ারি মাসে যা শুরু করেছিলাম। সেটি এখনো চলছে। আমার প্রতি আলিমউজ্জামান যে আস্থা রেখেছিলেন তার সম্মান আমি দিতে পেরেছি কি না জানিনা তবে তার এই ঋণ মনে হয় কখনোই ভুলবো না।
আলিমউজ্জামান না ফেরার দেশে গেছেন ১৯৯২ সালে। কিন্তু তাঁর উপস্থিতি আমরা টের পাই মাটি মানুষের টাইলে সঙ্গীতে।
আমারো দেশের মাটির গন্ধে এখনো আলিমুজ্জামামনের হৃদয় ঘুরে বেড়ায় আর আমরা অবনত হই তার পবিত্র স্মৃতির প্রতি। আলিমউজ্জামান সম্পর্কে আলাদা ভাবে কিছু লিখতেই হবে, তবে তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি এখনো। এত বড় হৃদয়ের মানুষ সম্পর্কে লেখা যা তা কথা তো নয়!
মাটি ও মানুষের কথা পর্ব ১
এই লিংকে: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




