‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’
গানটি শুনে আমাদের রক্তে এক নতুন দোলা এসে যায় আপনা আপনিই। আমরা স্বপ্ন দেখা শুরু করি, আমাদের দেশের স্বপ্ন। একটা সুস্থ ও স্বাভাবিক দেশ। আমরা প্রত্যেকেই নতুন করে বাঁচতে চাই। আমরা চোখ বন্ধ করে নতুন দিনের কথা ভাবি।
কিন্তু কথাটা সেখানে নয়। প্রশ্নটা দাঁড়ায় তখন যখন এই আমরা শব্দটি কিছু ব্যক্তি গোষ্ঠীর জন্য মানায় না। এই আমরা কারা? এরা তারাই যারা দেশটাকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের কর্মের মাধ্যমে। আসুন ঘটনাটা একটু ব্যাখ্যা করি:
আমি যেখানে কাজ করি সেখানে আমার সর্বস্ব ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আমার উচিত আমার কর্মস্থলকে পবিত্র জ্ঞান করে দায়িত্বটুকু সুসম্পন্ন করার চেষ্টা করা। আমার কর্তব্য আমার দেশকে এগিয়ে নিতে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে কাজ করে যাওয়া। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ করছেন কি?
একজন শিক্ষক যদি ক্লাসে না পড়িয়ে প্রাইভেট ব্যাচে সময় দেন তাহলে সেটা অন্যায়। একজন সাংবাদিক যদি সংবাদের পেছনে না ছুটে, অপসংবাদের পিছনে ছুটে এবং সত্যি কথার পরিবর্তে মিথ্যাটা প্রচার করে সেটা অন্যায়। একজন চাকুরীজীবী যদি তার নিজের কর্মস্থলে কাজ না করে বাসায় শুয়ে বসে কাটান, তাহলে সেটা অন্যায়।
ক্লাসের বাইরে যদি বাড়তি সময় থাকে তাহলে একজন শিক্ষক তার অর্থ উপার্জনের জন্য টিউশনি করতে পারেন। একজন উকিল বা আইনজীবী তার কর্মস্থলে কাজ শেষে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে নিজের বাড়তি উপার্জন করতেই পারেন। একজন ডাক্তারও নিজের অবসর সময়টাতে প্র্যাকটিস করে নিজের বাড়তি উপার্জন করতে পারেন। এটাতে অন্যায় কিছু হয় না। কিন্তু অন্যায় বা অপরাধ হয় তখন যখন একজন মানুষ তার নিজ কর্মক্ষেত্রটাকে বাণিজ্যিক ধারায় চালিত করেন। আমার বাবাও একজন শিক্ষক ছিলেন। স্কুলের ক্লাসের বাইরে তার প্রচুর ব্যাচ ছিলো। কিন্তু কখনো তাই বলে শুনিনি বাবা কোনদিন ক্লাসে কম সময় দিয়ে পড়িয়েছে। বরং শুনেছি যে চ্যাপ্টার ধরতেন তার পুরোটা শেষ করে উঠে আসতেন। একজন প্রধান শিক্ষক ক্লাস নেন খুব কমই । কিন্তু বাবা একটা ক্লাসও মিস দিতেন বলে তো মনে পড়ে না। ক্লাস সিক্সের সময়ও দেখেছে বিজ্ঞানের স্যার না আসায় বাবা আমাদের ক্লাসে বিজ্ঞান পড়াতে এসেছিলেন। লবণ চিনির মিশ্রণ থেকে লবণ পাবার উপায় প্র্যাকটিক্যাল দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু হালের সবাই কি তাই করছে? যদি না করে তাহলে তাদের বিবেককে নাড়া দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সেটা হতে পারে কয়েক ভাবে। শাস্তি, আইন এবং বরখাস্ত এগুলো সরকারি পদক্ষেপ। কিন্তু সাধারণ মানুষেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আমাদেরও উচিত তাদের মনে করিয়ে দেয়া। যদি সেটা স্বাভাবিক ভাবে না হয় তাহলে অস্বাভাবিক ভাবেই করব। সোজা কথায় কাজ না হলে কাজ হয় কিভাবে সেটা নিশ্চই আমাকে শেখাতে হবে না। আমি তৈরি হচ্ছি, তৈরি হোন আপনিও........
আসুন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রতিরোধ গড়ি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১