somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটো গল্প: হলুদ ঘুড়ি

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পেণ্ডুলাম ঘড়িটা বেজে উঠতেই তূর্যর ভাবনায় ছেদ পড়লো। রাত বারোটা বাজে। সিগ্রেটটা অ্যাস্ট্রেতে ফেলে দিয়ে সে উঠে দাঁড়ালো। শেষবারের মতো শায়লার মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। শায়লা এখন ঘুমোচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় সবাইকেই বোধ হয় শিশুর মতো লাগে। শায়লার মুখমণ্ডলে কিছু চুল লেগে আছে। তূর্য খুব সাবধানে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। হঠাৎ চোখ পড়লো দেয়ালে ঝুলে থাকা হলুদ ঘুড়িটার দিকে। ফ্যানের বাতাসে মৃদু দোল খাচ্ছে। মনে হতে পারে তূর্যকে দেখে মুচকি হাসছে। ঘুড়িটা তূর্যই তৈরি করেছিল। নিজ হাতে। কিন্তু ঘুড়িটার মালিক সে নয়। ঘুড়িটার মালিক ছিল শিশির। শিশির তূর্যর প্রথম সন্তান। আট বছর বয়স পর্যন্ত তাদের সাথেই ছিল। এই বাসাতেই ছিল তার মুখর পদচারণা। খুবই চঞ্চল ছিল ছেলেটা। কারো কথাই শুনতো না। সারাদিন খেলা নিয়ে ব্যস্ত। আর ঘুড়িটা ছিল তার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস। প্রায়ই ছাদে গিয়ে ঘুড়ি ওড়াতো।
দুই বেডরুম, এক ডাইনিং, এক কিচেন ও এক বারান্দার এই ফ্ল্যাটে তূর্য যেদিন শায়লাকে নিয়ে উঠেছিল - মনে হয়েছিল কোনো খাঁচার মধ্যে তারা ঢুকেছে। অথচ যেদিন থেকে শিশির ঘরে এলো, সেদিন থেকে ঘরের প্রতিটি কোণে যেন আনন্দের কলোরল উঠলো। কংক্রিটের শরীরে যেন প্রাণ স্পন্দিত হলো। শিশির শায়লার গর্ভে থাকতেই তারা এ বাসায় উঠেছিল। শায়লা মনের মাধুরী মিশিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিল সংসার। তূর্যর চাকরিটাও ভালো চলছিল। মাস শেষে হ্যান্ডসাম স্যালরি। ঘরে স্ত্রী-পুত্রের ভালোবাসা। আর কী চাই। আনন্দে কাটছিল দিন। সময় যাচ্ছিল দ্রুতগতিতে। তূর্যর মনে হচ্ছিল এভাবেই বুঝি পার হয়ে যাবে জীবন। কিন্তু একটি ঘটনা তূর্য ও শায়লার জীবন ওলটপালট করে দিয়ে গেলো।
ঘটনাটা দুই বছর আগের। সময়টা ছিল শরৎকাল। সারাদিন কাজকর্ম করে বিকেলবেলা শায়লা একটু ঘুমাচ্ছিল। শিশির ছিল তার নিজের রুমে। হঠাৎ মানুষের চিৎকারে শায়লার ঘুম ভেঙ্গে যায়। বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড মোতালেব হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়েছিল। দরজা কে খুলেছে এ চিন্তা করতে করতেই মোতালেব বলে, শিশির ছাদ থেইকা পইড়া গেছে, আপা।
মোতালেবের হাতে তখনো হলুদ ঘুড়িটা ধরা ছিল। শায়লার পুরো ব্যাপারটা বুঝতে বেশি সময় লাগে নি। সে কোনোমতে টলতে টলতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। দেখলো নীচে রাস্তায় অনেক মানুষের ভিড়। শায়লা তূর্যকে ডায়াল করার জন্য ফোন হাতে নিল। কিন্তু তূর্যর নামটাও যেন সে তখন বেমালুম ভুলে গিয়েছিল।
যাই হোক, সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই সবকিছু শেষ। ওদিন তূর্য কাঁদেনি, শায়লাও কাঁদে নি। তূর্য ব্যস্ত ছিল পুলিশি হাঙ্গামা নিয়ে। শায়লাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছিল তার মা, ছোটো বোন। সবাই অনেক কাঁদছিল। শায়লা কাঁদেনি। সে কাঁদবে কেন? শিশিরের ঘুড়িটা তো তখনো তার কাছেই ছিল। সারাক্ষণ সে ঘুড়িটা ধরেই ছিল। একমুহুর্তের জন্যও সে ঘুড়িটা হাত ছাড়া করেনি। ঘুড়িটা তূর্যই তৈরি করেছিল। নিজ হাতে।
ঘুড়িটা শায়লা সেদিনই বেডরুমের দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। মাঝে মধ্যেই একমনে তাকিয়ে থাকতো ঘুড়িটার দিকে। তূর্য চাইতো ঘুড়িটার ফেলে দিতে। কেননা দিন দিন শায়লা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিল। কারো সাথে কথা বলতো না। কেউ কিছু বললেও প্রথমে খেয়াল করতো না। সবসময় ভাবনার অতলান্তে ডুবে যাচ্ছিল শায়লা। তূর্য বিভিন্নভাবে তার মন ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছিল না।
তূর্যর আর ভালো লাগছিল না। কাজের ব্যস্ততায় ডুবে থেকে শিশিরের শোক সে কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল। কদাচিৎ মনে পড়তো তার কথা। সে আরেকটা সন্তান নিতে চাচ্ছিল। যদি এতে করে শায়লার শোক কিছুটা হলেও কাটে। কিন্তু শায়লা রাজি হয়নি। ধীরে ধীরে বাসাটা তূর্যর কাছে নরক সমতূল্য হয়ে ওঠে।
তূর্য তার সবকিছু শেয়ার করতো তার অফিসের সহকর্মী রুম্পার সাথে। রুম্পা তার সব কথাই মন দিয়ে শুনতো। তূর্যর প্রতি একটা দূর্বলতা রুম্পার আগে থেকেই ছিল। কিন্তু যখন প্রতিদিন তূর্যর সাথে রাতভর ফোনে কথা, ফেসবুকে চ্যাট চলতে থাকল তখন রুম্পার দূর্বলতা প্রেমে পরিণত হয়। সে তূর্যকে সবকিছু জানায়। তূর্যও তার মাঝে খুঁজে পায় সান্ত্বনা। তাই তূর্যর দিক থেকে কোনো বাধা আসে না। সে সবকিছু মুক্ত করে দিয়েছিল। ক্লান্তির ভারে যে জীবনটা ডুবতে চলেছিল, সেই জীবনটাকে তো রুম্পাই আবার ভাসিয়েছে। তূর্য মনে মনে বলতো, মরুক গে শায়লা। ওর মরাই উচিত।
তবে তূর্য যে একেবারেই লুকিয়ে লুকিয়ে এসব করতো তা নয়। সে শায়লাকে জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু শায়লার সাথে কথা বলা আর না বলা একই কথা। তাই তূর্য একটি চিঠি লিখেছে শায়লাকে। সে সবকিছু ভেঙ্গে বলেছে। যাতে শায়লা তাকে ভুল না বোঝে। তূর্য এটাও বোঝে যে শায়লার সাথে অনেক বড় অন্যায় করা হচ্ছে। কিন্তু সে নিরুপায়। রুম্পাকে সে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নেই। কাল সকালেই তারা বিয়ে করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে। কোথায় যাবে সেটা তূর্য গোপন রেখেছে চিঠিতে। তূর্য শায়লার বালিশের পাশে চিঠিটা রেখে দিয়েছে।
আজ অার তূর্য ঘুমাবে না। সারারাত জেগে থাকবে। শায়লা ঘুম থেকে ওঠে আটটার সময়। তার আগেই বেরিয়ে পড়তে হবে। তূর্য একটা হার্ড ড্রিকংস বের করে গ্লাসে ঢালে। সিগারেট টানতে টানতে আলতো করে চুমুক দেয়।
তূর্য অনেকক্ষণ ধরে ভেবেছে শায়লার কথা, শিশিরের কথা। এখন একটু ভাবতে চায় কাল সকালে শায়লা যখন চিঠি পড়ে সবকিছু জানবে তখন সে কি করবে। আত্মহত্যা করবে না তো আবার! তূর্যর মনে এই সংশয়টা প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। কিস্তু গভীরভাবে ভাবলে মনে হয়, শিশিরের শোক বহন করতে করতে তার হৃদয় পাথর হয়ে গেছে। তূর্য তার সাথে থাকলো না চলে গেলো - তাতে তার কিছুই যায় আসবে না। ও - আরেকটা কথা। তূর্য কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কিছু টাকা নিজের জন্য রেখে, বাকি সব টাকা ট্রান্সফার করে দিয়েছে শায়লার নামে। এই ফ্ল্যাটের মালিকও এখন শায়লা। সচ্ছল জীবনযাপনের জন্য একজন মানুষের যা যা দরকার তার সব ব্যবস্থাই তূর্য করেছে। এখন বিপদ না ঘটলেই হয়। তবুও তূর্যর যেন খুঁতখুতানি যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে একটা বড় ভুল করছে। কোথাও কোনো গলদ রয়ে গেছে।
এখন আর শিশির নেই। শায়লা শিশিরের শোক বয়ে বেড়াচ্ছে। তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে। আর সে কি না অন্য একটি মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এটা কি স্বার্থপরতা নয়। এটা কি শায়লার সাথে জঘন্য প্রতারণা নয়। শায়লা কি পারবে কোনোদিন তাকে ক্ষমা করতে। তূর্য নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে। সে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বোঁজে। এভাবে চিন্তা করলে অন্য ইন্দ্রিয়গুলো কাজ করা বন্ধ করে ষষ্ঠেন্দ্রিয়কে প্রবলভাবে সক্রিয় করে তুলবে।
পেণ্ডুলাম ঘড়িটা আবার বেজে ওঠে। চারবার বাজে।
তূর্য শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় সে শায়লাকে ছেড়ে যাবে না। রুম্পাকে একটু বুঝিয়ে বললেই সে বুঝতে পারবে ব্যাপারটা। রুম্পা তো আর এতো সেন্টিমেন্টাল না। কিন্তু শায়লাকে যদি ও ছেড়ে যায় তবে সে নির্ঘাত আত্মহত্যা করবে। শায়লা মেয়েটা পাগল। ভালোবাসার জন্য যে সে কি করতে পারে তা তূর্যর চেয়ে অন্য কেউ বেশি জানে না।
ভাবতে ভাবতে কখন যে তূর্য ঘুমিয়ে পড়েছিল টের পায়নি। সূর্যের আলো চোখে পড়তেই তূর্যর ঘুম ভাঙ্গে। একবার ঘড়ির দিকে তাকায়। আটটা পনেরো বাজে। সে চমকে ওঠে। মোবাইলটা খুলতেই দেখে রুম্পার দশটা মিসকল। সে রুম্পাকে ফোন দেয়। রিং হয়। কিন্তু কেউ কল রিসিভ করে না।
হঠাৎ তূর্যর খেয়াল হয় - শায়লার তো ঘুম থেকে উঠে পড়ার কথা। তূর্য ফোন ফেলে দৌঁড়ে রুমে ঢুকতে গিয়ে দেখে দরজা ভেতর থেকে লক করা। তূর্য নক করে। আবার নক করে। ভেতরে কারো সাড়া নেই। তূর্য চিৎকার করে শায়লাকে ডাকে। ভেতরে কারো সাড়া নেই। চিঠিটা শায়লার বালিশের পাশেই ছিল। সেটা সরাতে ভুলে গিয়েছিল তূর্য।
তূর্য অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করে, শিট!
তূর্য দরজা ধাক্কা দিতেই থাকে। চিৎকার করে শায়লা ডাকতেই থাকে। কেউ দরজা খোলে না। তূর্য জানে না সে কী করবে। সে শুধু ঘামছে। সে ভেতরে যেতে চাচ্ছে। ভেতরে যেতে না পারলে সে মরে যাবে। তার হৃদয় ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাবে। কারণ ভেতরে আছে শায়লা, একটা চিঠি ও দেয়ালে ঝুলে থাকা নির্বাক হলুদ ঘুড়ি। ঘুড়িটা তূর্যই তৈরি করেছিল। নিজ হাতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×