somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকট:প্রতিভা সন্ধানের কোন আয়োজনেই নেই সমন্বয়

১৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো ছবি মুক্তি পাচ্ছে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে। পাশাপাশি নতুন নতুন মুখের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন নির্মাতারা। নিত্য নতুন প্রোডাকশন হাউসের ব্যানারে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ছবির মহরত হচ্ছে এফডিসি পাড়ায়। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। প্রতি মাসেই নতুন ছবির মাধ্যমে কোনো না কোনো নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটলেও এ পর্যন্তই শেষ। কোনো কোনো নতুন মুখের আবার ছবির মহরতের পর আর দেখাই মিলে না। কারও কারও চেহারা অবশ্য প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত গড়ায়। যাদের কপালে সিনেমা হলের পর্দা পর্যন্ত যাওয়ার সৌভাগ্য হয় তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিনয়ে পূর্ব কোনো প্রস্তুতি কিংবা নায়োকোচিত চেহারা ও আচরণ নেই। ফলে দর্শক গ্রহণযোগ্যতার অভাবে এক-দুটি সিনেমার পরই হারিয়ে যান তারা। তাই দিন শেষে শাকিব খান আর অপু বিশ্বাসেই নির্ভরতা খুঁজে ফিরেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, শাকিব-অপুর বাইরে এ মুহূর্তে ঢাকাই চলচ্চিত্রে নির্ভরশীল অভিনেত্রী ক’জন খুঁজে পাওয়া যাবে? যাদের ওপর ভর করে অনায়াসেই দু’চার বছর নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেয়া যায়। সবাই হয়তো চোখ বন্ধ করে খোঁজার চেষ্টা করতে থাকবেন। কিন্তু শেষ অব্দি কারও নাম খুঁজে পাবেন না। ‘জেনারেশন গ্যাপ’ বলে একটি শব্দ আছে ইংরেজি ডিকশনারিতে। এটি যদি কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে আশ্রয় করে নেয় তাহলে সে গোষ্ঠীর পরবর্তীকালের সদস্যরা দিকভ্রান্ত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। আমাদের চলচ্চিত্র পাড়ায়ও সেই জেনারেশন গ্যাপ শব্দটি তীব্রভাবে ঝেঁকে বসেছে।


দেশ স্বাধীনের আগে কিংবা পরে ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পে ধারাবাহিকভাবে কবরী, শাবানা, সুচন্দা, ববিতা, সুচরিতা, অঞ্জনা কিংবা চম্পাদের নিয়ে যে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছিল, নব্বই দশকের পর সেটা ধরে রেখেছিলেন দিতি, মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমারা। পরবর্তী সময়ে অনেক নায়িকার পদভারে মুখরিত হয়েছিল চলচ্চিত্রাঙ্গন। কিন্তু নির্ভর করার মতো একজন অভিনেত্রীও আসেনি আর। নানা কারণে বা প্রয়োজনের তাগিদে অনেকে নতুন শিল্পী নিয়ে ছবি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই বস্তাপচা নায়িকা খেতাব পেলেও আদতে শিল্পী হতে পারেনি কখনই। তাই পরবর্তীকালে এ সস্তা নায়িকার তকমা গায়ে জড়িয়েই কিছুদিন ঘুরে এ অঙ্গন থেকে হারিয়ে গেছেন কথিত সেই নায়িকারা। কিছুদিন আগেও জনপ্রিয় নায়িকার কাতারে ছিলেন মৌসুমী, শাবনূর, পপি ও পূর্ণিমা। তাদের মধ্যে সিনিয়র হিসেবে মৌসুমী ও পপি এখনও কাজ করলেও শাবনূর ও পূর্ণিমা পর্দায় নেই। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন, এ ক’জন সরে দাঁড়ানোর পর তাদের জায়াগায় দাঁড়ানোর মতো আর কেউ এসেছে কি ইন্ডাস্ট্রিতে? যারা আছেন তাদের মধ্যে নির্ভরশীলতার বালাইও নেই। যা আছে তার সবই তথাকথিত ‘নায়িকা’ খেতাব পাওয়া। শাবনূর ও পূর্ণিমা অভিনয় থেকে সরে এলেও একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে একমাত্র মৌসুমীই কাজ করছেন নিয়মিত। আগাগোড়া শিল্পীসুলভ সত্তা তার মধ্যে এখনও বিরাজমান। তবে পপিকে অনিয়মিতভাবে মাঝে মাঝে দেখা গেলেও তার শিল্পীসুলভ সত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বেড়ান অনেকেই।

চলচ্চিত্রে বর্তমান প্রজন্মের নায়িকা খেতাবপ্রাপ্ত তারকাদের দিকে তাকালে বিদ্যা সিনহা মিম, পরীমনি, মাহিয়া মাহি, ববি, আঁচল, আইরিন ও নুসরাত ফারিয়ার মতো বেশ কয়েকজনের নাম উঠে আসে। এদের মধ্যে মাহি, আঁচল, ববি ও আইরিনকে কিছুটা নিয়মিত কাজ করতে দেখা গেলেও বাকিগুলোর ক্ষেত্রে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হওয়ার মতো বিষয়। ফলে নায়িকা তকমা পাওয়া এদের ওপর কোনো ভরসাই যেন করতে পারছেন না নির্মাতারা। কারণ হিসেবে সবাই বলছেন, হুট করে তারকা পরিচিতি পাওয়ায় এদের মধ্যে নায়িকাসুলভ কোনো আচরণই নেই। সিনেমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিল্পীসুলভ আচরণ এদের মধ্যে না থাকায় দু’একটি ছবি মুক্তির পর তাদের চলন-বলনে এতটাই পরিবর্তন এসেছে যে, শিল্পী হিসেবে তাদের মূল্যায়ন করতে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে দর্শকদের। প্রয়োজনের তাগিদে তাদের নিয়ে হয়তো অনেক নির্মাতা-প্রযোজক কাজ করছেন, কিন্তু লগ্নিকৃত অর্থের কতটা তারা ফিরে পাচ্ছেন সেটিই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান চলচ্চিত্রে নায়কদের নিয়েও রয়েছে আস্থার সংকট। রাজ্জাক, সোহেল রানা, আলমগীর, ফারুক, জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চনদের ওপর যে আস্থা রাখা যেত, সেই আস্থার ধারাবাহিকতা পরবর্তী সময়েও কিছুটা বজায় ছিল। যেমন সালমান শাহ। একজন আগাগোড়া শিল্পী হয়েই জন্মেছিলেন তিনি। তাই ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনটি বছর শিল্পী হিসেবে নির্মাতাদের আস্থার পুরোটাই ছিল তার দখলে। তার অকাল মৃত্যুর পর মান্না, আমিন খান, ওমর সানি, রিয়াজ, শাকিল খান, অমিত হাসান এবং পরবর্তীকালে ফেরদৌস, শাকিব খানের ওপরও নির্মাতাদের আস্থা ছিল। কিন্তু এদের পরে কার ওপর আস্থা রাখবেন নির্মাতারা? প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে যেন একাই টেনে নিয়ে চলেছেন শাকিব খান। যদিও তার শিল্পীসত্তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেন। তবুও তো এ তারকার ওপর আমাদের নির্মাতাদের একটা ভরসা তৈরি হয়েছে। একা একা আর কতটা টেনে নেবেন তিনি? এমন প্রশ্নও কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই আগের মতো আর কাজে জৌলুস খুঁজে পাচ্ছেন না শাকিব খান। ইদানীং যেন প্রয়োজনের তাগিদে কাজ করা হচ্ছে তার। শাকিবের পরে বর্তমানে ইমন, নিরব, কায়েস আরজু, বাপ্পি সাহা, সায়মন সাদিক, শাহরিয়াজ, আরফিন শুভ কাজ করছেন ঠিকই, কারও মধ্যেই ইন্ডাস্ট্রি টেনে নেয়ার ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে আরেফিন শুভকে নিয়ে কিছুটা আস্থা তৈরির লক্ষণ দেখা গেলেও মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ব্যর্থতায় সেটাও বিফলে গেল। অভিনয়ে দক্ষ হলেও ইন্ডাস্ট্রিতে নির্ভরশীলতা তৈরি করতে পারেননি শুভ। চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন মুখ খোঁজার অভিযানে নামা হয়েছে বহুবার। অনেক সময় ব্যক্তিগতভাবেও প্রযোজক-পরিচালকরা নতুন মুখের আগমন ঘটিয়েছেন। কিন্তু এ কার্যক্রমগুলো সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাবে কোনো ফলই দেয়নি ইন্ডাস্ট্রিকে।

শিল্পী সংকট কাটাতে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ নামে একটি প্রতিভা খোঁজার কার্যক্রমের প্রচলন থাকলেও বর্তমানে এটি একটি কর্মশক্তিহীন প্রকল্প। এ ছাড়াও বছর পাঁচেক আগে ‘সুপার হিরো-সুপার হিরোইন’ নামে একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখান থেকেও নির্ভরশীল কোনো শিল্পী বের হয়ে আসেনি। চলচ্চিত্রের শিল্পী সংকট কাটাতে বর্তমানে নায়ক অনন্ত জলিলের উদ্যোগে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতার কার্যক্রম চলছে। সুষ্ঠু সমন্বয় না থাকায় অনন্তের এ প্রকল্প চলচ্চিত্রের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×