তখন পড়ন্ত বেলা। মেঘমুক্ত সুনীল আকাশ। স্বর্ণালী আলোর লোকোচুরি চার দিকে। স্বচ্ছ নির্মল, আদিগন্ত বিস্তৃত সেই ছাদের নিচে পায়চারি করছি। হৃদয়তন্ত্রীতে তখন এক বিস্তৃত বেদনার মুর্ছনা মুহুর্মুহু আসা-যাওয়া করছিল। কল্পনার সুবিশাল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। ঠিক তখন মোবাইলটা বেজে উঠে। রিসিভ করি। অপরিচিত নম্বর হলেও বলতে হয় না, কে? মেয়েটার নুপুর ধ্বনি তার মায়াবি কণ্ঠ মনে করিয়ে দেয় সব। দুই বছর আগে মারুফার সাথে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন ট্রাজেডিগুলো একে একে দানা বাঁধতে থাকে। হারিয়ে যাই কল্পনার জীবন্ত ঘাসে। কিন্তু ভেবে পাই না। কেন এই ফোন? কিসের টানে। কোন মোহ তাকে বাধ্য করেছে দূরালাপনীর দিকে? দুই বছর আগে সে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, তোমাকে ভুলে যেতে চাই। চিরতরে। তুমিও ভুলে যাও। আমার ত্রিসীমানায় তোমার ছায়া মাড়ানো আমি দেখতে চাই না। তোমাকে প্রচণ্ড ঘৃণা করি আমি। এত কিছুর পরও তার একটা ফোন। তার সুরেলা সরু হৃদয় গহীনে সৌরভ ছড়ায়। বসন্তের উতল হাওয়া অনুভব করি। বিলীন হয়ে যাওয়া সবুজ শ্যামল দুর্বাঘাসগুলি যেন জাগতে শুরু করে। কিন্তু সেটাই বা হয়ে উঠে কৈ? যেমন সহজে ধরা দিয়েছিল, চলেও গেল সহজে। আগের মত আবারও মাসকে মাস চলে যায়। কেন, কি অভিমানে তাকে পেয়েও ধরতে পারি না? বিবর্ণ, বিস্বাদ এই যোগাযোগহীন সময়ে তার অপেক্ষায় থাকি দিন রাত। ফোন কলের অপেক্ষা করি। সবই অধরায় থেকে যায়। হৃদয়ের নীলাকাশে নিভু নিভু প্রদীপ নিষ্প্রভ হয়। নিশুতির অন্ধকার বিস্তার করে মনোজগৎ। মস্তিস্কের চারপাশে একটা প্রশ্ন তাই ঘোরপাক খায়। বিরহ যন্ত্রণার নিভুনিভু প্রদীপ তেজোদ্বীপ্ত করতেই কি অকস্মাৎ তোমার ফোন?
বি.দ্র. আমার জীবনের একটা বাস্তব ঘটনা। ৩ বছর আগে দৈনিক ইত্তেফাকের 'পাঠকবন্ধু' পাতার জন্য লিখেছিলাম। সেইবারের বিশেষ সংখ্যায় এ লেখাটি পুরস্কৃত হয়। একটা টি সার্ট পাই। যদিও সেটা নামকাওয়াস্তেই। লেখাটা পড়ে আমার এক স্যার তাৎক্ষনিক ২০ টাকা পুরস্কার দেন। আজ লেখাটা মেইলে খুজে পেলাম...
মেয়েটার বাড়ি আমাদের বাড়ির তিন গ্রাম পর। তবে উত্তরদিকে হ্ওয়াই কখনো ওইদিকে যাওয়া পড়ে না। তার জন্য এতটাই পাগল ছিলাম এক সময়, যা বলার মতো নয়। লিখতে বসে এখন কান্না পাচ্ছে। সে কোথায় আছে কেমন আছে কিছুই জানি না। সম্ভবত বিয়ে হয়ে গেছে। বাচ্চাও হওয়ার কথা এতদিনে। শেরপুর মহিলা কলেজে ভর্তি হয়েছে শুনে একবার তো দেখা করতে গিয়েছিলাম কোনো পরিচয় ছাড়াই। অথচ পুরুষদের তখন সেখানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিল। ভাগ্যিস হল বন্ধ ছিল। কেয়ারটেকারের সাথে মিথ্যা আলাপে চলে এসেছি। এখনো চাতক পাখির মতো তার ফোনকলের অপেক্ষা করি... কেন করি, পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




