গত বুধবারে দর্পণ সাহেব খুব ব্যস্ত কাজে নিজ বাসভবন থেকে দ্রুত গতিতে সাইকেল চালিয়ে গন্তব্য স্থানে ছুটে যাচ্ছিলেন। দর্পণ সাহেব মহাসড়কের রাস্তা না গিয়ে বুদ্ধি এটে বিকল্প রাস্তায় সাইকেল প্রবেশ করালেন। দর্পণ সাহেবের গন্তব্য ছিল ব্রীজের রাস্তা ধরে হাইকোর্ট মোড়ে পৌছানো। ওই রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে দুটো মোড়ের অগ্নিপরীক্ষায় অংশ নিতে হয় কিন্তু এসব পরীক্ষা সমীক্ষায় অংশ নেয়া দর্পণ সাহেব পছন্দ করেন না। তাই উনি বাইপাস সড়কের উপর নির্ভরশীল হলেন! বাইপাস সড়কে প্রবেশ করতেই দর্পণ সাহেব দেখলেন রাস্তায় অসংখ্য রিক্সা, ভ্যান, সাইকেল, ইজিবাইক একে অপরকে ওভারটেক করায় ব্যস্ত হয়ে পরে! এটা দেখে দর্পণ সাহেবের কৈশোরের বাস জার্নির কথা মনে পরে গেল! তিনি দেখেছিলেন মহাসড়কে বাস গুলা কিভাবে ট্রাক এবং সমগোত্রীয় বাসকে ওভারটেক করেছিল! তাই তিনিও আবেগে আপ্লুত হয়ে ওভারটেক করার প্রতিযোগিতায় নেমে পরলেন! তিনি নিজের সাইকেলের প্যাডেলে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে সাইকেলের গতি বাড়ালেন! মুহূর্তেই গতি ১৭কি.মি প্রতি ঘন্টায় পৌছে গেল! তিনি নিজেকে পাইলট হায়দার(বরিশালের সাকুরা পরিবহনের দক্ষ ড্রাইভার যাকে আজ পর্যন্ত কেউ মহাসড়কে ওভারটেক করতে পারে নি) ভাবতে শুরু করলেন! মুহূর্তেই দর্পণ সাহেব রাইট সাইড আর ভুল দিক দিয়ে গণহারে ওভারটেক করা শুরু করলেন! এক পর্যায়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সাকে ওভারটেক করার জন্য দর্পণ সাহেব উঠে পরে লাগলেন! এমনকি সাইকেল নিয়ে বাউলি মারাও শুরু করলেন! কিন্তু রিক্সাচালক কিছুতেই সাইড দিবে না! তাই দর্পণ সাহেব স্পিড ব্রেকারের ফায়দা নিয়ে রিক্সার বাম সাইড দিয়ে ঝড়ের বেগে চলে গেলেন!! ব্যাটারিচালিত রিক্সাকে অভারটেক করার পর দর্পণ সাহেব রাস্তার উঠবেন এমন সময় কোত্থেকে এক তরুণী মুরগী রাস্তায় উঠে এল! তরুণী মুরগীকে বাঁচাতে তিনি সজোরে ব্রেক কশলেন কিন্তু তখনই দর্পণ সাহেবের মনে পরে যে উনার সাইকেলের ব্রেকই নেই!!! বামপাশের ব্রেকের নাট হারিয়ে গেছে আর ডানপাশের ব্রেক জ্যাম হয়ে গিয়েছে! তারপর দর্পণ সাহেব আপ্রাণ চেষ্টা করে মরিয়া হয়ে উঠলেন তরুণী মুরগীর প্রাণ বাঁচাতে কিন্তু তার সকল চেষ্টাই জলে গেল! ২১কি.মি প্রতিঘন্টা গতির সাইকেলকে ব্রেক ছাড়া অন্যকিছু যেমন পা দিয়ে থামানো অসম্ভব! তারপর জোর গলায় "ওই ওই ওই মুরগী হুট হাট হা হা...." বলে মুরগীকে সচেতন করলেন! তারপর মুরগী দর্পণ সাহেবের হুংকারে ঘুরে দাড়ায়! দর্পণ সাহেব সাইকেলের গতি আরও বাড়িতে দেন যাতে তরুণী মুরগীর কোন ক্ষতি না হয়। এরপর পায়ে জোর খাটিয়ে প্যাডেল মারতে থাকেন কিন্তু হঠাৎই তরুণী মুরগীর কোমল ত্বক দর্পণ সাহেবের বামপায়ে আঘাত করে!! এতে তরুণী মুরগী ভয় পেয়ে "কক কক কক কক কক কক...." আর্তনাদ করে উঠে! দর্পণ সাহেব তৎক্ষণাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখেন তরুণী মুরগী <360 ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে!!! দর্পণ সাহেব এরপর আর খবরও নিলেন না যে তরুণী মুরগি জীবিত ছিল কি মৃত!!!! কারণ উনার মন বলছিল, "চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা...!" তারপরের রাস্তাগুলোও তিনি সাইকেলের গতি কখনও সর্বোচ্চ ৪কি.মি এর বেশি উঠান নি!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:১৭