somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বগৌরবে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

১৮ ই অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে পুরান ঢাকার গৌরব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সুদীর্ঘ ১৪২ বছর ধরে জ্ঞানের দ্যুাতি ছড়িয়ে চলছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। মেধাবীদের দীপ্ত পদভারে মুখরিত এ শিক্ষাঙ্গনটি। জাতীয় রাজনীতির প্রবল প্রভাবকের ভুমিকা রেখে আসছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিক স্বাধীনতা যুদ্ধে নাম না জানা আরও অনেকে শহীদ হন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ মোজাম্মেল হক, ইসলামী শাসন কায়েমের স্বপ্নবাজ শহীদ ফয়সালের সুরোভিত পদধুলিতে গৌরবান্বিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। মননশীল মেধাবীদের শীর্ষতম পছন্দের বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ফিরে দেখা ঃ
১৪২ বছর পূর্বে জগন্নাথ স্কুল নামে ১৮৬৮ সালে এর পথ চলা শুরু হয়। এর পরে ১৮৮৪ সালে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ নামে এর রূপান্তর ঘটে। উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান কলেজে পরিনত হয় ঢাকা জগন্নাথ কলেজ। ১৮৮৭ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে স্কুল শাখা পৃথক হয়ে যায়। ১৯২০ সালে ওহফরধহ ষবমরংষধঃরাব পড়ঁহপরষ “ঔধমধহহধঃয পড়ষষবমব ধপঃ” আইন পাশ করে নথিভুক্ত করে। ১৯২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অবসান ঘটে এবং এ্যাক্ট ১৬, ১৯২০ এর আওতায় জগন্নাথ কলেজের সমস্ত সম্পত্তি, দায়-দেনার ভার স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যাস্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কলেজটিতে স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি জগন্নাথ ইন্টামেডিয়েট কলেজ নামে প্রতিষ্ঠা পায়। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে পুনরায় স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজ সরকারি করা হয়। ১৯৭৫ সালে এখানে সম্মান এ স্নাতকের পাঠ্যক্রম চালু হয়। পরে এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯৮২ উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি জগন্নাথ কলেজের কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ২০০৫ সালের ২৮ নং আইনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী সরকারি জগন্নাথ কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয় এবং ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

সর্বশেষ অবস্থা ঃ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১১.১১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। চারটি অনুষদের মাধ্যমে আটাশটি বিভাগে প্রায় ২৪০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তিনশতাধিক শিক্ষক পাঠদানেরত।

যেসব বিষয়ে পাঠদান করা হয়ঃ
বিজ্ঞান অনুষদ ঃ পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, প্রাণি বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, গণিত, ভূগোল ও পরিবেশ, মনোবিজ্ঞান, ফার্মেসি, মাইক্রো বায়োলজি এন্ড বায়োটেকনোলজি ও কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ ঃ হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিভাগ।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ঃ রাষ্ট্র বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, সমাজ কর্ম, নৃ-বিজ্ঞান এবং গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।
কলা অনুষদ ঃ বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন ও আইন বিভাগ।
উপযুক্ত চারটি অনুষদে আটাশটি বিভাগে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ২৬৩৫ টি।

যা কিছু আছে ঃ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার রয়েছে। মেডিকেল সেন্টার, আধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তন কেন্দ্র, একটি ক্যান্টিন আছে। এখানে সাংবাদিক সমিতি, বি,এন.সি.সি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জার ইউনিট, বাঁধন ইউনিট, পরিবহন সুবিধা, মসজিদ এবং ছাত্রীদের জন্য কমন রুম রয়েছে। ক্যাম্পাস থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি খেলার মাঠ রয়েছে। তবে যা কিছু আছে তা সবই প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল।

যা দরকার ঃ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বৈশিষ্ট হল থাকা অথচ হলই নেই। কর্তৃপক্ষ বলে বেড়াচ্ছে এটি একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রচলিত আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ টি হল রয়েছে তবে কাগজ পত্রে ৬ টি হলের মালিকানা কর্তৃপক্ষের কাছে আছে কিন্তু তা বেদখল। কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার নেক-নজর দিলেই তবে হলগুলো দখলমুক্ত হতে পারে। অন্যথায় ভবিতব্যই ভালো জানে হলের খবর। অন্যদিকে ছোট ক্যাম্পাস শিক্ষার্থী বেশি, ফটক একটি খোলা অপর দক্ষিণমুখী ফটকটি নির্মাণ শেষ হলেও মনে হচ্ছে বন্ধত্বের অমরত্ব লাভ করছে ফটকটি। শেষ অবধি দূর্ভোগ তিলকটি শিক্ষার্থীদের তাকদিরের লিখন হিসেবেই লেগে আছে এখনও।

ছাত্র রাজনীতি ঃ

ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষমতাশীল দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগই এককভাবে সক্রিয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে নিস্ক্রিয়।তবে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেই তাদের সাভাবিক কাজ চালিয়ে যাছে।ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির ক্ষমতাশীল দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের অগনতান্ত্রিক ও বাকশালী এবং পরমত সহিষ্ণুতার অভাবের কারণে ক্যাম্পাসে নিস্ক্রিয় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।

প্রত্যাশা ঃ
আছে, নেই এর মাঝেও অপার সম্ভাবনার তরী বেয়ে এগিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। হলসহ যাবতীয় অপ্রাপ্তির অবসান আশু হতে যাচ্ছে। নিরন্তর ও নিবিড় প্রচেষ্টা আন্তরিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। আলো আসছে এবং আলো আসবেই! এই ই প্রতীতি।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×