বস্তুত ইসলাম এক সৌন্দর্য মন্ডিত জীবন বিধান। মানুষের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের উদ্দেশ্যে তা নাযিল করা হয়েছে। এ বিধানে যদি কোন জিনিস হারাম ঘোষিত হয়ে থাকে, তবে তার পরিবর্তে কোন উৎকৃষ্টতর জিনিসকে হালাল করে দেয়া হয়েছে। অতীব উত্তম বিকল্প পেশ করা হয়েছে। সে বিকল্প এমনি যে, তার দ্বারা একদিকে যেমন সমস্ত বিপর্যয় সৃষ্টিকারী জিনিসের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় তেমনি অপর দিকে হারাম জিনিসের প্রতি মুখাপেক্ষিতা বা তার উপর নির্ভরশীলতা নিঃশেষ হয়ে যায়। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (র.) এদিকে ইঙ্গিত করে বলেছেনঃ
ইসলাম পাশা খেলার মাধ্যমে ভাগ্য জানাকে হারাম করে দিয়েছে। তার পরিবর্তে ইস্তেখারার দোয়ার ব্যবস্থা করেছে। (ইসলাম মুসলমানদের শিখিয়েছে যে, কোন কাজ করার পূর্বে সে যেন পরামর্শ করে এবং ইস্তেখারা করে। " যে ইস্তেখারা করে সে ব্যর্থ হয় না এবং যে পরামর্শ করে, সে লজ্জিত হয় না। ইস্তেখারার অর্থ, যে দুটি ব্যাপার নিয়ে দ্বন্দ্ব- কোনটা করবে, সে যেন এ দুটির মধ্যে যেটি উত্তম সেটির সন্ধান পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে। এজন্য ইস্তেখারার নামায ও দোয়া মাছুরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।)
ইসলাম সুদ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছে। তার পরিবর্তে মুনাফাপূর্ণ ব্যবসা বৈধ করেছে।
জুয়া হারাম করেছে, তার পরিবর্তে ঘোড়া, উস্ট্র ও তীরের সেসব প্রতিযোগিতা লব্ধ ধনমাল গ্রহণ জায়েজ করেছে, যা শরীয়তের পরিপন্থী নয়।
পুরুষদের প্রতি রেশম ব্যবহার হারাম করা হয়েছে। তার পরিবর্তে সূতা, পশম, কাতানের বিভিন্ন সোন্দর্যময় পোষাক বৈধ করেছে।
জ্বিনা-ব্যভিচার ও পুংমৈথুন হারাম করেছে। তার পরিবর্তে বিবাহিতা স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম বৈধ করেছে।
মাদক দ্রব্য হারাম করা হয়েছে। তার পরিবর্তে দেহ ও মনের জন্য উপকারী সুস্বাদু পানীয় হালাল করা হয়েছে।
খারাপ ও নিকৃষ্ট ধরনের খাদ্য হারাম করেছে। তার পরিবর্তে উত্তম উৎকৃষ্ট ও ভাল-ভাল খাদ্য হালাল করেছে।
এভাবে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধানের পর্যালোচনা করা হলেপ্রমানিত হবে যে, আল্লাহ তায়ালা যদি একদিকে মানুষের জীবনে কোন কোন জিনিসকে হারাম করে সংকীর্ণ করে থাকেন তাহলে অপর দিকে বহু জিনিসকে হালাল করে জীবনকে বিপুল প্রশস্ততা ও উদারতা এনে দিয়েছেন। এক দিকের দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছেন বটে, কিন্তু অপর দিকের দ্বার উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। কেননা আর।রাহ তায়ালা মানব জীবনকে কোন দুরূহ কষ্ট ও কৃচ্ছ্রতার মধ্যে ফেলে দিতে চাননি। তাদের জন্য স্বাচ্ছন্দই তাঁর কাম্য। তিনি মানুষের জীবনকে কল্যাণ, নির্ভুল হেদায়াত ও রহমতে কানায় কানায় ভরে দিতে চেয়েছেন। আল্লাহ নিজেই জানিয়ে দিতে চেয়েছেনঃ
আল্লাহ চান যে, তিনি তোমাদের কাছে তাঁর আইন বিধান সুস্পষ্ট করে বলে দেবেন। তোমাদের জানিয়ে দেবেন অতীত হয়ে যাওয়া লোকদের হেদায়াতের নিয়ম ও পন্থাসমূহ। তিনি স্বীয় রহমত সহকারে তোমাদের প্রতি উম্মুখ। তিনি জ্ঞানী ও বিজ্ঞ। আল্লাহ তো তোমাদের প্রতি রহমতের আচরণ করতে চান, কিন্তু যারা নিজেদের কামনা-বাসনা-লালসার অনুসরণ করে চলেছে, তারা তোমাদের সত্যপথ থেকে বহুদূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে দুর্বহ বোঝা লাঘব করতে চান। কেননা মানুষকে অনেক দুর্বল করে পয়দা করা হয়েছে। সুরা নিসাঃ (২৬-২৮)
...........................................................................লেখাটি লেখকের 'ইসলামে হালাল হারামের বিধান' বইটি থেকে নেয়া হয়েছে।
আল্লামা কারযাভীকে জানতে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



