somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিতে নাট্যজন আতিকুল হক চৌধুরী

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৬-২০১৩ এই দীর্ঘ সময় নাট্যজন আতিকুল হক চৌধুরী ,আতিক স্যারের সাথে একুশে টেলিভিশনে কাজ করার দুর্লভ সুযোগ ঘটেছিল । কাজের বাইরেও তার সাথে রয়েছে নানান স্মৃতি । বিভিন্ন সময় তিনি কাজ ছাড়াও তার রুমে ডেকে নিয়ে গেছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা নানান বিষয় কথা বলেছেন, সেই সব বিষয়ের উপর জানতে চেয়েছেন আমার অভিমত ।
আমি বসতাম তার রুমের পাশে একটি ডেস্কে । তাই স্যার প্রায় সময় আমাকে ডাকতেন তার সদ্য লেখার খসড়া পড়ে শোনানোর জন্য এবং খটোমটো কিছু বাংলা বানান সঠিকভাবে লিখেছেন কিনা তা কনফার্ম হবার জন্য । এ ক্ষেত্রে অঞ্জন দা তাকে প্রায় বাংলা বানান ঠিক করে দিতেন ।তার রুমের পাশেই আমার ডেস্ক হওয়ায় প্রতিদিনই তার রুমে আমার ডাক পড়তো ।রনি ,কিংকর্তব্যবিমুঢ় বানানটা কি ?
এইটা কি এক শব্দ?
এই রকম হাজার হাজার বানান বা একশব্দ কিনা জানতে চাইতেন । আমার বাংলা বানানের অবস্থা খুব ভালো না । স্যারের প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে আমাকে শেষ পর্যন্ত অফিসে বাংলা একাডেমির একটা অভিধান কিনে আনতে হয়েছিলো।
একুশে টিভিতে স্যারের সবচেয়ে প্রিয়পাত্র ছিলেন মেহেমুদ খোকন। তিনি ছিলেন স্যারের সব কাজের সংগী , স্যার তাকে অসম্ভব ভালবাসতেন।
একটা সময় মেহেমুদকে স্যার ডেকে পাঠালে আমরা ভয়ে থাকতাম । কারন আমরা নিশ্চিত ছিলাম মেহেমুদ রুম থেকে বের হয়ে আমাদের কাউকে না কাউকে মেমো দিবেন । এই সময়টাতে মেহেমুদের নাম মেমো মেহেমুদ হয়ে গিয়েছিল।
স্যার শত কাজের মাঝেও আনন্দ পছন্দ করতেন। আমরা যখনি কোন জন্মদিন, বিদায় অনুস্টান ,খেলা কিম্বা হৈ চৈ করেছি স্যার আমাদের সাথে অংশ নিতেন । তিনি নিজে যেমন সব সময় হাসিমুখ থাকতেন , তেমনি আমদের গোমড়া মুখ পছন্দ করতেন না। কাউকে গোমড়া দেখলে হাসির কথা বলে মন ভাল করে দিতেন।
স্যারের সাথে দীর্ঘ সময় কাজ করার মধ্য দিয়ে খুব কাছ থেকে তাকে যেমন হাসি খুশি ,প্রানবন্ত দেখেছি, তেমনি কখনো কখনো তাকে দুরগ্রহের মানুষ মনে হয়েছে । এর কারন তিনি মাঝে মাঝে নিজেকে সব কিছু থেকে দুরে সরিয়ে নিতেন ! তখন তাকে আপন মনে হতো না ।
স্যারের সাথে অনেক ভাল সম্পর্ক ছিল । কেউ কেউ এই সম্পর্ককে বিষিয়ে তোলার চেস্টাও করেছেন । কিন্তু কেউ তাতে সফলকাম হতে পারে্ননি ।
স্যার মাঝে মাঝে এই নিয়ে আক্ষেপ করে বলতেন, " রনি , তুমি তোমার কাজ করে যাও । যারা কোন কাজ করে না, তারাই পরের খুঁত খুঁজে বেড়ায়, তোমার কাজই ওদের বিরুদ্ধে জবাব দিবে ।"
একটা সময় আমাদের ফ্লোরে নানান উপলক্ষে সাপ্তাহের ৭ দিনই ছিল উৎসবমুখর আর খাবার-দাবারের আয়োজনে ভরপুর । স্যার জানতেন আমি মিস্টি খুব পছন্দ করি। তিনি যেহেতু ডায়াবেটিসের পেশেন্ট ছিলেন ,তাই নিজের ভাগের মিস্টি সব সময় আমাকে তুলে দিতেন ।
স্নেহ-ভালবাসা যেমন পেয়েছি, তেমনি ভুল-টুল হলে ক্ষমা করেননি ।
তার অনেক বিষয়ে আমার দ্বিমত ছিল। অকপটে বলতাম,তিনি শুনতেন ।কিন্তু কিছু বলতেন না,চুপ মেরে যেতেন । এই নিয়ে আমার বা আমাদের অনেকেরই তার উপর অভিমানো ছিল !
বলতে দ্বিধা নেই ,স্যারের কিছু বিষয় নিয়ে শুরুর দিকে আমি ও সুমনা আপা চরম বিরক্ত হয়েছিলাম । বিশেষতঃ একুশে দুপুরের স্ক্রীপ্ট নিয়ে তার অযাচিত মাথাব্যাথার জন্য ! আমাদের জিএম আমিনুল ইসলাম খোকন ভাই স্যারকে বুঝিয়েছিলেন ,ডেইলি লাইভ প্রোগ্রামের স্ক্রীপ্ট অনুস্টানের ২/৪ মিনিট আগে বারবার চেঞ্জ করা ঠিক হবে না । সেটা তিনি পরে বুঝতে পেরেছিলেন বলে স্যার আর কোনদিন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন নি।
স্যারের সাথে এত স্মৃতি, কোনটা রেখে কোনটা বলব । এক কথায় লিখেও শেষ করা যাবে না ।
তবে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ২০১৩ সালের ১৭ই জুন । তখন আমি ও একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান স্যার মাত্র একদিন আগে জার্মানি্র বনে গিয়েছি "গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে" যোগ দিতে । আমরা দেশ ছাড়ার কয়েক ঘন্টা পরে আতিক স্যার মারা গেলেন । এই সংবাদটি জানলাম জার্মান পৌঁছে । চেয়ারম্যান স্যারের কাছে দেশ থেকে নিউজটি এসেছিলো ।
সুদুর বিদেশ বসে সেদিন কি যে মন খারাপ হল আমাদের ! চেয়ারম্যান স্যার একটা অধিবেশনে কীনোট পড়লেন ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ।
আর আমার আফসোস শেষ দেখাটা হল না স্যারের সাথে ।
আজ নাট্যব্যক্তিত্ব আতিকুল হক চৌধুরীর জন্মদিন । স্যার , যেখানে থাকুন ভালো থাকুন ,শুভ জন্মদিন স্যার ।

বি: দ্র : এই এ্যালবামে স্যারের সাথে বিভিন্ন সময় একুশে টিভিতে তোলা ছবি। ২০০৭-২০১৩ ।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×