সকাল হয়েছে নিলয় এর মা প্রতিদিনের মতো আজো সবার দরজাই গিয়ে টুক , টুক শব্দ করে নাস্তা করতে সবাইকে ডাকছে । সবাই বলতে তাদের আছে সাজানো সুন্দর একটি সংসার । নিলয় আর তার এক ভাই এক বোন বাবা মা ।
নাস্তার টেবিলে তাদের বাবার প্রথম একটাই কথা থাকে কেমন আছেন আপনারা । এর মানে বাকিরা তাদের সমস্যা থাকলে জানাবে তখনি ।সেই টেবিলে নিলয় এর সমস্যার কথা শুনা যাই সব ছেয়ে বেশী ।
আজ যেটি হলো , বাবা জামা কিনবো কিছু টাকা দিতে হবে ।
নিলয় তাদের ছোট ছেলে । ওর কথা শুনে পাশে বসে থাকা দু ভাই বোন চোখ উলটিয়ে একবার ওর দিকে তাকাল । নিলয়র বাবা বল্লো ওকে ৫০০ টাকা নিয়ে যাস ।আর কারো কোনো সমস্যা ??
বাকি দুভাই বোন কিছুই বল্লোনা কিন্তু কেনো তারা কি তাদের সমস্যা একেবারে জানাতে চায় । সেটাইবা কি ??
নিলয়ের বয়স ২৩
বড়ো ভাই ২৮
বড়ো বোন২৫
নাস্তা শেষে যে যার কাজে ছুটছে
কাধে ঝুলন্ত ব্যাগ ,মাথাই ক্যাপ ,চোখে কালো একটি সানগ্লাস পরে নিলয় প্রতিদিনের মতো একি সাজে বাসা থেকে বের হলো ।
এমন সাজে নিলয় কোথাই যাবে সেই জানে । নিলয়ের হাটার অভ্যাসটা বেশী । শুধু যে হাটা তানা হাটার সময় অনেক কিছু ভাবে আর খুঁজে ।
সব সময় কিছু একটা যে নিলয়ের মাঝে ঘুর পাক খায়ই তা নিলয়কে দেখেই বুঝার উপাই । পরিবারে সবাই জানলেও কেও তার কাছে প্রশ্ন রাখেনা । কারন সবাই জানে নিলয় তার মাঝে যে স্বপ্নই বাধুক সেটা কোনো মাইনাচ দিক হতে পারেনা ।
রাস্তার পাশ ঘেসে হাটতে হাটতে নিলয় লক্ষ করলো কিছুদূর ডাসবিনের পাশে একটা ছেলে কাঁধে ঝুলন্ত একটা বস্তা ঝুলিয়ে উবু হয়ে কি জেনো খুজছে আর বস্তায় ভরছে ।
নিলয় কিছুক্ষন চুপ করে সেই দৃশ্য দেখলো । আর ভাবলো আজ থেকেই শুরু করা যেতে পারে তার স্বপ্নের কাজ ।
নিলয় ছেলেটার পিছে গিয়ে গা ঘেসে দাড়ালো । নিলয় আরো লক্ষ করলো এই ডাসবিনের পাশে যে পথছারি হেটে যায় সবাই দ্রুত হেটে যায় ,নাকে হাত দিয়ে বা রুমাল দিয়ে নাক চেপে ।কিন্তু এই ছেলেটা এতো কিছু খেয়াল না রেখে সে তার কাজ চালিয়ে জাচ্ছে এক মনোযোগে।
নিলয় শান্ত গলায় বললো কি করছো?
ছেলেটা চমকে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে একবার তাকালো ।
কি নাম তোমার ?
এবার সম্পূর্ণ ভাবে সোজা হয়ে নিলয়ের দিকে দাঁড়িয়ে ছেলেটা বললো
মফিজ।
কে দিয়েছে তোমার নামটি ?
; শুনছি বাজান দিছে ।
; তিনি কোথায় ?
; বিড়ি খাইতে ,খাইতে মইরা গেছে ।
; হুমম , কি খুঁজছ এখানে ?
; মেলা কিছু (মফিজ নিলয়কে বস্তার মুখ খুলে একবার দেখাল )
; তোমার আর কে কে আছে ?
; মা আর ছুডো দুইডা বইন। ঐ যে ঐ বস্তিতে। ( হাত উঁচু করে নিলয়কে
তাদের থাকার যায়গাটা দেখিয়ে দেয় মফিজ )
; তুমি পড়া লেখা করনা?
; না।
নিলয় আর প্রশ্ন করেনি ,বুঝতে পেরেছে মফিজ কেন পড়ালেখা করেনা ।
; নিলয় আরো শান্ত গলাই বললো তুমি কি যাবে আমার সাথে?
মফিজ না সূচক মাথা নাড়ে ।
; কেন ?
; মা বকবো, কিছুদিন আগে আমার হমান একটা পুলারে পুলিশ ধরছে। সে নাকি কোন মাইনষের লগে গিয়া দুই নম্বরী করছে।
নিলয় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো চলো তোমার মার কাছে যাবো।
মহিলার কাছে যেতেই মহিলা নিলয়ের দিকে এক নজরে চেয়ে রইলেন
তোমারে কোথায় দেখছি কওতো বাব.......
মহিলা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, মনে পড়ছে ,মনে পড়ছে
ওইদিন রাস্তার মোড়ে আমি রিকশা পাইতেছিলামনা তুমি রিকশা থেকে নাইমা আমারে সেই রিকশা ধরাই দিয়া তুমি হাটা শুরু করছিলা।
নিলয়ের এত কিছু মনে থাকেনা । প্রতিদিন এমন দুই একটা ঘটনা তার জীবনে ঘটে। কয়টা মনে রাখা যায় ,তার পরও সে হা সূচক মাথা নাড়লো ।
তা বাব এখনে কেমনে,কি মনে কইরা?
খালা আমি মফিজরে নিয়ে যেতে চাই, ওকে পড়া লেখা শেখাবো যদি আপনি আপত্তি না করেন ।
খালার চোখ পানিতে ভেসে আসছে।
চোখের পানি মুছতে মুছতে খালা বললেন বাবারে আমার বড়ো পোলা যদি বাইচা থাকতো আইজ ঠিক তোমার হমান হইত ।
বড়ই সাধ ছিল পুলাডারে পড়া লেখা শিখামু কিন্তু তা আর হইল না।
আর এখন টেকার অভাবে এই পুলাডারেও শিখাইবার পারতেছিনা ।
তুমি রাজি হইছো আমি না করুম কেন , না করুমনা।
আমি চাই আমার এই পোলা তোমার মতো করে যেন মানুষ হইতে পারে, এই দোয়াই করুম ।
এই বলে খালা আবার কন্না ভেঙ্গে পড়লেন ।
নিলয় মফিজের মাকে তাদের বাসার ঠিকানা দিয়ে মফিজকে নিয়ে বেড়িয়ে এল। বিদায় বেলা মফিজের মা মফিজ আর নিলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে বিদায় দিলেন । মফিজের মার চোখে পানি থাকলেও
মফিজকে খুব আনন্দিত লাগছে।
দুপুরে নিলয়দের টেবিলের একটি চেয়ার খালি থাকে । নিলয়ের বাবা দুপুরে অফিসে থাকে বলে এই চেয়ার খালি থাকা ।
আজকের দৃশ্যটা অন্য ধরনের । নিলয় ঘরে এসে সোজা চলে এলো খাবার টেবিলে । বাবার খালি থাকা চেযারটিতে সে বসল আর তার চেয়ারে বসাল মফিজকে ।
নিলয় একবার উচ্চৈঃস্বরে সবাইকে ডাকল, কেউ কি খাবেনা নাকি
এদিকে আমি খিদায় মরছি
দুই রুম থেকে বেরিয়ে এলো নিলয়ের ভাই বোন তারা মফিজকে দেখেই রীতিমত হা । কালো একটা ছেলে চুল গুলা বেশ লম্বা মাথা থেকে তেল গড়িয়ে পড়ছে কপাল ঘাড়ে ।
মহিন নিলয়কে বলল, এই ছেলে কেড়ে ,
ও, ভাইয়া বসো বসো এ আমার বন্ধু । জেমিন অবাক হয়ে মফিজের দিকে একটু চোখ উল্টে , এই কে তুমি ??
ওনার বন্ধু ......... নিলয় সাথে সাথে হেসে দেয়
জেমিন মাকে ডাকতে লাগলে মা.........ও মা
মফিজকে পেয়ে নিলয়ের কাজ থেমে ছিল না । বরং কাজের প্রাণ বেড়েছে বলতে হয়। এদিকে তার পরিবার তার এত দিনের চিন্তা ভাবনা স্বপ্নের কথা ধরতে পেরেছে। সে পরিবার থেকে ভালোই সাহায্য পাচ্ছে ।
নিলয় দুই মাসের মধ্যে আরো চার জন ছেলে সংগ্রহ করে ।
টুকন , রকি, রবিন, জামাল
এদের মধ্যে টুকনকে কিনতে হয়েছে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে। অনেক দিন এই বৃদ্ধ লোকের পিছে ঘুরতে হয়েছে নিলয় কে অনেক বোঝাতে হয়েছে তাকে। শেষ মেষ লোকটি রাজি হয় টাকায় ।
যে টাকায় লোকটি টুকন কে এক মহিলার কাছ থেকে কিনেছিল, বৃদ্ধ লোকটির কথা ।
রবিন ফুল বিক্রি করত রাস্তায় হেটে হেটে।
পুরা একটা দিন নিলয়ও তার সাথে ফুল বিক্রি করে তাকে বুঝিয়ে সুনিয়ে নিয়ে আসে তার সাথে ।
জামাল ,এই ছুট্টো ছেলেটি ও নাকি টেম্পুর হেল্পার , তার বাবার সাথে কথা বলে তাকেও নিয়ে আসে।
রকিও মফিজের মতো এক টুকাই ।
কিছুদিন নিলয়ের অনেক বন্ধুরা এসে সময় দিত এই পাঁচ পথ শিশুকে
তাদের সবাইকে পাশের একটা স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। যে স্কুলে নিলয়ও পড়েছিল । শিক্ষকরা নিলয়ের এই কাজটি দেখে খুবই আনন্দিত ।তারা এই ছেলেদের পড়ালেখা ফ্রী করাবে বলে ঘোষণা করে দেয় ।
তা ছাড়া এই স্কুলে নিলয়ের বাবার অনেক অবদান আছে ।
শুধু তানা ,
নিলয় এই ছেলেদের একটা রুটিনও করে দেয় পরিবার এবং বন্ধুদের পরামর্শে।।
সকালে পাড়ার একজন মৌলবী এসে তাদের ধর্ম শেখান ।
বন্ধু সিহাবের সাহায্যে ।
তার পর স্কুল
স্কুল থেকে এসে দুপুরের খাবার, তার পর দুই ঘণ্টা ঘুম তার পর দুই ঘণ্টা
খেলাধুলা
এরপর জেমিন আপুর সাথে গান শেখা ।
রাতে পড়াশুনা ...
এই রুটিনে এই ছেলেরাও খুশি, খুশি নিলয়ও।
এভাবে এগুতে থাকে ছেলেদের দিন ,নিলয়ের স্বপ্ন ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৯ রাত ১০:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





