somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যানসার আর একটি অসহায় পরিবার

২৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাল একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হলো। আমার এক আঙ্কেলকে দেখতে ডেলটা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ক্যানসারের সাথে যুদ্ধে তিলে তিলে হেরে যাওয়া একজন মানুষ...কে দেখতে। কিন্তু কোনদিন ভাবিনি এতটা অসহায় আর নিস্ফল আক্রোশে ভেতরটা বারবার কেঁপে উঠবে।

আমি এম্বুল্যান্স গাড়িটাকে কেন যেন সইতে পারিনা। নিজের বারবার হাস্পাতালের অভিজ্ঞতা থাকায় এই সাদা গাড়িটার লাল রঙের লেখাগুলো আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন করে দেয়। জীবন-মৃত্যুর খেয়া তরী মনে হয় গাড়িগুলো...। কাল সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো পার হয়ে যাওয়ার সময়েই অস্থির লাগছিল...।
নিজে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি অনেকবার। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই পথে এগিয়ে যাওয়া একজন মানুষের আত্মীয়-স্বজনের অবস্থা সেই অর্থে কখনো দেখা হয়নি।

একজন বাবা, শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের সাথে মৌন যুদ্ধে লিপ্ত। যিনি ১ মাস আগেও সুদূর ইংল্যান্ডে থাকা ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলেছেন, মেয়ের বাসায় গিয়ে নাতি-নাতনীর সাথে খেলেছেন, আজ তার অসহায়, রুগ্ন, জ্ঞানহারা অবস্থা দেখে সহ্য করতে পারছিলাম না। মুখটা ছাড়া কিছুই আমার চেনা আঙ্কেলের সাথে মেলেনা। আমি যখন হাসপাতালে, আঙ্কেল আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন।পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন। আজ উনি বেডে শুয়ে আর আমি পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু চোখ মেলে ১ বার তাকানোর অবস্থা নেই তার...সইতে না পেরে ছুটে বের হয়ে এলাম।

তার মেয়ে, আমার একমাত্র ভাবী। কি অসহায় মুখে বসে আছে। চোখের সামনে বাবাকে শেষ হয়ে যেতে দেখতে হচ্ছে!! নির্বাক চোখে তাকিয়ে শুধু কাঁদছেন। আমি কি করব বুঁঝতে পারছিলাম না। শুধু ভাবছিলাম আল্লাহ কেন মানুষকে এত কষ্ট দেন? এই কষ্ট কিভাবে সহ্য করা সম্ভব? বারবার গিয়ে বাবাকে এক নজর দেখে আসা আর হাজারটা ফোন রিসিভ করে বলা “অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে, সেন্স নাই...” আমি জানিনা কিভাবে পারছে ভাবী।

১ মাত্র ছেলে হয়ে বাবার অসুস্থতায় পাশে থাকতে না পেরে অস্থির হয়ে পড়া শুভ। স্কাইপে তে ১ বার দেখানো হল ওকে। কি দিশেহারা ভাব আর আকুল হয়ে কাদঁছে সে। কি অবর্ননীয় কষ্ট!!! চাইলেও ছুটে আসতে পারছেনা। বাবার হাতটা ধরে বসে থাকার ইচ্ছেতে নিশ্চয়ই বুক ফেটে যাচ্ছে তার। সব ব্যর্থতা নিয়ে হাজার মাইল দূরে বসে কাঁদছে!!

আমার ভাই, অসহায় মুখে বসে আছে ভাবির হাত ধরে। চোখ টকটকে লাল। চোখে মুখে দিশেহারা ভাব। কি সান্ত্বনা দেবে সে ভাবীকে? এই কষ্ট কিসে কমানো সম্ভব? একটু পর পর সে নিজেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে!!

সবচে মর্মান্তিক ছিল আন্টির অসহায় মুখটা সহ্য করা। ভাবীর মা মারা যাওয়ার পর মাত্র ২ বছর আগে এই আন্টি এসেছিলেন আঙ্কেলের জীবনে। ১০ বছর আগে উনার হাসব্যান্ড মারা যাওয়ার পর ১ মাত্র মেয়েকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে নামতে হয়েছিল তাকে। একটু যাও বা সুখের মুখ দেখেছিলেন প্রায় ১ যুগের যুদ্ধ শেষে আজ তাও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে!! পায়ের নিচের মাটি আর মাথার উপর ছায়া একবারে সরে যাচ্ছে তার। কি বুকফাটা চিৎকার, কান্না আর বিলাপ...।যে কোন মানুষের হৃদয় ছুয়ে যাবে। আই।সি।ইউ এর ভেতর থেকে বেড়িয়ে চিৎকার করে বললেন ইন্টারনাল ব্লিডিং হচ্ছে আর ক্যাথেডারের ব্যাগ ভরে গেছে রক্তে, তখন আমারই মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছিল। কাদঁতে কাদঁতে সেন্সলেস হয়ে গেলেন!! কতটা অপার্থিব আর ভয়ানক সেই কষ্ট!!! নার্সদের ইফতার করতে আনা পানি ছিটিয়ে উনার জ্ঞান ফেরানো হল। আল্লাহকে যেভাবে ডাকছিলেন, তিনি কি সত্যি শুনতে পাননি?

ইফতার করতে বাসায় আসতে না আসতেই ফোন এল রক্ত লাগবে। আমারই কিছু বন্ধু, ছোট ভাই রোজা ভেঙ্গেই দৌড়ে গেল ধানমন্ডি আর বাড্ডা থেকে। রাত ১১ টা বেজে গেছে ব্লাড নিতেই। এত যে চেষ্টা, তবু কি খোদা আমার আঙ্কেলকে সুস্থ্য করে দেবেন না? এতগুলা মানুষকে অসহায় করে দিয়ে, ১ জন মানুষের বাকি জীবনের সুখ স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে, বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন কেড়ে নিয়ে, রোজাদার বান্দাদের চোখের পানির বিনিময়ে আল্লাহ কি উনার জীবন ফিরিয়ে দেবেন না?

কেউ হঠাৎ চলে গেলে আকস্মিক আঘাতে ভেতরটা স্তব্ধ হয়ে যায়,সহ্য করা যায়, মনকে সান্ত্বনা দেয়া যায়। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রনা কোনদিন ভুলার নয়, তবু চোখের সামনে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া সহ্য করা যায়না। এই কষ্ট ভয়ানক। আল্লাহ, ইয়া রাহমানুর রাহীম, তুমি কোন শত্রুকেও এই কষ্ট দিওনা...এতটা কষ্ট...।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×