somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক-মুরতাদ-বিরোধী আন্দোলন ও কমনসেন্স

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ১৯৯৪-৯৫ হবে। আমি দৈনিক সংবাদপত্রের নতুন পাঠক। নিজেদের কেনা পত্রিকা ছাড়া অন্যদের কেনা ভিন্ন রকম পত্রিকা পড়ারও ভীষণ কৌতূহল। তখন পরিচালিত দুটি আন্দোলনের কথা মনে আছে। দুটিই বেশ দাগ কাটে হৃদয়ে। দুটি নিয়েই আমার আশাভঙ্গের-স্বপ্নভঙ্গের অনুভূতি রয়েছে। এর একটি হল নাস্তিক-মুরতাদ ও তসলিমা নাসরিন-বিরোধী আন্দোলন। যেহেতু এদেশেরই একটি নিম্নবিত্ত/ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম, তাই ধর্মীয় বিষয়ে এক ধরনের স্পর্শকাতরতা থাকা নিতান্ত স্বাভাবিক। বুঝি-বা না-বুঝি, গোগ্রাসে সবই পড়ি। কিন্তু ‘কমনসেন্স’ বলে যে একটি কথা আছে, সেটাতে বোধহয়, বয়স-শ্রেণি-লিঙ্গ কোনো বিষয় নয়। ধর্মীয় আবেগে পরিচালিত আন্দোলনের দুটি ঘটনায় আমার কমনসেন্স সাড়া দিতে পারে নি। নিচে দুটিই বর্ণনা করছি:

ক। দৈনিক পত্রিকার পাশাপাশি একাধিক সাপ্তাহিকও পড়া হত। কিনে নয়, অন্যের নিকট থেকে ধার করে। এক বন্ধুর সঙ্গে এমন একটা চুক্তি ছিল যে, সে যদি সাপ্তাহিক যায়যায়দিন'’ কিনে তো আমি কিনব ‘'সাপ্তাহিক বিচিত্রা’'। মনে আছে, তখন ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় শাইখুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক-এর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। এতে তসলিমা নাসরিন ও নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে তাকে নানা প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বলেন, তাতে যে বিবমিষা জেগে ছিল, তা আজও সমানভাবে রয়েছে। সাংবাদিকের একটি প্রশ্ন ছিল এ রকম যে, তিনি বা তারা যে তসলিমা নাসরিন-বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন, তিনি তসলিমার কোনো লেখা বা বই পড়েছেন কি-না? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে শাইখুল হাদিস বলেন, ‘না, তিনি তা পড়েন নি।’ তিনি ভক্তবৃন্দের কাছ থেকে শুনছেনে যে, এ মহিলা ধর্ম বিষয়ে আপত্তিকর লেখা লিখেছেন। এ জন্যই তিনি তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। সে আন্দোলনের ফলেই তসলিমাকে লুকিয়ে-চুরিয়ে দেশ ত্যাগ করতে হয়।

খ। বাড়িতে-ঘরে তসলিমা নাসরিনের কোনো বই পড়ায় নিষেধ না থাকলেও স্বাভাবিক কোনো পরিবেশ ছিল না। লুকিয়ে-চুরিয়ে আব্বার ব্রিফকেস ও ভাইয়ের ব্যাগ থেকে দুটি বই পড়েছি। ওর কথার তেজ সত্যিই অসাধারণ। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ‘লজ্জা’ উপন্যাসটি তখন নানাভাবে সংগ্রহের চেষ্টা করছি। পাচ্ছি না। কিনতেও পাচ্ছি না। না-হয় হাত খরচ বাঁচিয়ে যা জমিয়েছি, তাতে একটি নয়, দুটি ‘লজ্জা’ কেনা যাবে। এভাবেই দিন চলতে থাকে। দেশ উত্তপ্ত। মোল্লা-মৌলবির আবেগে-উত্তাপে পরিবেশ বেশ গুমোট হয়ে আছে। ‘নজিরবিহীন’ একটা হরতালও বোধহয় হয়েছে। মুরব্বিদের মুখ থেকে শুনেছি, এমন হরতাল স্বাধীন বাংলাদেশে নাকি প্রথম। সাইকেলও চলতে দেওয়া হয় নি বা চলতে পারে নি। হরতালের পরপরই একটি ‘লজ্জা’র সন্ধান পাই। নানা কৌশলে, বলা ভাল, অবৈধ পথে এটি হাতে আসে। সবাই ঘুমানোর পর একা-একা পড়তে থাকি। পড়া শেষ করে আমার কচি মনে তসলমাবিরোধী আন্দোলনে যে বিতৃষ্ণার জন্ম হয়, তা প্রকাশ করার পরিবেশ ছিল না বটে। কিন্তু পরে আমি অনেককেই তা বলেছি। এই একটি বইকে নিষিদ্ধ করার কোনো যৌক্তিক কারণ সত্যিই আমি খুঁজে পাই নি। অথচ এ বইটির জন্য লেখিকাকে কী ধকলই না সইতে হল!

উপসংহার হিসাবে বর্তমানের হেফাজতে ইসলামের এক বিজ্ঞ (?) নেতার সাক্ষাৎকারের বিষয়টি উল্লেখ করি। নেট ঘাটতে গিয়ে ‘বিবিসি বাংলা’য় দেখি হেফাজতে ইসলামের নেতা জুনাইদ বাবুনগরীর সাক্ষাৎকার। যেহেতু এ ব্যাপারে ধারাবাহিক কোনো সংবাদ আমি পড়ি না, আগ্রহও নেই। তাই অলস সময় কাটানোর ভঙ্গিতেই এটি শুনতে থাকি। এর দুটি বিষয় আমাকে ঠিক পূর্বের মতোই কমনসেন্স-এ আঘাত করে। (১) এই নেতা ভাল করে স্ট্যান্ডার্ড বাংলাও বলতে পারেন না। অঞ্চলিকতা দোষের নয়, কিন্তু তার কথায় যে আঞ্চলিকতার ঝাঁঝ, তাতে বুঝি না, তারা কীভাবে নিজেদেরকে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে গণ্য করেন। হতে পারে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় ব্যুৎপত্তিলাভের স্থান নেই। তবে তারা অন্য ভাষায় দিগগজ পণ্ডিত হয়ে যাবেন, তা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। (২) তবুও মনে করি, মাতৃভাষা তাদের কাছে একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয়ই মনে হতে পারে। কারণ এ বাংলা তো আর ধর্মীয় ভাষা নয়। কিন্তু একজন শিক্ষিত মানুষ জাতীয় পর্যায়ের একটি আন্দোলন শুধু লোক মুখে শুনে কীভাবে শুরু করতে পারেন, তা বিষ্ময় জাগায় খুব। তিনি সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবেই বলেছেন, তথাকথিত নাস্তিকদের কোনো ব্লগ তিনি পড়েন নি। তার নির্ধারিত লোকদের মুখ থেকে তিনি এর আপত্তিকরতার কথা শুনেছেন! এ জন্যই দেশব্যাপী আন্দোলনের এই তৎপরতা। তাদের অগণিত ভক্তবৃন্দকেও দেখছি, জ্বী হুজুর বলে, একেবারে ময়দানে উপস্থিত। তারা পড়েছেন কি-না, সে প্রশ্নও কিন্তু মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু কাকে করব সে প্রশ্ন?

এই হল বাংলাদেশ, এই হল ধর্মরক্ষাকারী আলেম-ওলামা ও তাদের সৃজিত আন্দোলনের কথকতা।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×