somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেলাই ।পর্ব ২

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইমরান সাহেব আমাকে ভেতরের একটা তালাবন্ধ ঘরে নিয়ে গেলেন।ঘরটায় কোন আসবাব নেই।শুধু কাপড় দিয়ে ঢাকা অনেকগুলো ছবি।আমি তেমন ছবি বুঝি না কিন্তু প্রতিভা বোঝার জন্য জ্ঞান নয় মানুষের অনুভুতিই যথেষ্ট। ছবি দেখা শেষ হলে তিনি লাইটগুলো অফ করে সব জানালা খুলে দিলেন।বাইরে বিকেলের মায়াবী আলো।পূর্বের জানালার পাশে দুটা কাঠের চেয়ার ।তিনি আমাকে ইশারায় সেখানে বসতে বললেন।

-এই দোতালা পুরোনো বাড়ীটা আমার বাবার করা। উনি একজন উকিল ছিলেন। আশেপাশের জায়গাগুলোও তার। এই যে সামনে বিল্ডিংটা দেখতে পাচ্ছেন এটা বড় ভাই করে নিয়েছে।আমি নিজে কিছুই করতে পারিনি বা চাইনি।
এই তথ্যগুলো আমার জানা আর আমি এও বুঝলাম উনি যে কিছু পারেন নি এই কথাগুলো এই বয়সে প্রায় সবাইকেই বলেন। আমি তাই মূল প্রসঙ্গে প্রশ্নটা করলাম।

-আচ্ছা আপনিতো ভালো কবিতা লিখতেন। কিন্তু খুব কম লিখেছেন। আবার ছেড়েও নাকি দিয়েছেন শুনেছি।
-কেন ছেড়েছি সেটা শুনেননি?
-লোকমুখের কথায় আমি তৃপ্ত হতে পারিনা। আমার কৌতুহলকে ক্ষমা করবেন আমি কি জানতে পারি।

ইমরান সাহেব চমৎকার ভাবে হাসলেন। সবুজ চোখের অসাধারণ সুন্দর চেহারার মানুষ তিনি। হাসলে আরো ভালো দেখায়। তিনি বলতে লাগলেন,

ছোটবেলা থেকেই আমি খুব দুরন্ত আর ভাই ততটাই শান্ত।আমার এক পৃথিবী সাহস।কিশোর বয়সে এখানে থেকে ট্রেন ধরে কমলাপুর চলে যেতাম। শীতলক্ষায় যদি নামতাম চার পাঁচ ঘন্টায় ও আমি ক্লান্ত হতাম না। বন্ধুদের দেখিয়ে বড় বড় লঞ্চ আর জাহাজ থেকে পানিতে লাফ দিতাম।

-আর পড়াশুনা?
-করতাম কম বেশি। আর সেটাও একটা এক্সপেরিমেন্টের মতোই লাগত। নতুন বই পেলে ওটার নাড়ীনক্ষত্র বুঝেত চাইতাম। আস্তে আস্তে বুঝেত থাকলে আগ্রহ কমে যেত। পরীক্ষায় খুব ভালো করার টেন্ডেন্সি থাকতো না।
-আচ্ছা?

-হুম। আস্তে আস্তে নারায়নগঞ্জে আমার পৃথিবীটা খুব ছোট হয়ে গেল। মনে হলো একি বৃত্তে ঘুরছি।আমি খুজতে লাগলাম ভালো লাগা। তারপর এলো কবিতা। রবিন্দ্রনাথ আমায় তেমন টানতো না সত্তর দশকের কিছু আধুনিক কবিতায় আমি মজে গেলাম। কবিতায় তখন পুরোই টাল।পাশাপাশি নিজের অজান্তেই কবিতার পাশে টুকটাক স্কেচ আঁকা শুরু করলাম আমি।
-হুম।তখন বয়স কত হবে?

-এই আঠারো-উনিশ। লিখতে গিয়ে ঢাকার প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়লাম। কিছুদিন মনো্যোগী ছাত্র হয়ে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলাম বি এ তে। আমার সামনে পৃথিবী আবার অর্থবহ হয়ে উঠল।আমি হলে থাকতাম বাড়িতে খুব কম আসতাম।এক দু বছরে দেখা গেল আমি আমার মত বেছে বেছে কিছু ক্ষ্যাপা বন্ধু জুটিয়ে ফেললাম।
-তারা এখনো আছেন আপনার সাথে?

-না। আছে বলতে তেমন ভাবে নেই। কিছু কিছু ওকেশানে দেখা হয়ে যায়। তাদের অনেকেই এখন ওয়েলনোন। নাম বলার দরকার নেই।আমরা সাত জন বন্দুর মধ্যে পাঁচজনই এখন ইন্টেলেকচুয়াল যারা দেশকে যা দেয় তার বিপরীতে পকেট ভর্তি করে টাকাই নেয়।
যাই হোক আমরা কিছু ক্ষ্যাপা বন্ধু বান্ধব আর স্বাধীনতা পরবর্তী উগ্র দেশ। নিয়মকে তুড়ি দিতে ধর্ম আর সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার মধ্য বামপন্থি যাকে বলে সেই বীজ ভালো মত ঢূকে যায়।অবশ্য আমি এখনো ডানপন্থি নামক টিকটিকিদের ঘৃনা করি। জন্মগত ভাবে পাওয়া ধর্ম আর সমাজবোধকে খুলে রেখে নতুন ভাবে জানতে চেষ্টা করি। কমিওনিজম বা আধুনিক সমাজতন্ত্র বেশ গ্রহনযোগ্য বলে মনে হয়।

আমরা মনে করতাম প্রেমের মত চটচটে আঠালো পদার্থের চেয়ে অনেক কর্তব্য আমাদের কাঁধে। নিয়ম মানা নয় বরং নিয়ম তৈরি করাই ছিল আমাদের স্বপ্ন। ছবি আঁকার পাশাপাশি অদ্ভুত সব বিষয় জানা আর আলোচনায় আমাদের খুব ব্যস্ত দিন কাটতে লাগল। এর মধ্যে বাবা মারা গেলেন আর আমার ভাই ডাক্তারি পাস করে প্রায় বেড়িয়ে গিয়ে বিয়ে করলেন। আমার জন্য আমার মায়ের চিন্তা দ্বিগুন হয়ে গেল।অবাধ্য সন্তানের প্রতি মায়েরা যতটুকু স্নেহ ঢেলে দেন আমার মা বোধ হয় তার চেয়ে বেশি দিলেন।আমি আরো বেপরোয়া হতে থাকলাম।
-কারো প্রেমে পড়েন নি?

ইমরান সাহেব উত্তর দেয়ার আগেই তার স্ত্রী এসে আতংকিত স্বরে জানাল তার ছোট ছেলেটি খেলতে গিয়ে থুতনি কেটে ফেলেছে,হসপিটালে নিতে হবে।সন্তানের চিন্তায় একজন পিতা আমাকে কিছু না বলেই ঘর ছেড়ে ছুটে বেড়িয়ে গেলেন।তার স্ত্রী উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলেন। আমি উনাকে কিছুক্ষণ সান্তনা দিয়ে বেরিয়ে এলাম।


যদিও এই পোষ্টে একটা মাছি ভন ভন করার সম্বাবনা ও কম তবুও চলবে B-) B-)


সেলাই প্রথম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৩১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় প্রতারক চক্রের সন্ধানঃ সতর্ক হোন!

লিখেছেন মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৪

একটি নতুন ভারতীয় প্রতারক দল সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এই পোস্টের অবতারণা। সবাই পড়বেন দয়া করে।

গত ২৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে এক ভারতীয় দাদা 01677119057 নাম্বার থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি কারো অবিশ্বাস নষ্ট করি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:০১




আমার কাজ হলো বিশ্বাস সুদৃঢ় করা, তাতে অবিশ্বাসী মাইন্ড খেয়ে বসে কেন? বিশ্বাসেই আমি পেয়েছি সরল সঠিক পথ। সেটাই আমি বিশ্বাসীগণকে বলছি। অবিশ্বাসী তাতে ক্ষেপে যায় কেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনের মসজিদ

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:০৩


প্রচলিত রূপকথা অনুযায়ী কোন এক অমাবস্যার রাতে জ্বীন-পরীরা এই এলাকা উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এলাকাটি পছন্দ করে । তারপর তারা মাটিতে নেমে এসে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করে, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×