একজন বই পড়ুয়ার আত্মকাহিনী
=====================================
ছোট বেলায় যখন বই পড়তাম। তখন বইপড়া নিয়ে আগ্রহ বলতে নতুন বই হাতের পাওয়ার পরের মুহুর্ত থেকে শুরু করে দু'একদিন পর্যন্ত। বই হাতে পাবার পরই মনে মধ্যে ঈদের আমেজ চলে আসতো। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ঈদের জামা কাপড়ও এতো মনোযোগ দিয়ে দেখতাম না। এক বার ট্রায়াল দিয়ে বাসার সবার কিছু মন্তব্য পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল।
কিন্তু নতুন বই হাতে পাওয়ার পর থেকে টানা দু'এক দিন বইয়ের ইমেজ সারাক্ষণ ভেতরে কাজ করতো। কথা বার্তা কাজ সব কিছুতেই শুধু নতুন বই ভেসে উঠতো। তখন সব ব্যস্ততা থাকতো নতুন বইকে ঘিরে। অতি ভদ্র এবং খুব মনোযোগী ছাত্রের মতো সবগুলো বই নিয়ে টেবিলে বসতাম। পড়ি আর না পড়ি বুঝি আর না বুঝি সব বইয়ের লাষ্ট পৃষ্ঠা পর্যন্ত চোখ বুলাতাম।
দিন পার হতে থাকতো বইগুলো সাথে আমার দূরত্বও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকতো। একটা সময় দেখা যেতো কিছু বই শুধু সপ্তাহে দু'এক বার পড়া হতো। আর কিছু বই যত বিরক্তিকর আর যত অপছন্দের হোক না কোন সেগুলোই প্রতিদিন পড়তে হতো। তখন মাঝে মাঝে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগতো। এই সব বই কে লিখছে। আর এভাবে কেনো লিখছে। আর নানা রকম প্রশ্ন। বিরক্তিকর আর অপছন্দ যাই বলি তারপরও সেই বইগুলোই খুব মনোযোগ সহকারে পড়তে হতো।
সারা মাস যতই এদের অপছন্দ করি না কেনো যখন পরিক্ষার সময় কাছে চলে আসতো, এদের প্রতি অন্য রকম একটা আগ্রহ জাগতো। আর পরিক্ষার আগের রাতে খুব আফসোস করতাম। যদি আর একটু পড়ার সময় পেতাম। প্রতি পার্বিক পরীক্ষা শেষ হবার পর বুঝতে পারতাম। আরো বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়া দরকার ছিলো বইগুলো।
এই ইমেজ নিয়ে পুরো স্কুল লাইফ পার করার পর কলেজ লাইফ। এখানেও সেই একি চিত্র। তারপর ভর্তি যুদ্ধের পালা। এই পালায় আসলে সত্যিকার অর্থেই পড়েছি। অনেক পড়েছি। চকলেট বোম এট্যাম বোম আর গ্রেনড এর মতো অনেক বইও পড়েছি। তাও হলো না। ভর্তি যুদ্ধে পরাজিত হলাম।
কিন্তু বই পড়া বা বই নিয়ে গতানুগতিক যে সব ধারনা পোষন করতাম তা থেকে পুরো আলাদা একটা ইমেজ তৈরি হলো। কিন্তু বর্তমান সময়ের ডানে বায়ের এতো বিনোদন আর বন্ধু বান্ধবের আড্ডায় যা পেতাম তার কিছু তখন এর মধ্যে পেতাম না। তখন আবার এই বই পড়ার উপর ভয়াবহ রকমের বিরক্তি চলে আসলো। সেই বিরক্তির মাত্রা এমন ছিলো যে। আমার বাসার ১০০০ হাজার বই পড়ে থাকতো। কিন্তু সেই বই ছুঁয়ে দেখা দূরে থাক পরিষ্কার করার কথা বললে বুয়াকে দিয়ে পরিষ্কার করাতাম।
তারপরের সময়গুলো সত্যিই জীবনের সবচেয়ে দামী সময়। এই সময়গুলোতে এসে কোথাও কাউকে খুঁজে পাই না। যা ভাবি যা চিন্তা করি বাস্তবে তার কিছুই হয় না। এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো না কাউকে বলতে পারি না বুঝাতে পারি। না সহ্য করতে পারি। কোন কুল কিনারা না পেয়ে তখন সাইবার ক্যাফে বসতাম। কিছুটা নিজেকে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবার জন্য।
ওখানেও নিজেকে হারাতে খুব বেশি সময় নেই নি। অনেক কিছু ইচ্ছে করতো তাও পারতাম না। অবশেষে আবার সেই বই। নেটের বা কম্পিউটারের টুকটাক কিছু জানার জন্য আবার সেই বইয়ে ফিরে এলাম।
এবার বই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর মত সব বিষয়েই সাড়া দিচ্ছে। মাঝে মাঝে পত্রিকার পাতায় কিছু লেখালেখি সময় কাটানোর জন্য পড়তাম। কিন্তু সেটা ছিলো নিছক সময় কাটানো মাত্র। কিন্তু যখন ফেবুতে এসে সময় কাটাতে শুরু করলাম। তখন ইচ্ছে করেই টুকটাক লেখা লেখি পড়া শুরু করি। পড়ার আগ্রহটা বেশিই জাগতো অনেকের অনেক কথা মিলে যেতো। সেটাই ছিলো মূল কারন।
একটা সময় সেগুলো্ও আর ভালো লাগে না। কারন সবাই ঘুরে ফিরে ওই এক বিষয় নিয়েই লেখালেখি করে প্রায় সবাই। আবার কখনো কখনো যা লিখে তা দেখে গায়ে ১০০ ডিগ্রী জ্বর চলে আসতো। তখন মাঝে মাঝে কমেন্টেস এ বড় বড় রিপ্লাই দিতাম।
একটা সময় কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে শুরু করলাম বিভিন্ন লেখকদের অনেক আগের লেখা বিভিন্ন গল্প কবিতা উপন্যাসে। এবার সত্যিকারের বই পড়ুয়া হয়ে উঠতে শুরু করলাম। পুরো দমে বই কিনি বই ধার করেও পড়ি। আর বাসায় পড়ে থাকা সেই ১০০০ হাজার বইয়ের কথাও মনে করি। আর এখন তো টুকটাক নিজেও লিখি। থাক অনেক বলে ফেললাম আজ এ পর্যন্তই থাক। বর্তমান সময়ের কথাটা না হয় পরের পোস্টেই বলি..
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:০৫