somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্প: দাগ অথবা কাজল (কিস্তি — ৯ম)

২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৭

নীলার ঘুম ভাঙ্গল, সূর্য উঠে তিন তলার ছাদে দাঁড়িয়ে। ফ্যানের বাতাসের ঝাপটায় জানালার পর্দা, আলো-ছায়া নিয়ে খেলা করছে। মোচড় দিতেই দু-জোড়া চোখ মাখামাখি।
‘ভাঙ্গল তাহলে?’
‘তুমি কখন? ডাকোনি যে?’
‘এই-তো, বসে আমার নীলা-রানিকে দেখছি।’
‘চুরি করে দেখা?...’
‘চুরিতেই তো মজা! কে যেন বলেছিলেন চুরি করে চুমু খাওয়ার মজাটাই অন্যরকম ...’
ঠোঁট ফুলিয়ে কপট রাগ দেখাল নীলা।
‘রাতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম এ-ক-টু-ও বুঝিনি।’
‘বুঝলে কি করতে?’
‘কী আ-র — ’ মিষ্টি করে নীলা একটু হাসল।
‘তোমার ভাল ঘুম হয়েছে, ব্যথা কেমন?’
‘আমায় চুমু দেবার পর থেকে ব্যথাটা বেশ কমে গেছে, তাই ঘুমটাও হয়েছে বেশ। চুম্বন থেরাপি এতটা যে কাজের জানা ছিল না।’
‘যাও শুধু দুষ্টুমি। বেলা হল উঠে পড়ো।’

নীলা উঠে প্রাতঃকৃত্য শেষে, দিপুকে ধরে বাথরুমে নিয়ে গেল।
‘একা বেরোতে চেষ্টা করবে না কিন্তু, ডা-ক-বে?’ চোখে শাসন তুলে বলল সে।
‘আ-চ্ছা-’

রান্না-ঘরে ঢুকে দেখল মঙ্গল ব্যস্ত। ডানপাশে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘এই তো প্রায় শেষ। একটু অপেক্ষা করো, নিয়ে আসছি।’
‘আপনি করতে গেলেন কেন?’
‘ছিঃ কী বলো — প্রথম সকাল না? আর আমার তো অভ্যাস আছেই, মালিক উঠেছেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘ঠিক আছে ঘরে যাও। আজ তোমার ছুটি। এখানে পরশু ঢুকতে পারবে, নয়ত ফাইন হয়ে যাবে।’ মঙ্গল হাসল।
‘একটু ঘুরে দেখি। নাকি তাতেও ফাইন হবে?’
‘তাও হবে, তবে অগ্রিম মাপ করলাম।’
‘আপনি খুব ভাল— মঙ্গল ভাই।’
‘ধন্যবাদ, সাত-সকালে পাম্প দেবার জন্য।’ হাসল মঙ্গল।
‘কী বললেন! আমি পাম্প দিচ্ছি!? এমন করলে কিন্তু আপনার সাথে কথাই বলব না!’
‘কী করব বলো— যা সত্যি তাই বললাম। আমায় পাম্প দেয়াতে আমি ফুলেছি, তাই রুটিগুলোও দেখো-না কেমন ফুলে ফুলে উঠছে। এতক্ষণ ভালমতো ফোলাতেই পারছিলাম না।’
হি হি করে নীলা হেসে উঠল।
নীলা খানিকটা সময় নিয়ে মঙ্গলের তৈরি খাবারগুলো নেড়চেড়ে দেখল। দু-একটা কৌটা খুলে আবার লাগিয়ে যথাস্থানে রেখে দিল।

১৮

তিনজন একত্রে নাশ্‌তা করতে বসল। দিপুকে একটু রাত-জাগাভাব দেখালেও, বেশ উৎফুল্ল। নীলা এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছিল। এই ফাঁকে
দিপু বলে বসল, ‘দেখো কোন সময় সুমি এসে হাজির হয়। নাস্তায় কম পড়বে না তো মঙ্গল ভাই?’
মঙ্গল রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে দিপুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল আর বলল, ‘ভাইয়ের ভয় হচ্ছে না কি? সুমি আমার জ্ঞাতি বোন হলেও, উচিত কথা বলতে ছাড়ব না। কাল তো ওকে এসে ছোট-সতিনের সালাম নিতে বলেছিলাম।’
নীলা দিপুর প্লেটে একটু ঝিঙেভাজি উঠিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘আসলে কী দিয়ে যে কি হয়ে গেল ভালমতো বুঝতেই পারলাম না।’
‘সুমি আসুক তখন বুঝবে...’ মঙ্গল ফোড়ন কাটল।
‘একদম ঝাল নেই, ভাজিটা মিষ্টি লাগছে।’
‘আপনার কাছে এখন সবই মিষ্টি লাগবে।’
দিপু আর মঙ্গল শব্দ করে হেসে উঠল। দিপু নীলার দিকে তাকাল, ও মাথা নিচু করে হাসছে।

‘মঙ্গল ভাই চা-টা বারান্দায় বসে খাব। একটু কথাও আছে।’
মঙ্গল হুইল চেয়ার ঠেলে বারান্দায় নিয়ে গেল।
‘নীলা তুমি কোথায় গেলে?’
‘ধোয়াধুয়ির কাজটা শেষ করে আসি।’
‘আরে চা তো এক সাথে খাবে?’
দিপু মঙ্গলকে ইশারায় বসতে বলে, মুখ বরাবর তাকিয়ে হেসে ফেলল। মঙ্গল কিছু বুঝল না, হাসির উত্তরে হাসতে হয়, তাই ও-ও হাসল।
গতকাল হিসাব দেখার সুযোগ হয়নি।
‘আজ দোকান খোলার দরকার নেই। একবারে দু-দিন পরেই বসি না কি?’
মঙ্গল কাপটা হাত বদল করে, মাথা বামদিকে কাত করল।
‘হারুন সাহেবের চেকের কী খবর?’
‘পেয়েছি কিন্তু তারিখ দিয়েছে নয় পাঁচ...’
‘এত দেরি?’
‘কিন্তু তার চেক-এ কোনও সমস্যা হয় না কখনও। অনেকে কম সময় নেয়, পরে আবার ফোন করে ব্যাঙ্কে জমা দিতে নিষেধ করে।’
নীলা কাপ নিয়ে বাম হাতে একটা মোড়া ঝুলাতে ঝুলাতে এসে দিপুর পাশে বসল।
‘নীলা, সুমি তো আমার দু:সম্পর্কের বোন, তোমাকে কী বলে সম্বোধন করব?’
‘কী আবার, ছোট বোন; নাম ধরেই তো ডাকছেন, সেই শিশুকাল থেকে।’
‘না, সে-তো আগে থেকেই নামধরে ডাকি, এখন আবার ভিন্ন একটা...’
‘বোনের সতিন বোন, এ পর্যন্তই।’
নীলা মঙ্গলের কথা শেষ করার সুযোগই দিল না।
‘যাক খুশি হলাম।’ মঙ্গল বেশ আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলল।

কিস্তি - ৮ম

কিস্তি - ১০ম
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×