টিউবলাইট
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ছোটবেলা থেকে একটা কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি, আমি নাকি টিউবলাইট। সব কথা আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হয়। ভাগ্যিস ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল টিউবলাইট আবি®কৃত হয়েছে ! এখন সুইচ প্রেস করার সাথে সাথেই বত্তিমহাশয় জ্বলে ওঠে। আর সেই সাথে আমি টিউবলাইট শোনার দায় থেকে মুক্ত হয়েছি।
যাইহোক, এবার শানেনুযূলে আসি। ২০০৭ সালের কথা। আমার আগের অফিসে থাকাকালীন সময়ে আমি ভিসা প্রসেসিং এর কিছু কাজ করতাম। বসের জন্য ইউ কের পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসার জন্য এপ্লাই করলাম। নির্ধারিত দিনে ভিসার কাগজপত্র জমা দিয়ে অনলাইনে দেয়া তারিখ অনুযায়ি কয়েকদিন পর পাসপোর্ট ফেরত আনতে সাইমন সেন্টারে গিয়ে আমি চক্ষে সর্ষে ফুল দেখলাম। মাশাআল্লাহ্, কিশোর কিশোরী, বুড়ো-বুড়ি ...এত লোক বিলেত যাবে! (আমি আবার একটু কম বুঝি কিনা!) পরে বুঝলাম এখানে বেশীরভাগ ছেলেমেয়েই স্টুডেন্ট ভিসার জন্য এপ্লাই করেছে। আর সাথের সবাই অভিবাবক। তাদের সকলকেই ধর্মভীরু মনে হল, কারন কেউ তজবি জবছে, কেই দোয়া দরূদ পাঠ করছে আর কেউ কেউ মোনাজাত ধরে বসে অছে। সবাই ভিসার জন্য ফরিয়াদ! যাইহোক, আমি পাসপোর্ট কালেকশন রুমে গিয়ে বসার ২০-২৫ মিনিটের মাথায় আমার ডাক পরল। কাউন্টারে গিয়ে পাসপোর্ট কালেক্ট করে দেখলাম, পাঁচ বছরের স্থলে দুই বছরের মাল্টিপল ভিসা একসেপ্টেড হয়েছে। যাক, দুই বছরই সই। দান দান দুই দান। আমার সামনের প্রায় ১০-১২ জন ছেলে মেয়ে ভিসা পেলনা। যারা ভিসা পায় তাদের একটা বড় হলুদ খামে করে তার পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র ফেরত দেয়া হয়। তার মানে কেউ বড় হলুদ খাম নিয়ে সেন্টার থেকে বের হলেই তৎক্ষনাত সবাই বুঝে ফেলে, এই ব্যক্তি ভিসা পেয়েছে। আমি এত কিছু জানতামনা, বের হবার পর অভিভাবকরা সবাই আমাকে একরকম ঘিরে ধরল। সবার মুখে শুধু একটাই প্রশ্ন, পাইছ... পাইছ? অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং আতঙ্কে তাদের মুখ থেকে ভিসা নামক সোনার হরিনের নাম বের হচ্ছিলনা। আমিও বেকুবের মত পাল্টা প্রশ্ন, কি পাইছি? (এতই গাধা আমি, এই সহয প্রশ্ন বুঝতে পারিনি। সইমন সেন্টারে তো কেউ পীর ইয়ামেনী মার্কেট খুঁজতে যায়না, সবাই যায় ভিসা পেতে)। যাইহোক ততক্ষনে সবার চোখ গিয়ে আটকে পড়ল আমার হাতে হলুদ খামের দিকে। প্রমান সহ তাদের প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেয়ে তারা আমাকে সেই যাত্রায় ছেড়ে দিল। আর আমিও হাসের ছানার মত ছাড়া পেয়ে গাড়ীতে চড়ে বসলাম । আর তখনই হুট করে মাথায় আসল, তারা কি পাবার কথা জিজ্ঞেস করছিল। আর একটু গাধা হলে হয়ত গাড়ী থামিয়ে বলে আসতাম, পাইছি পাইছি............। কিন্তু তা আর বলা হয়নি। তবে খুব বলতে ইচ্ছা করছিল, পাইছি তবে আমি না, আমার বস ।
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছিল, আর আমি দেখছিলাম কিভাবে ভিসা না পাওয়া ছেলেমেয়েগুলো তাদের বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে আর্তনাৎ করছে। বুঝলাম, এতো ভিসা নয়... ... সত্যি সোনার হরিন...
১২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[
স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন
=হিংসা যে পুষো মনে=

হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।
কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।