somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বৃষ্টি বিলাস

২২ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলার ঋতু বৈচিত্রে বর্ষার দাপট বোধ করি সবচাইতে বেশী। তাই ছোট বেলায় রচনা লিখতে গিয়ে প্রিয় ঋতু হিসেবে বর্ষাকালকেই সবাই বেশী প্রাধান্য দিত। বর্ষার অবিরাম সৌন্দর্যের সাথে আর কোন কিছুর তুলনা চলেনা। তাই হুমায়ূন গ্রন্থে যথন বৃষ্টিকে রেখে জোছনা নিয়ে মাতমাতি দেখি তখন রাগে গা জ্বলে যায় :)



বর্ষার এই বিদায় লগ্নে বৃষ্টিকে নিয়ে কিছু স্মৃতি শেয়ার না করলে মেঘমালারা খুব রাগ করবে :(। তাই আমার এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা গুচ্ছ বর্ষার বিদায়ী উপহার হিসেবে বৃষ্টিকে উৎসর্গ করছি। বৃষ্টি নিয়ে অনেক স্মৃতি থাকলেও বিশেষ কিছু ঘটনা শেয়ার করছি।

শৈশব সময়.....


ছোট বেলায় প্রায়ই কাগজ দিয়ে খেলনা নৌকা বনিয়ে বৃষ্টির পানিতে ভাসিয়ে দিতাম।বৃষ্টিতে ভেজার প্রবল আকর্ষন জীবনে প্রথমবারের মত মিটিয়েছিলাম সাত বছর বয়সে। বাইরে প্রবল বর্ষন আর ঘরে আমরা দুই বোন ছটফট করছি বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। মা ঘুমুচ্ছে এটাই ছিল মোক্ষম সময় কিন্তু বাধ সাধল বেরসিক উচু দরজার ছিটকিনি। যা চেয়ারের উপর দাঁড়িয়েও আমার দৈর্ঘকে হার মানালো। শেষ পর্যন্ত ছোট বোনকে ঘাড়ে তুলে চেয়ারের উপর দাড়িয়ে দরজা খুলে এক দৌঁড়ে ছাদে। কতক্ষন ভিজেছিলাম মনে নেই কারন সেদিন বাইরের বর্ষনের সাথে আমাদের পিঠেও মায়ের দীর্ঘ বর্ষন ঝড়েছিল অবিরত। তবে বৃষ্টির যে অদ্ভুদ স্বাদ পেয়েছিলাম সেই নেশা আজও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।



কৈশর বেলা ....
একবার নানা বাড়ীতে যাওয়ার পথে শুরু হল প্রবল বর্ষন। শহর পর্যন্ত পৌছে ঠিক হল রিক্সা যাবে না, নৌকায় যেতে হবে। নৌকায় সেদিন খাবার আয়োজন হল। জীবনে এত তৃপ্তি নিয়ে কখনও খেয়েছি কিনা মনে পড়ে না। কিছুক্ষন পর পর মাঝি পানি সেচে ফেলছিল। বৃষ্টির ঝাপটায় চারিদিক কুয়াশার মত রহস্যময়তা সৃষ্টি করেছিল। অদ্ভুদ দৃশ্য!! ইনজিন বিহীন নৌকা হওয়ায় যেতে বেশ সময় লেগেছিল তাই মা খুব বিরক্ত হয়ে মাঝিকে বলছিলেন আর কতক্ষন লাগবে? আর আমরা দুইবোন মনে মনে বলছিলাম ”ইস এই যাত্রা যেন কোনদিন শেষ না হয়” আমাদের প্রার্থনা কবুল হয়নি কারন ঐটাই ছিল আমাদের জীবনের প্রথম ও শেষ নৌকাভ্রমন। আর তাছাড়া এখনতো ইনিজিন বিহীন নৌকা দেখাই যায় না।



কলেজ বেলা..........
কলেজে ওঠার পর একবার আমরা বান্ধবীরা প্রায় ২০ জন মিলে বৃষ্টিতে ভেজার পরিকল্পনা নিলাম। যদিও গার্লস কলেজ ছিল কিন্তু নিয়ম কানুনে ছিল মিলিটারি শাষন (অবশ্য কলেজটাও ছিল মিলিটারীদের ;))। কলেজ থেকে কড়া নির্দেশ ছিল বৃষ্টি নামলে কোন মেয়ে (অফ প্রিয়ড থাকলেও) কলেজ চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে পারবেনা। কিন্তু ইচ্ছা কি আর নির্দেশ মানে? সবাই মিলে নেমে পরলাম বৃষ্টি অভিজানে। সেদিন আমাদের শরীর চর্চার শিক্ষিকার সেকি ধাওয়া!! আমরাও দৌড়াচ্ছি উনিও আমাদের তাড়িয়ে বেরাচ্ছেন দস্তুর মত। সারা ক্যাম্পাস জগিং করেও উনি একটা মেয়েরও টিকিটি পর্যন্ত ধরতে পারেননি।



ভিপি ম্যাডামের কাছে বিচার গেল প্রায় ৪ দিন পর। কারন মহামান্য ম্যাডাম বৃষ্টির ধকল কটিয়ে উঠতে ৪ দিন সময় লেগেছিল। সেদিন তার রুমে ডেকে নিয়ে মেয়েদের সেকি তিরস্কার!! তোমরা কি নিজেদের বাংলা ছবির নায়িকা ভাব? চেহারাটা কখনও আয়নায় দেখেছ? ইত্যাদি ইত্যাদি। এইগুলা কোন ব্যপার ছিলনা, যে যাই বলুক বৃষ্টিতে তো ভিজেছি।


সাদা বৃষ্টি ও নীল শার্ট.....
একদিন প্রবল বৃষ্টির সময় বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। চোখে পড়ল এক অদ্ভুদ দৃশ্য। আমাদের বাড়ীর সামনেই খোলা মাঠের বেঞ্চিতে নীল শার্ট গায়ে কেউ একজন নির্বিকার ভাবে বসে ছিল। প্রবল বৃষ্টির ঝাপটায়ও তার শূন্য দৃষ্টির মধ্যে কোন বিকার দেখা গেল না। ভীষন বিষন্ন আর অন্যরকম লাগছিল তাকে। তাকে দেখার জন্যই বারান্দা থেকে ছাদে গিয়ে দাড়ালাম। এখনও বৃষ্টি হলে সেই বারান্দায় গেলে দৃশ্যটা স্পষ্ট চোখে ভাসে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১২
১৯টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×