somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কখনো কিছু ছিলো না... (উৎসর্গ : সমগ্র মুক্তিযোদ্ধাদের)

২২ শে অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা কবিতা লেখার খুব ইচ্ছা হলো। লিখতে শুরু করলাম, কিন্তু শেষ করতে পারছি না ! তাই ভাবছি প্রতিদিন একটু একটু করে লিখবো আর লিখবো...


আমার কিছুই ছিলো না; নিতান্ত স্বপ্নহীন যুবকের মতো হাঁটছিলাম
এই বাংলার চির সবুজ মোহময় পথ ধরে... এক লাজুক কিশোরীর
সমুদ্রে ডুবসাঁতার কেটে হয়ে উঠছিলাম স্বপ্নগ্রস্ত। কিন্তু এইসব স্বপ্নের
অলীক মোহে খুব দীর্ঘকাল হতে পারলাম না স্থির ! যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল
এক ভীষণ যুদ্ধ... নিঃশ্বাস ফেলবার সময়টুকুও ছিলো না আমার।
কাশফুলের মতো মসৃণ কাঁধে লাফিয়ে উঠলো রাইফেল... ভারতে
শিখলাম যুদ্ধের কৌশল; কিন্তু এটাও জানি - যুদ্ধের আসল অস্ত্র হলো
হৃৎপিণ্ড। শুধু প্রয়োজন সেটার সঠিক ব্যবহার... এক প্রবল ঘৃণা।
শুধু ঘৃণাই দুমড়ে-মুচড়ে বিনাশ করে দিতে পারে শকুনের ঝাঁক !
মনে পড়ে, সেই যুদ্ধের অবেলায় রক্তলোভী হায়েনারা ধ'রে নিয়ে
গিয়েছিলো, সদ্য স্কুল পড়ুয়া কিশোরীটিকে... আমি নপুংসকের মতো
কেবল দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, ভীত চোখে, চোখে সুরমা দেয়া, মাথায়
টুপি পরা কয়েকজন বিষম রাক্ষস লোলুপ দৃষ্টিতে দর-কষাকষি করছিলো
সেই কিশোরীর কচি ধানের মতো স্বচ্ছ শরীর বেয়ে আজ রক্তের বন্যা
বইয়ে দেয়া হবে; সঙ্গমলিপ্সু প্রাচীন পাকিস্তানি কুকুরের দল ছিঁড়ে
ছিঁড়ে খাবে কিশোরীর রক্ত-মাংস ! আমি কিছু্ করতে পারি নি; না...
আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। তবে বুঝে উঠছিলাম কেবল... সেই
২৫ মার্চের রাতেই স্থির হয়ে গিয়েছিলো; জল-কাদা-বৃষ্টির সবুজ গ্রাম
ছেড়ে পাড়ি দিলাম রণক্ষেত্রে। একটা ময়লা লুঙ্গি, হাফ-হাতা সবুজ সার্ট
আহা ! কতবার যে ছিঁড়ে গিয়েছে; নাকের 'পর দিয়ে চলে গেছে তীরের
মতো ছুটে আসা শত্রুর বুলেট... হিসেব নেই। মনে পড়ে, কামানের
গোলা বৃষ্টির মতো ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছিলো এক নবীন সহযোদ্ধাকে।
আমি ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, মরি নি, মৃত্যুভয় ফুলের পাঁপড়ির মতো
ছিঁড়ে গিয়েছিলো। খুব কাছাকাছি এসেও কিছু করতে পারিনি, কিছুই করতে পারিনি... সশস্ত্র এক মুক্তির যোদ্ধা হয়েও আমাকে ডুকরে কাঁদতে
হয়েছিলো। সঙ্গীর বিমর্ষ লাশের ওপর সারি সারি লাল পিঁপড়ের দল উদভ্রান্তের মতো হাঁটছে, হেঁটেই যাচ্ছে, কোনো ক্ষোভ নেই, ক্লান্তি নেই, মৃত্যু নেই, স্বপ্ন আছে ! দেশকে স্বাধীন করতে হবে, রক্তলোভী পশুদের হাত থেকে কেড়ে নিতে হবে সবুজ-লাল পতাকা, এই স্বপ্ন বুকে বেঁধে আবারো অস্ত্র তুলে নেই, পরের দিন, সাথে তিনজন সহযোদ্ধা, আছে প্রাইমারি স্কুল পড়ুয়া এক কিশোর, যে গোপন খড়ের গাদায় লুকিয়ে দেখেছে- বোনের শ্লীলতাহানি, মায়ের আর্তচিৎকার, ধর্ষণ... ধর্ষণ কেবল... ঘৃণা আসে, মুখ ভর্তি ঘৃণা... দেশমাতার বুকের ওপর দাঁড়িয়ে পিশাচগুলোকে কেবলই ধর্ষণ করতে দেখি, আরো এক লুক্কায়িত ক্রোধ ঝিলিক দিয়ে ওঠে আমার গোপন অভ্যন্তরে, বুকের খুব ভেতরে...

(চলবে)

ছবিটা ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১:৪২
১৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×