somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : M

০২ রা আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারো সঙ্গে হারিয়ে গেলেও চিহ্ন খুঁজে পাবে গাঢ় কুয়াশার বন
অন্ধকার পাথরে আগুন জ্বেলে নিঃসঙ্গ জোনাকি দেখাবে আলোর পথ
এখানে ফেরারি বেলাভূমির' পর স্থির হয়ে আছে হারানো পদচ্ছাপ
জলের শব্দে উঠছে জেগে বহুদিনের পুরনো হারমোনিকা-সুর
দুঃস্বপ্ন কয়লাখনির দেয়ালে ডানা মেলে উড়ছে বহুদূর...

নিমগ্ন, ক্লান্ত, নিঃস্তব্ধ হাহাকারে বিমুগ্ধ কিশোরী
পাথরের ছায়াপথে আঁকছে সমগ্র কষ্টের স্মৃতি...


শেষের লাইনটা আর মেলাতে পারি না... একসময় বুকের ভেতরের চাপা কষ্টগুলো স্বত:স্ফূর্তভাবে উঠে আসতো কবিতায়... আজ সমগ্র শরীরে রক্ত, রস, অস্থি-মজ্জা নিঙড়েও শেষের লাইনটা মস্তিষ্কের নিউরোন স্পর্শ করতে পারে না। আমার নার্ভ সিগন্যাল কী নষ্ট হয়ে গ্যাছে? এক বিক্ষত ভালোবাসার চিহ্ন বুকে এঁকেও ওকে ধরে রাখতে পারি নি... এখানেই আমার ব্যর্থতা, এখানেই হারানোর সুখ! আজো অন্ধকারে ওর আলোকিত মুখটা ভেসে ওঠে... হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করতে গেলেই মনে পড়ে যায় আমার ধ্বংসের ইতিহাস। আমার পরাজয়ের নষ্ট কাহিনী। জীবনে কখনো একবুক ভালোবাসা নিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিতার সামনে দাঁড়াবো... ঘন্টার পর ঘন্টা, মিনিট, সেকেণ্ড তার বাড়ির সামনের গলিতে, আশপাশের কোনো কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে... অপেক্ষমাণ ঘাসখেকো গবাদিপশুর মতো, বৃষ্টিভেজা কাকের মতো... কিংবা আবিষ্কারের নেশায় উন্মত্ত কোনো মহান (!) বৈজ্ঞানিকের মতো খুঁজবো সেই মুখ... নাহ্ আর মেলাতে পারি না। বারবার ক্ষতচিহ্নে আঘাত করে যাচ্ছে স্মৃতি নামের স্বার্থপর এক সিনেমা... ভালোবাসা নামের মানসিক ব্যধি... যা সংক্রমিত হয়ে রক্তে ঢুকিয়েছে বিষ... আমার অলিন্দ-নিলয়, আর্টারি সবকিছুই কেমন যেন নিঃস্তব্ধ হয়ে আসে...

হেরোইনের সিরিঞ্জটা হঠাৎ গড়িয়ে পড়ে অন্ধ গলির মতো দীর্ঘ মেঝেতে...

২.

M- এই আদ্যক্ষর দিয়েই শুরু করা যাক এক মৃত প্রেমের কাহিনী। এক ধ্বংসের কাহিনী। ভুলটা আমারই ছিলো। কোনো এক শীতের রাতে ওর ভারি কণ্ঠস্বর শুনে মনে হয়েছিলো স্বচ্ছ হারমোনিকা-জলের সিম্ফনি... কিংবা অ্যাকুস্টিক গিটারের টুংটাং... M তোমার জীবনের ভেতরেই লুকিয়ে ছিলো এক কিশোরের মৃত্যু... তোমার ভালোবাসায় স্নাত এক কিশোর মানিব্যাগে জমানো কষ্টের টাকা নিয়ে রোজ চলে যেত তোমাকে একটাবার দেখার প্রতীক্ষায়... ভালোবাসাই ছিলো যার সবচাইতে বড় অস্ত্র। যখন তুমি রাগ করে সিগারেট ধরাতে, পাড়ার বখাটে ছেলেগুলো যখন তোমায় দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাতো... সেই ছেলেটা তোমার হাতের সিগারেট কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতো পিচের রাস্তায়... তোমার অশ্রুভেজা মুখ দেখে শিউরে উঠতো... কখনো সহ্য করতে না পেরে চড়-থাপ্পড়... আর তুমিও পায়ের স্যান্ডেল খুলে...

আজ তার হাতেও জ্বলে ওঠে আগুন... একটা সিগারেট আর ভেতরের মশলা ফেলে দিয়ে গাঁজার পাতা ভরে ধোঁয়াশা ঘেরা অপার্থিব জগৎ... যেমনটা তোমার বখে যাওয়া থিয়েটার-এর আপুরা করতো, তুমিও শখের বশে দু-এক বার... ধরে নাও আজ আমিও সেরকম একজন। চার পর্বে শেষ হবে আমার এই জীবন...

পর্ব-১ : সিগারেট

প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো। কষ্ট ভুলতে সিগারেট ধরানো শিখলাম। বাবা চেইন স্মোকার হলেও তীব ঘৃণা ছিলো এই জিনিসটার প্রতি। ধূমপান জীবনে করবো না-এই প্রতিজ্ঞাও করেছিলাম। মা, আমি সেটা ধরে রাখতে পারি নি। আর দশটা ব্যর্থ রোমিওর মতো আমিও সিগারেটের আগুনে জ্বলে উঠলাম আত্মধ্বংসের খেলায়...

দুঃখিত M আমার সেই ধ্বংসের দৃশ্যটা তুমি দেখেও না দেখার ভান করেছো...


পর্ব-২ : গাঁজা

কাঁটাবনের কোনো এক পেট হাউসে বসে প্রথম গাঁজা সেবন আমার... খুব কষ্ট হয়েছিলো সামান্য এক ওষধি গাছের পাতায় নিজেকে পোড়াতে... শ্মশানঘাটের ছাইয়ের মতো আমার ধূসর জীবন উড়তে লাগলো অনিশ্চয়তার শেকলবন্দি কারাগারে...

দুঃখিত M সেই সময়টায় তুমি ব্যস্ত ছিলে তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে... আর আমি তোমার জন্য নিজের জীবন ধ্বংসের খেলায় বেশ মজা পাচ্ছিলাম!

পর্ব-৩ : ফেনসিডিল

এই তরল বিষ... এই জঘন্য পানীয়... আমার ভেতরের পবিত্র কিশোর মনকে স্পর্শ করতে পারে নি... কিন্তু আমার শরীরকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছিলো...

দুঃখিত M ঐ ছেলেটার হাত কি আমার চাইতে শক্ত ছিলো? তার মানিব্যাগ কি বেশ ভারি ছিলো?

শেষপর্ব : হেরোইন

জীবনের শেষ কবিতাটার শেষ লাইনটা মেলাতে পারছি না... M... ঘুমে চোখ ভারি হয়ে আসছে। সবচাইতে মারাত্মক ড্রাগসটায় অভ্যস্ত হতে আমার এতটুকুও খারাপ লাগে নি... দু-একবার মা'র মুখটা মনে পড়েছে মাত্র! আর তুমি তো তখন ব্যস্ত তোমার শোবিজ নিয়ে... তোমার ফটোগ্রাফার আর ফ্যাশন ডিজাইনারদের নিয়ে... আর এই সাদা পাউডার নিয়ে আমি নিজেকে নিঃশেষ করতে থাকি রাত জেগে... একসময় জোর গলায় তোমাকে বলতাম, আর কখনো সিগারেট খাবি? একদম চড় দিয়ে... আজ আমি নিজে তিল তিল করে ধ্বংস হয়ে গেছি।

খুব ভালো লাগছে। আমার এই করুণ পরিণতি তুমি কখনোই জানবে না... একজন অনন্যসাধারণ কিশোরের ভালোবাসা, পাগলামির আর প্রয়োজন নেই। তোমাকে ধিক্কার জানাবো না M... আর কখনো দাঁড়িয়ে থাকবো না অপেক্ষমাণ পশুর মতো... সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা নিয়ে...

আমার কবরে তোমার একফোঁটা অশ্রু...

ধ্রুব
বয়স : ১৯ বছর
উচ্চতা : ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি
শিক্ষাগত যোগ্যতা : এইচ.এস.সি
জন্ম : ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯০
মৃত্যু : ০১ আগস্ট ২০১০

A boy who was ruined by drugs for his lost love... Love was his only identity... Madness was his hobby...

May his soul rest in peace!


(কাল্পনিক)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৪৭
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×