somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামায়াতে ইসলামের প্রসবলাভকালীন সময়ের ও কিছু পরের অল্পস্বল্প কথা

০৩ রা জুন, ২০১২ রাত ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরু থেকেই এই দলের সংগঠক ছিলেন ও নেতা ছিলেন মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। এই মওদুদী তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুর আগে উরদু মাসিক 'তরজুমাতুল কোরআন' নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। এই মাসিকের মাধ্যমেই তিনি তার মতাদরশ প্রকাশ ও প্রচার করতেন। আল্লাহর রাজত্ব প্রতিস্টার আদরশিক দিকগুলো নিজের মতো ব্যাখ্যা করে প্রকাশ করতেন। তিনি লিখতেন বংশ, জন্মভুমি, ভাষা ও বরণ এসবের ভিত্তিতে তৈরি জাতীয়তা মানব জাতির জন্যে এক বিরাট ও ভয়াবহ বিপদের কথা এবং এই সবই হচ্ছে অশান্তি, বিশ্রিংখলা, নিরাপত্তাহীনতা ও হানাহানির চির উতস। এগুলোই হলো খোদার সবচেয়ে বড় অভিশাপ ও শত্রু এবং এগুলো শয়তানের সারথক হাতিয়ার, যার দ্বারা শয়তান তার আদি দুশমন ইসলামকে নিপাত করে।
১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব বা পাকিস্থান প্রস্তাব গ্রহন করার পরে মাওলানা মওদুদী তার 'তরজুমাতুল কোরআন' পত্রিকার অফিসে তার সঙ্গে সুসম্পরকিত ও সমমনাদের একটি মিটিং ডাকেন। সেই মিটিং এ ৭৫ জন উপস্থিত ছিলেন। এই মিটিং ই সম্মেলনে পরিনত হয়ে ৪ দিনব্যাপি স্থায়ী অধিবেশন শেষে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীকে আমীর নিরবাচন করে ১৬ সদস্যবিশিস্ট মজলিশ-ই-শুরা নামক কেন্দীয় কমিটি গঠিত হয়। দলের আমীরকে প্রায় সরবময় ক্ষমতার অধিকারী করে গঠনতন্ত্রও গ্রিহীত হয়। জন্মলাভের শুরু থেকেই ধরমীয় উন্মাদনা স্রিস্টিকারী এই দলটি গঠিত হয় ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট ব্রিটিশ ভারত আমলে। নাম ছিল জামায়াতে ইসলাম হিন্দ।
প্রতিস্টার পর থেকেই মাওলানা মওদুদী মুসলিম লীগ, কংগ্রেস ও এইসব দলের নেতাদের চরম বিরুদ্ধাচরন এবং পাকিস্থান আন্দোলনের বিরুদ্ধে পত্রিকা ও দলীয়ভাবে মাঠে নামেন।
মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী ব্যাপক বিলাসী জীবন যাপন করতেন। সেজন্য ১৯৪২ সালের মজলিশ-ই-শুরার বঠকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হয় ও পদত্যাগের তুমুল দাবি উঠে। কিন্তু এই বৈঠকে কোনোরকমে দলীয় আমীরের পদটি রক্ষা করতে সক্ষম হন।
১৯৪২ সালের অক্টোবরে মাওলানা মওদুদী দলের ভিতরে তার একক আধিপত্য বজায় রাখার লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় অফিস লাহোর থেকে সরিয়ে ইস্ট পাঞ্জাবে নিয়ে যান।
১৯৪৭ সালের ১৭ এপ্রিল দলের পাঠানকোট বৈঠকে সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করা হয় মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদকে। এই বৈঠকেই দলের সদস্যদের আরবী ভাষায় কথা বলার অভ্যাস তৈরির স্বিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৯৪৫ সালের ১৯ থেকে ২১ এপ্রিলে পাঠানকোটে দলের প্রথম রোকন সম্মেলন অনুস্টিত হয়। তখন দলের রোকনের সংখ্যা ৭৫০ জন এবং আঞ্চলিক শাখা কমিটি ছিল ৩৭টি। এই রোকন সম্মেলনেও অতি বিলাসী জীবন যাপনের কারনে মাওলানা মওদুদীর তীব্র সমালোচনা ও বিরোধীতা করা হয়, কিন্তু আগেরবারের মতোই পদ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হন অতি ধুরন্ধর মাওলানা মওদুদী। এবং এই মাওলানা মওদুদীর বিরোধীতা করায় ৬টি আঞ্চলিক শাখা কমিটি ও ৪০০ জনের সদস্যপদ বাতিল করা হয়।
১৯৪৬ সালে এলাহাবাদে অনুস্টিত হয় দ্বিতীয় রোকন সম্মেলন এবং ১৯৪৭ সালের ৯ ও ১০ মে তারিখে পাঠানকোটে অনুস্টিত হয় নিখিল ভারত জামায়াতে ইসলামের রোকন সম্মেলন। এই সম্মেলনে মাওলানা মওদুদী ধরমনিরপেক্ষতা, মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর ভাষন দেন এবং রুখে দাড়ানোর কথা বলেন। এই বক্তব্য প্রদানের পরে তার দলেরই কিছু উদারপন্থীরা তার প্রাননাশের চেস্টা চালিয়েছিল বলে প্রচার করা হয়।
১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্থান ও ভারত স্বাধীনতা লাভ করলে মাওলানা মওদুদী পাকিস্থান চলে যান। সেসময়ে জামায়াতের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৩৩ জন। ভারত থেকে মাওলানা মওদুদীর সঙ্গে পাকিস্থান চলে যান মাত্র ৩০৬জন সদস্য।
১৯৪৮ সালের মারচ মাস থেকে পাকিস্থানে জামায়াতে ইসলাম পাকিস্থান যাত্রা শুরু করে।
এখানে শুধু জামায়াতে ইসলামের প্রসবলাভ ও তারপরের কছুদিনের কথা লেখা হয়েছে। জন্মকালীন সময়ের কথা লেখার উদ্দেশ্যেই অন্যান্য অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয় লেখায় স্থান পাওয়ার অধিকার রাখলেও আরেকদিন সেবিষয়ে লেখার ইচ্ছে রইল। পবিত্র ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা এবং অনেক বুজুরগ আলেমগন মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারির বিষয়গুলোও অত্যান্ত গুরুত্বপুরন।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×