somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেয়াল!!!!!

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চুপচাপ সেই মেয়েটিঃ

সবাই বলে আমি নাকি একটু বেশি অহংকারি, কিন্তু আমি মোটেই ওরকম না। হ্যাঁ, আমি একটু কম কথা বলি, সবার সাথে মিশতে পারিনা। এ জন্যই হয়তো আমি সবার চোখে একটু মুডি। মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ি, পাওয়ারও -৫ এর কাছাকাছি। তথাকথিত ভালো ছাত্রীদের লিস্টে আমার নাম সবার উপরেই থাকবে। বাবা-মাকে খুবই ভয় পাই, তাদের অনেক বেশি ভালও বাসি।

দুরন্ত এক বালকঃ

দুরন্ত, দুষ্টের শিরোমণি, লঙ্কার রাজা বলতে যা বুঝায় আমি সেই ক্যাটাগরিতেই পড়ি। পড়াশুনার খুব একটা ধার আমি ধারি না, একটু-আকটু পড়াশুনা করি আর তাতেই আমার পাস হয়ে যায়। বন্ধু, বড়ভাই-ছোটভাই মহলে আমার একটা চাহিদা সবসময়ই থাকে- হয়তো আমার দুষ্টুমির জন্যই আমাকে সবাই পছন্দ করে। আর আমার বাবা-মা? ওরা তো বলে- “তোকে জন্ম দেয়াই ভুল হয়েছে, এত দুষ্টুমি মানুষ করে?” কিন্তু ওদের মনের কথাগুলো তো আমি পড়তে পারি...

চুপচাপ সেই মেয়েটিঃ

ক্যাফেটেরিয়ায় সাধারণত আমি যাই না, বড়ভাই, ব্যাচমেট এমনকি জুনিয়র ছেলেগুলোও আজকাল কেমন যেন আড়চোখে তাকিয়ে থাকে। তবুও আজ বাধ্য হয়েই আসতে হল। আর ক্যাফেটেরিয়াতে ঢুকতে না ঢুকতেই সবগুলো চোখ যেন আমার দিকেই...উফফ অসহ্য!!! তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল- ক্যাফেতে খাচ্ছি এমন সময় এক ছেলে এসে জিজ্ঞেস করল- “আপু তোমার কাছে টিস্যু হবে?” কথা যেন না বাড়ে এজন্যে ব্যাগে টিস্যু থাকার পরও বললাম, “সরি নেই”। এই কথা শুনে ছেলে হাসতে হাসতে বলে কিনা - “সত্যিই তুমি একটা সেলুকাস!!” ‘সেলুকাস’ শব্দটির অর্থ আমি জানি না। ওইদিন রুমে ফিরে ডিকসনারি খুঁজেও অর্থ পেলাম না।

দুরন্ত এক বালকঃ

আজ আমার সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হল। ভার্সিটির সবচেয়ে মুডি মেয়েটিকে আজ রীতিমত খাবি খাইয়ে দিয়েছি। কিন্তু মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- “ও কি আমার অপমান করাটা আদৌ বুঝতে পেরেছে?”

চুপচাপ সেই মেয়েটিঃ

আজ বদমাইশটা একটা জলজ্যান্ত স্কেচ নিয়ে আমার সামনে হাজির, স্কেচটা আমারই। কিন্তু আমার এত সুন্দর চোখের ১৩টা বাজিয়েছে বজ্জাতটা। চোখগুলো ইয়া বড় বড় করে দিয়েছে... মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছে। দাঁড়াও বাছাধন তোমার ইটের জবাব এমনভাবে দিব!!! আর জীবনেও আমার সামনে দাঁড়াতে সাহস হবে না।

দুরন্ত এক বালকঃ

দুষ্টুমি অনেকখানিই কমিয়ে দিয়েছি। এতদিন তো মানুষের কাছে বজ্জাত, হতচ্ছাড়া, পাজির-পাঝারা এইসব শুনে এসেছি। আর কত ভালো লাগে? হলে প্রতিদিন ডাল-ভাত খেতে খেতে যেমন টেস্ট নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি এই নেতিবাচক শব্দের সম্বোধন শুনতে শুনতে কান ব্যথা হয়ে গিয়েছে। এখন মাঝে মাঝেই প্রশংসা শুনতে খুব ইচ্ছে করে প্রায়ই।

চুপচাপ সেই মেয়েটিঃ

ওই পাজি ছেলেটা- আমাকে ক্যাফেতে যাচ্ছেতাই বলেছিল যে ছেলে ওর ব্লাড ক্যান্সার। খুব বেশিদিন হয়তো বাঁচবে না। আমাকে কোনদিনও বলেনি, এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম। পরের বার সামনে আসুক আমার। ‘এত কম সময়ের জন্যে কেন আমার জীবনে এসেছিলি তুই?’ এই প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত কোথাও ওকে যেতে দিব না।

দুরন্ত এক বালকঃ

আজই হয়তো ওর সাথে আমার শেষ দেখা হল, ওর চোখের কোণায় হয়তো একটু শিশির বিন্দু জমেছিল। কিন্তু ও এতই চালাক যে সবসময়কার মতো সেই মোটা গ্লাসের চশমা পড়ে এসেছিল, যেন আমি বুঝতে না পারি। চলে আসার সময় রীতিমত জোর করেই আমার হাতে হুমায়ূন আহমেদের “দেয়াল” ধরিয়ে দিল। বইটা ও পড়ার জন্য দিল নাকি আমাদের দুজনের মাঝে একটা দেয়াল তৈরি করে দিল?- এ প্রশ্ন হয়তো কোনদিনই ওকে করা হবে না।


৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×