somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুভব একটি শক্তি

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ছাড়া অর্থহীনভাবে কিছু ভালোবাসা চলতে থাকে। ভালোবাসায় অনুভূতির স্বচ্ছতা ভিন্ন আর কি অর্থ থাকতে পারে সেটাও একটা ভাবার বিষয়। কি কি ঘটলে অর্থপূর্ণ মনে হবে সেটা একটা জটিল প্রশ্ন। সময়ের কুলে অসংখ্য; নিদেনপক্ষে কিছু ঘটনা থাকতেই হবে? পারস্পরিক আদান-প্রদান, হতে পারে সেটা বস্তুগত, জীবন দাবী, সময় দাবী, স্পর্শজাত যা শক্তির প্রবাহ ঘটায় চেতনে-অবচেতনে। এমন কিছু হলেই কি অর্থপূর্ণ বলা যাবে ? একটা বিশাল কল্পনা আনন্দের স্ফুরণ ঘটায় চিত্তে। অনুভবের সাগরে দোলা দেয়। শক্তির প্রবাহ বটেই; নয়তো ভাবনা এবং অনুভব গতিশীল হত না। কিন্তু তাতে বস্তুজগতে কোন ক্রিয়াটি ঘটে? সেটি কি পরোক্ষ? বোধহয়। কারণ চিত্তে আনন্দ থাকলে বাহিরের কাজ শান্তি নিয়ে করা যায়। কিন্তু বাহিরের কাজটি যদি প্রচণ্ড রকমের অপছন্দের, গ্লানির বা ক্লিশে হয় ? তাহলে সেটি চিত্তের ওই শক্তিটাকেও রূপান্তর করতে থাকে, যার মানে হল ভেতরের শক্তি ক্ষয়। বিজ্ঞানের সাথে এই শক্তিকে মেলানো যাবে না। কারণ বিজ্ঞান পরীক্ষালব্ধ মানতুল্য ক্লাসিফায়েড অনুভূতি চেনে। যেমনঃ ঠাণ্ডা, গরম, মিষ্টি, তেতো ইত্যাদি। কিন্তু সঙ্গম শেষে বীর্য স্খলনের সুখানুভূতির কোন ক্লাসিফায়েড সংজ্ঞা তার কাছে নেই। ক্রিয়াকারীই বোঝে সেই অনুভূতি কেমন।



অনুভূতি প্রকাশের তাড়নায় এই বিষয় নিয়ে কবিতা, গল্প, গান, নাচ, চিত্র, ভাস্কর্য, সিনেমা ইত্যাদি শিল্পের যে মাধ্যমই কেউ বেছে নিক না কেন, বিজ্ঞানের কাছে তার কোন ভিত্তি নেই। কারণ বস্তুগত মানতুল্য বিষয় ছাড়া বাকি সব কিছু বিজ্ঞান অস্বীকার করে। বিজ্ঞান বলে ভালোবাসা হল শারীরিক আকর্ষণ, দেহের চাহিদা। মনের লাগান বলতে অযৌক্তিক কিছু এখানে নেই। প্রশ্ন হল, সেই শারীরিক আকর্ষণের ফলে রতিক্রিয়া যে ঘটে, সেটার বীর্য বস্তুগত হলেও অনুভূতির কোন মানতুল্য ব্যাখ্যা দেবে বিজ্ঞান? মানুষে মানুষে মিথস্ক্রিয়া এবং মমতা অনুভূতির কোন সংজ্ঞা বিজ্ঞান দিতে পারে না। মনোবিজ্ঞান এটা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু সেই কাজ বিস্তর ঘোলাটে। এই উদাহরণটাকে বাজে মনে করলে, যদি মাতৃস্নেহের উদাহরণ দেই। মায়ের ভালোবাসা কোন বস্তুগত জিনিস ? কি তার নিরেট যুক্তি ? নাড়ি ছেড়া ধন! তো এই নাড়ি ছেড়ার ফলে কি সঞ্চালিত হয়, তা কি দেখা যায় ? শরীরে ঘটা বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া ? এই ক্রিয়া-বিক্রিয়ার প্রভাবক কি? জন্মদাত্রীর নাহয় শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তাই তিনি মমতা অনুভব করেন, কিন্তু জন্ম না দিয়েও বড় করার সূত্রে যিনি মা হন তিনি কোন বিক্রিয়ার ফলে স্নেহ-মমতা অনুভব করেন!?



যদি বলা হয় বিজ্ঞানীরা এবং যুক্তিবাদীরা আবেগ তাড়িত হয় না, তাঁদের মায়া-ভালবাসা, কষ্ট এসব অনুভূতি নেই, তাহলে তাঁদের জন্য রতিক্রিয়ার সেই বীর্য স্খলন মুহূর্তের সুখানুভূতির প্রশ্ন রইলো। যদি বলে, এটা প্রাকৃতিক চাহিদা। হলই বা। কোন অনুভূতি ছাড়াই স্বপ্ন দোষে সেই চাহিদা মিটতে পারতো। কিন্তু স্বপ্নেও সে অনুভূতি প্রাপ্ত হয়।যদি বলে, প্রকৃতি বংশ বিস্তারের প্রয়োজনে এই ব্যাবস্থা করেছে, তাহলে নিশ্চিতই প্রকৃতির একটা শক্তি আছে। এসব তর্ক ছেড়ে দিলেও, তাঁরা কি অনুভূতি যে হয়েছে অর্থাৎ অদৃশ্য হলেও অনুভূতির উপস্থিতিটা অস্বীকার করতে পারবে ! বলা বাহুল্য, মস্তিষ্কের সব কার্য-প্রণালী বিজ্ঞান জানে না। গবেষণা চলছে, একদিন জানা যাবে কেন মানুষ মায়া-ভালবাসা অনুভব করে, কেন রাগ-ঘৃণা অনুভব করে, কেন কল্পনা করতে ভালোবাসে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সেটা যেদিন ঘটবে সেদিন পুরো পৃথিবী স্থবির হয়ে পড়বে। এর কারণ বিভিন্ন প্রকার মানব অনুভবই এই পৃথিবীর বিশাল কর্মযজ্ঞের চালিকাশক্তি। এক একটা অনুভব থেকেই প্রতিটা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে। মানুষ যদি জেনে যায় ‘ভালো লাগছে না’ এই অনুভূতির কারণ মস্তিষ্কের কোন রাসায়নিক পদার্থ বা বিক্রিয়া বা হরমোন তাহলে আক্রান্তরা বাড়ির পাশের ফার্মেসী থেকে সেটার এন্টিডোট কিনে এনে খাবে। সন্তান মারা গেলে কষ্ট না হওয়ার জন্য মা-বাবারা কষ্টের বিপরীত ওষুধ এনে খাবে। অমানানসই কারো প্রেমে পড়লে অভিভাবকরা প্রেমানুভূতি কাটানোর কেমিক্যাল এনে খাইয়ে দেবেন। যে লিপ্সা বা কু-অনুভুতি থেকে পৃথিবীতে যুদ্ধগুলো হয় সেই লিপ্সা কাটানোর বিপরীত রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োগ যুদ্ধগুলো বন্ধ করে দেবে। লিপ্সা বন্ধ হয়ে গেলে শোষিতরাও আর শোষিত হবে না। ভয়ঙ্কর পুরুষ অনুভূতির বিপরীত ড্রাগের প্রয়োগে পুরুষরা নারীদেরকে ভীষণ সম্মান করবে। আক্ষরিক অর্থেই সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে!!!



এগুলো ঘটলে কি পৃথিবীতে আসলে আর কোন কাজের অবকাশ থাকবে? বোঝাই যাচ্ছে মস্তিষ্কের এই অংশগুলোর তথা মানবানুভূতির রহস্যের বৈজ্ঞানিক কারণ উদ্ধার পৃথিবীর জন্য কতটা ভয়াবহ একটি ব্যাপার। এবং আমার দৃষ্টিতে প্রকৃতপক্ষে অবাস্তব বিষয়। আর সেই সময়ও কি অনুভূতি কোনদিন দেখা যাবে? বাতাস দেখা যায় না, কিন্তু তার অনু পরমাণু আছে, যন্ত্রের সাহায্যে সেগুলো দেখা যায়। মানুষের কষ্ট এবং মায়া অনুভূতির কি অনু পরমাণু আছে যা যন্ত্রে দেখা যাবে ? আর দেখা গেলে সেটা ওই উপরোক্ত অবস্থার মতই হবে। শক্তি দেখা যায় না, কণা বা তরঙ্গ আকারে প্রবাহিত হয়। প্যাকেট আকারে হয় সেটাও বলা হচ্ছে। সকল জীবের বেঁচে থাকার জন্য শক্তি প্রয়োজন। নানাভাবে শক্তির রূপান্তর হচ্ছে অহর্নিশি। চারটি মৌলিক বল বিজ্ঞান ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমার মনে হয় মানব অনুভূতিও সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ধরণের মৌলিক বল। যে বল থেকে উৎপন্ন শক্তির তাড়নাতেই পৃথিবী জুড়ে এত কর্মচঞ্চলতা। কবিরা, শিল্পীরা মোটকথা সৃজনশীল মানুষেরা যে শক্তির তাড়নাতেই জীবনভর অস্থিরতায় ভোগেন। তাঁরা কাজের মাধ্যমে শক্তির রূপান্তর ঘটানোর প্রয়াস পান। তাঁদের বাদ দিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ক্রমাগত সুখদুঃখের বৃত্ত, অকারণ অসংখ্য কার্যকলাপ, কারো কারো ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী ‘ভালো না লাগার’ খপ্পরে পড়ে থাকা এসব কিছুই ঘটে সেই অনুভব শক্তির রুপান্তরের প্রয়োজনে। মানুষ বাদে অন্য প্রাণীতেও এই বল তথা এই অনুভব শক্তি অবশ্যই আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:২৮
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×