somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাংক ডাকাতি

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( স্মৃতির পাতা হইতে )

অামি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়িতাম, বয়স তেরো কী চৌদ্দ । অামাদের বিদ্যানিকেতনটি অবস্থিত ছিলো প্রত্যন্ত এক গ্রামে, অামাদের বাড়ি হইতে প্রায় দুই-অাড়াই কিলোমিটার দূরে । প্রত্যেহ হাঁটিয়া, লুঙ্গি পরিয়া বিদ্যানিকেতনে যাইতাম ।
একদিন বিদ্যানিকেতনে গিয়া শুনি উথুরা বাজারে ডাকাত ধরা পড়িয়াছে (উথুরা অামাদের ইউনিয়নের নাম, তৎসংলগ্ন বাজারকে উথুরা বাজার বলা হয়)। সহপাঠিদের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্য-উৎফুল্লতা দেখা দিলো । অামি কখনো ডাকাত দেখি নাই, বয়স অল্প- স্বভাবতই অামিও সবার সঙ্গে ডাকাত দেখিতে চলিলাম ।
নারাঙ্গী চৌরাস্তা হইতে নারাঙ্গী বাজার (নারাঙ্গী অামাদের গ্রামের নাম), নারাঙ্গী বাজার হইতে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখিলাম, রাস্তায় একখানি মাইক্রোবাস দাঁড় করানো অাছে । রাস্তা-ঘাট সব বদ্ধ! কোনো প্রকার গাড়ি চলাচল করিতে পারিতেছিলো না ।
মাইক্রোবাসের ভিতরে উঁকি দিয়া তালাবদ্ধ একখানি বৃহৎ ট্রাঙ্ক দেখিলাম, ওইখানেই ছিলো লুন্ঠিত সব টাকা; পাশেই কিছু মিষ্টান্নের প্যাকেট । ডাকাতেরা টাকা লুন্ঠনের খুশিতে বোধহয় মিষ্টান্ন কিনিয়াছিলো । অাফসোস, তাহাদের মিষ্টি খাওয়ার সুযোগ হয় নাই ।
রাস্তার বাম পাশে কয়েকজন পুলিশ গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করিতেছিলেন । একটু সম্মুখে অাগাইলাম । লোকমুখে শুনিলাম, অনন্যেপায় হইয়া বাম পাশের পথটি ধরিয়া ডাকাতেরা পালাইতে চাহিয়াছিলো । কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে পথ শেষ হইয়া গিয়াছে । ওটা যে অসম্পূর্ণ পথ অচেনা ডাকাতেরা কী করিয়া চিনিবে? অতঃপর মাইক্রোবাস হইতে নামিয়া যে যাহার মত দৌড়াইয়া পালাইতেছিলো ।
ইতিমধ্যে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হইয়াছিলো যে, গ্রামে ডাকাত পড়িয়াছে । ঘোষণাটি অতি দ্রুত রাষ্ট্র হইয়া যায় । লোকজন ডাকাতদের কয়েকজনকে ধরিয়া ফেলে । তাহার পরের কাহিনী অত্যন্ত করুণ । লোকজন যাহাদিগকে ধরিয়াছিলো, একজনকেও বাঁচিতে দেয় নাই । বাঁশ দিয়া পিটাইয়া পিটাইয়া হত্যা করে । একজন কর্দমাক্ত ধানখেত ধরিয়া পালাইতেছিলো, লোকজন তাহাকে ধানখেতেই পুঁতিয়া রাখে, একজনের মাথার মগজ গলাইয়া ফেলে, একজনের অন্ডকোষ পিষাইয়া দেয়, একজনের চক্ষু খুলিয়া ফেলে । জনৈক গৃহস্থের অনুকম্পায় একজন অবশ্য বাঁচিয়াছিলো, পুলিশ অাসিয়া পড়ায় অারো একজনকে জেলা পরিষদের এক কক্ষে বন্দি করিয়া রাখা হয় ।
উথুরা বাজারে গিয়া দেখি মৃতদেহগুলো সারি সারি করিয়া ট্রাকে সাজানো হইয়াছে । যেন রক্ত-মাংসের স্তুপ! মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কী করিয়া হয়? লাশগুলোর দিকে চক্ষু বোলাইয়া স্থির থাকিতে পারিলাম না, সঙ্গে সঙ্গেই নামাইয়া রাখিলাম । এমন বিকৃত চেহারা অামি কখনো দেখি নাই ।
ডাকাতেরা ময়মনসিংহ শহরের সোনালি ব্যাংক কর্পোরেট শাখা হইতে এককোটি সত্তর লক্ষ টাকা লুট করিয়া ঢাকা অভিমুখে ফিরিতেছিলো । অকস্মাৎ পুলিশ তাহাদের পিছু নেয় । ত্রিশাল অতিক্রম করিয়া ভরাডোবা অাসিয়া ভরাডোবার ভিতর দিয়া সাগরদীঘির দিকে পালানোর চেষ্টা করিয়াছিলো ডাকাতেরা । উথুরার সন্নিকটে অাসা মাত্রই উত্তেজিত জনতা লাঠিসোটা হস্তে রাস্তায় নামিয়া অাসে, শাল কাষ্ঠ ফেলিয়া রাস্তা অবরোধ করিয়া রাখে ।
অাশ্চর্যের কথা এই, পর্যাপ্ত অস্ত্র বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তাহারা অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করিবার সুযোগ পায় নাই । দৌড়াইয়া পালাইতে গিয়া মার খায় । বিপদে পড়িলে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পায় । তাহারা যদি জনতার সম্মুখে একখানি গ্রেনেড ছুঁড়িয়া মারিতে পারিতো, জনতা প্রাণের ভয়ে দৌড়াইয়া পালাইতো ।
মান-অভিমান ভূলুন্ঠিত হওয়ার ভয়ে হউক, অার থানা-হাজতের ভয়েই হউক; মৃতদেহগুলো শনাক্ত করিতে কাহারো কোন অাত্মীয়-স্বজন থানায় অাসে নাই । ভালুকায় ক্ষীরু নদীর উপর নির্মিত ব্রীজের নিচে ডাকাতদের শবদেহ পুঁতিয়া রাখা হয় । মুর্দাদের মধ্যে দুইজন মন্ত্রীর পুত্রও নাকি ছিলো ।

২৫ কার্তিক ১৪২২ বঙ্গাব্দ
ময়মনসিংহ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×