(স্মৃতির পাতা থেকে )
অনেক কাল আগের কথা। আমার বয়স তখন তেরো কী চৌদ্দ। গ্রামের বাড়িতে থাকতাম, বিদ্যালয়ে যেতাম; আর আব্বাকে খেতে-খামারে কাজকর্মে একটু আধটু সাহায্য-সহযোগিতা করতাম।
একদিন দুপুরে খেত থেকে ফিরে এসে দেখি আমাদের বাড়িতে অচেনা লোকজনের আনাগোনা, আবিষ্কার করলাম, ওরা বৈরাগী জাতীয় কেউ। নিশ্চিত হলাম ওরা বোষ্টমী। অপূর্ব রুপবতী এক বোষ্টমী আম্মার সাথে কী যেন কথা বলছে।
আমি আম্মার কাছে গিয়ে বসলাম। আমাকে দেখে মুচকি হাসল বোষ্টমী, তারপর জিগ্যেস করল, “খেতে কাজ করতে গিয়েছিলি?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ।”
বোষ্টমী আমার গাল টিপে বলল, “ইস! কী সুন্দর চেহারাটা রোদে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।”
আমি নিশ্চুপে তার দিকে চেয়ে রইলাম। কী মায়াবি তার চোখ, আহা! যে-ই চোখে খেলা করে সাতটি তারার তিমির!
বোষ্টমী আমাদের পরিবার সম্পর্কে অনেক কথাই পাড়ল। শৈশবে আমি যে একবার হারিয়ে গিয়েছিলাম, আগুন পোহাতে গিয়ে আমার বাম হাত পুড়ে গিয়েছিল, আব্বা বিদেশে গিয়েছিলেন; সেইসব কথাও পাড়ল।
আম্মা তো মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়ে গেলেন। তাদেরকে চাল দিতে উঠে গেলেন। কী করে জানল এসব? ওরা তো কখনও এ অঞ্চলে আসেনি!
অতঃপর বোষ্টমী আমাকে জিগ্যেস করল, “নারাঙ্গী হাইস্কুলে পড়িস?” আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতিসূচক জবাব দিলাম।
আম্মা খুশি হয়ে চালের সাথে কিছু টাকাও দিলেন। বোষ্টমী খালি গলায় বিরহের একটা গানও শোনাল। চিকন, সুরেলা তার কণ্ঠস্বর!যাওয়ার সময় আমার হাতে একটা চুম্বন চিহ্ন এঁকে দিল। আমি তো লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেলাম।
আম্মা তখন মুখ টিপে হাসছিলেন। যাবার সময় বোষ্টমী বলল, “আবার আসব। ভালো থাকিস।”
তারপর বহুকাল কেটে গেল, তেরো-চৌদ্দ বছরের সেই কিশোরের চিবুকে দাড়ি গজাল, সে যৌবনে পদার্পণ করল; কিন্তু সেই বোষ্টমী আর ফিরে এলো না! সে যদি জানত অজ পাড়া গাঁয়ের কোনো এক কিশোরের তাকে ভালো লেগে গিয়েছিল, তাহলে কেমন হতো!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৪০