মেয়েটার নাম ছিলো শর্মিলা । "ভালুকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়" এর সপ্তম শ্রেণিতে পড়তো সে । তূর্য্য তাকে পড়াতে যেতো । মাঝে মাঝে সেও তূর্য্যের কাছে পড়তে অাসতো । ঠিক পড়ানো বলে না, একটু-অাধটু দেখিয়ে দেওয়া অার কী!
মেয়েটা তূর্য্যের উপস্থিতি একদম পছন্দ করতো না । দেখতে যথেষ্ঠ সুন্দরী ছিলো বলে তার দেমাগও ছিলো বেশ । অনেক ছেলে তার জন্য পাগল, পেছন পেছন ঘুরঘুর করে । সে ভেবেছিলো তূর্য্যও বোধহয় একই গোছের । কয়েকদিনের মধ্যেই অবশ্য শর্মিলার ভুল ভেঙে যায় । সে তূর্য্যের অনুগত হয়ে উঠে ।
মায়ের সাথে শর্মিলার প্রায় প্রায়ই তুচ্ছ কারণে ঝগড়া হতো । তার মা তূর্য্যের কাছে নালিশ দিতেন । তূর্য্য গম্ভীর হয়ে শর্মিলাকে বকে দিতো । অবশ্য তার বকুনি শর্মিলা কখনোই অামলে নিতো না, মিটিমিটি করে শুধু হাসতো ।
শর্মিলার বাবা প্রচন্ড রকমের রাগী মানুষ ছিলেন । মেয়ের সম্পর্কে অনেক অাজেবাজে কথা শোনা যায় । ক্রুদ্ধ হয়ে অনেকদিন মেয়েকে উত্তম-মধ্যমও দিয়েছেন ।
ভদ্রলোক তূর্য্যকে খুব স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন । তূর্যের প্রবাসী মামা যখন তাঁর কাছে তূর্য্য সম্পর্কে জানতে চাইতেন (তরুণ ছেলেরা যেহেতু একটু উচ্ছৃঙ্খল হয়, মামা ভেবেছিলেন তূর্য্যও হয়ত তাই- তূর্য্য উচ্ছৃঙ্খল ছিলোনা), তিনি তূর্য্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বলতেন, "অাপনার ভাগ্নের মত ছেলেই হয় না ।"
যদিও একদিন কোনো এক কারণে তূর্য্যের সাথে উনি কথা বলা বন্ধ করে দেন, তবুও তূর্য্যের প্রতি তাঁর পূর্ব অনুরাগ শেষ পর্যন্তই ছিলো ।
রাত-বিরাতে তূর্য্যের কাছে পড়তে অাসতো শর্মিলা । অনেকে বাঁকা চোখে দেখতো । শর্মিলার বাবা এসবে ভ্রুক্ষেপ করতেন না । তিনি তূর্যের ওপর সর্বোচ্য অাস্থা রেখেছিলেন, তূর্য্য তার যোগ্য প্রতিদানও দিয়েছিলো ।
একদিন রাত নয়টায় হন্তদন্ত হয়ে তূর্যের কাছে এলো শর্মিলা । বইপত্র রেখে ভোঁ দৌড় । তূর্য্য জিজ্ঞেসও করতে পারলো না সে কোথায় যায় । রাত ১১ টায় এসে বইপত্র নিয়ে বাড়ি চলে গেলো শর্মিলা । যাওয়ার সময় তূর্য্য জিজ্ঞেস করলো, "কোথায় গিয়েছিলে?"
সে বললো, "বান্ধবীর বাড়ি ।"
অাসলে অাশপাশে ওর কোন বান্ধবীই ছিলো না । ও গিয়েছিলো প্রেমিকের সাথে দেখা করতে । পরে একজনের কাছ থেকে এ কথা জানতে পেরেছিলো তূর্য্য ।
শর্মিলা যখন বাড়ি পৌঁছলো, ওর বাবা ঘরেই ছিলেন । তিনি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, "কোথায় গিয়েছিলে?"
শর্মিলা বললো, "তূর্য্য ভাইয়ের কাছে পড়তে।"
৪ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:১৮