ওদের ওখানে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলো তূর্য্য । ওর দাদা তূর্য্যের নিকটাত্মীয় হন । অন্যখানে বাসা রেখে হয়তো থাকা যেতো, এমনকি বাসা ঠিকও করে রাখা হয়েছিলো; কিন্তু উনি তূর্য্যকে সেখানে থাকতে দেননি- জোর করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন ।
মেয়েটার নাম ছিলো স্বর্ণালি । বয়েস এগারো কিংবা বারোর মতো । তূর্য্যকে খুবই জ্বালাতন করতো সে । পড়তে বসলে, এমনকি খেতে বসলেও । কোথাও ঘুরতে গেলে সেও তার সাথে যাওয়ার বায়না ধরতো সবসময় । তূর্য্যের সাথে ঘুমাতেও চাইতো । প্রথম প্রথম চোখ বুজে সব সহ্য করলেও একসময় প্রতিবাদী হয়ে উঠে তূর্য্য, সজোরে ধমকায়; কখনো কখনো ঘর থেকে জোর করে বের করে দেয় । কিছুক্ষণ পর অাবার সেই পূর্বের অবস্থানে ফিরে অাসে মেয়েটা । তূর্য্যের বইপত্র কেড়ে নিয়ে যায় । চঞ্চলা স্বর্ণাকে তাড়াতে নিষ্ফল হয়ে একসময় বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকে তূর্য্য । এবার সে তূর্য্যের মাথার কাছে এসে দাঁড়ায়, পরম যত্নে চুলে হাত বুলিয়ে দেয়; বিলি কেটে দেয় । তূর্য্য অার কিছু বলে না । অারাম পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
একদিন দুপুরের খাবারের পর ঘুমিয়েছিলো তূর্য্য, স্বর্ণাও চুপচাপ তার পাশেই ঘুমিয়েছিলো । স্বর্ণা যে কখন এসে ঘুমিয়েছে, তূর্য্য টেরই পায়নি । যাহোক, ঘুম ভাঙার পর হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসলো তূর্য্য । কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো মহারাণী হাজির । শাড়ি পরে এসেছে । তূর্য্যকে জিজ্ঞেস করলো, "কেমন লাগছে, ভাইয়া?"
তূর্য্য বললো, "বোন, তোমাকে অপূর্ব রুপবতী লাগছে । এবার তুমি অামাকে নিষ্কৃতি দাও ।"
স্বর্ণা মুখটা গোমড়া করে চলে গেলো ।
অন্যদিনের ঘটনা । বাইরে থেকে এসে তূর্য্যের শরীর খুব ক্লান্ত । ঘুমিয়ে পড়েছিলো । হঠাৎ স্বর্ণার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলো । অাবার জ্বালাতন করতে এসেছে । তূর্য্য বিরক্ত হয়ে কষে একটা থাপ্পড় মারলো ওর ফর্সা চিবুকে । কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো সে ।
রাত দশটার দিকে ওর মা এসে তূর্য্যকে জিজ্ঞেস করলেন, "স্বর্ণার কী হয়েছে?" তূর্য্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কেন?"
উনি বললেন, "সারাদিন ধরে কাঁদছে । কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না ।"
হঠাৎ তূর্য্যের মনে পড়লো, সে তো ওকে চপেটাঘাত করেছে, বকা দিয়েছে । মামীকে (স্বর্ণার মাকে মামী, বাবাকে মামা, দাদাকে নানা অার দাদীকে নানী ডাকতো তূর্য্য) বললো ঘটনাটা । উনি চুপ হয়ে গেলেন, একটু পর জিজ্ঞেস করলেন, "খুব দুষ্টুমি করেছিলো বোধহয়, না?"
নিজের অাচরণে খুব কষ্ট পেলো তূর্য্য । "অামি কী করে পারলাম এতটুকুন একটা বাচ্চা মেয়ের গায়ে হাত তুলতে?" সে জানে, মামী-মামা তাকে কখনোই কিছু বলবেন না । কারণ, তাঁরা জানেন, বিনা অপরাধে সে স্বর্ণাকে শাস্তি দেয়নি । অনুতপ্ত হলো তূর্য্য ।
এরপর অার কখনো স্বর্ণার গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা, একটা বকা পর্যন্ত দেয়নি তূর্য্য । মেয়েটা তাকে অাপন ভাইয়ের মতোই ভালোবাসতো । ওদের বাড়ি ছেড়ে অাসার পরও বহুদিন ওর সাথে তূর্য্যের যোগাযোগ ছিলো ।
৪ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:১৮