somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তথৈবচ

০৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ফোনটা এল। হতাশার সমুদ্রে নিমজ্জিত নাবিক যখন অকূলে কূল খুঁজে পায়, তখন তার যে দশা হয়- শানেরও সেই একই দশা হল। অদূরে বুঝি আলোকরশ্মি দেখা যাচ্ছে। অপ্রস্তুত হয়ে সে ফোনটা ধরল। আসলে সে ভাবতেই পারে নি ওখান থেকে কেউ তাকে ফোন দিতে পারে! সত্যি বলতে কী, হাল ছেড়ে দিয়েছিল। বেঁচে থাকাটা অনর্থক মনে হচ্ছিল।
"কী খবর? পরে তো কিছু জানালেন না! আর এলেনও না!" একজন বলল।
"আমার কাছে এ মুহুর্তে কোন টাকা-পয়সা নেই।" শান তার অক্ষমতার কথা পাড়ল।
"মাত্র পাঁচশো টাকা জোগাড় করতে পারলেন না?" ওপাশ থেকে বলল।
আল আরাফায় রেজিস্ট্রেশন বাবদ পনের শত টাকা চলে গিয়েছিল, সে টাকাটাও ধার বাবদ। শান এখন কীভাবে এদের বোঝাবে তার পক্ষে এক টাকা জোগাড় করাও কতটা কঠিন? এখানে রেজিস্ট্রেশন কীভাবে করবে?

পরদিন সরাসরি অফিসে গেল শান। গাজীপুর চৌরাস্তার কাছেই অফিসটা, ময়মনসিংহ রোডে। অনেক লোকজনের আনাগোনা সেখানে। সবাই তার মতই চাকরি প্রত্যাশী। বেশিরভাগকেই স্কুল-কলেজ এর শিক্ষার্থী মনে হল। এদেশে শিক্ষিত মানুষদের বৃহদাংশ কত যে বেকায়দায় আছে, তারই কিছু প্রত্যক্ষ প্রমাণ লক্ষ্য করা গেল। সামান্য একটা চাকরির জন্য কত হুড়োহুড়ি। বয়স্ক লোকজনও আসছেন, যারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন চাকরি হতে অব্যাহতি নিয়েছেন।

আকাশ এর সাথে দেখা। তার সাথেই শানের প্রথম কথা হয়েছিল, এবারও হল। প্রথমবার কিছু নিয়মকানুন বলে দিয়েছিল, এবারও বলল। শান নীরবে সব শুনল। কাগজপত্র জমা দিল, পাঁচশ টাকা জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনও করল। প্রথমবার একশ টাকা দিয়ে একটা ফর্ম কিনতে হয়েছিল, রেজিস্ট্রেশন করতে পারে নি টাকার অভাবে।
আরিফ নামের একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল। সে শানকে প্রশিক্ষণ এর কথা বলল। পরপর তিন দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। আল আরাফায় যোগ দেওয়ার প্রাক্কালে একটা ডায়েরি কিনেছিল শান, এখানে সেটার সদ্ব্যবহার করল। সাদ্দাম নামের একজনের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল, যে এখানকার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার।

তিনদিন প্রশিক্ষণ শেষে সাদ্দাম বললেন, "এবার বীমা করে কাজ শুরু করুন।" শান বিপদে পড়ল। বীমা করতে হলে অনেক টাকা দরকার। এ মুহুর্তে টাকা কোথায় পাবে? তার কাছে চলার মত টাকাও নেই। রুমমেট ছোটভাই এর কাছ থেকে ধার করে চলছে।

পৃথিবীতে টাকার জন্য কোনকিছু আটকে থাকে না। তারও আটকায় নি। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে, বিশেষত বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে বীমাটা করেই ফেলল। তাকে আশ্বস্ত করা হল, টাকাটা তার হিসেবেই থাকবে; বছর দু'ই পরে ইচ্ছে করলে তুলে ফেলতে পারবে। এখন অবশ্য মনে হয়, টাকাটা জোগাড় না করতে পারলেই বোধহয় ভাল হত। কী আর করা। সবই তার নিয়তি! কিছুটা কি নির্বুদ্ধিতা? না সম্পূর্ণই? অবশ্য অকূলপাথারে পড়লে ক'জনেরই বা হিতাহিত জ্ঞান কাজ করে?

বীমা করার পর প্রতিদিন ফর্মাল পোশাক পরে অফিসে আসে শান। ডেস্কে বসে থাকে। তার কী কাজ ঠিক বুঝতে পারে না। বীমা করার আগে জেনে নিলে ভাল হত না? বিষয়টা মাথায় আসে নি। ভেবেছিল হয়ত লোকজনকে বীমা করানো লাগতে পারে। আকাশ এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিল।
আকাশকে কাজের ব্যাপারে জিগ্যেস করে, সে কিছু বলে না। আরিফকে জিগ্যেস করে, সেও কিছু বলে না। শান ধাঁধায় পড়ে যায়। ধৈর্য্য ধরে থাকে, সময় হলে নিশ্চয়ই তাকে সব বলা হবে।

মাঝেমাঝে লোকজন আসে চাকরির সন্ধানে, তাদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করে শান। সে নিশ্চয়ই এ কারণে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় নি? তার পোস্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এর; কাজটা নিশ্চয়ই অন্য।

মাসের মাঝামাঝি যাওয়ার পর বুঝতে পারে সে একটা ফাঁদে আটকা পড়েছে, প্রতারণার ফাঁদে। তার সরলতার সুযোগে ওরা তাকে ধোঁকা দিয়েছে। আরও অনেককেই ধোঁকা দিয়েছে। এখন এদের কাজ হচ্ছে অন্যদেরকেও ধোঁকা দেওয়া, মানে হল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোকজনকে অফিসে নিয়ে আসা। তারপর ভুলিয়েভালিয়ে বীমা করানো। একটা সার্কেল করে কাজ করা।

এ কাজ তো শানের পক্ষে সম্ভব না। একটা অসহায় মানুষকে সে কীভাবে বিভ্রান্ত করবে? আকাশ, আরিফরা ঠিকই কী অনায়াসে লোকজনকে বিভ্রান্ত করছে! এদের ফাঁদে পড়ে অনেকে ভাল ভাল চাকরি ছেড়ে চলে আসছে। পরে অবশ্য বুঝতে পারে এখানে নির্দিষ্ট কোন বেতন নেই। বীমা করাতে পারলেই বেতন, ঠিক বেতন না; কমিশন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বেতন আসলে ভাঁওতাবাজি।

প্রথমে বীমা করেছিল আট হাজার টাকার, এ সময় পোস্ট ছিল ইউনিট ম্যানেজার এর; পরে আরও আট হাজার টাকা যুক্ত করে, এবার পোস্ট হল ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এর- এখানে উল্লেখ করা বেতন ছিল ইউনিট ম্যানেজারের চেয়ে তিন হাজার বেশি। শান ভেবেছিল মাত্র কয়েক হাজার টাকার জন্য তার পদ এত নিচে থাকবে কেন? ভুলের বশবর্তী হয়ে কাজটা করেছিল। নাকি লোভে পড়ে? শেষে দেখে সকলই গরল ভেল।

ষোল হাজার টাকার সাথে আরও কিছু টাকা ঋণ হয়ে যায়, থাকা-খাওয়ার খরচ। এ ঋণের জের শানকে অনেকদিন টানতে হয়েছিল। সে দিশেহারা হয়ে পড়ল। কী থেকে কী করবে বুঝতে পারছিল না।

আগের জায়গায় স্কুল নিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল, ঘৃণ্য রাজনীতির শিকারও হয়েছিল! এখানে তাই কোন স্কুলে ঢুকতে চায় নি। বেসরকারি স্কুলগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলা তার পক্ষে বড় কঠিন ঠেকে। এখানকার সহকারী শিক্ষকদের সাথে প্রধান শিক্ষকদের আচরণ গোলাম-মনিবের মত। সারাদিন হৈচৈ করতেও ভাল লাগে না। এ কারণেই অন্য কোন কাজের সন্ধান করে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতেও ঢোকার চেষ্টা করেছিল। অপরিচিত হওয়ায় কোন সুযোগ তৈরি করতে পারে নি।

২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
গাজীপুর।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২৩ ভোর ৬:১২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×