ইদের ছুটিতে কিছুদিন বাড়িতে বসবাস করছিলাম। শহরের যান্ত্রিকতা মুক্ত- সময় ভালোই যাচ্ছিল। একদিন সন্ধ্যেবেলা এলাকার এক ভাইস্তাকে শিগগির আমার সঙ্গে দেখা করতে বললাম। সে ফোনে জানাল, "আধা ঘন্টার মধ্যেই চলে আসবো।"
গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটছি। চারপাশে সুনসান নীরবতা। মাঝেমাঝে ঝিঝি পোকা ডেকে যাচ্ছে। কোথাও কেউ নেই। গ্রামের মানুষজন খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। পরদিন ভোরে ওঠতে হবে যে। শহরের মানুষেরা দেরিতে ঘুমোতে যায়, ওঠে দেরিতে। গ্রামে ঠিক তার বিপরীত। আগে ঘুমোতে যায় আবার সূর্য ওঠার সাথে সাথেই ঘুম থেকে ওঠে পড়ে।
অনেকটা পথ হাঁটার পর একটা আম গাছের তলায় অনুমান দশ-বারো বছরের এক ছেলেকে দেখতে পেলাম। অন্ধকারে তার মুখটা দেখা যাচ্ছিল না। জিগ্যেস করলাম, "এখানে একা একা কী করছো?
নাম কী তোমার?"
ছেলেটা ইতস্তত করছিলো; বললো, "নানা অপেক্ষা করতে বলেছে। আমার নাম কামরুল।"
"কোথায় তোমার, নানা?"
"কার সাথে কথা বলছো?" একটা চেনা কন্ঠস্বর জিগ্যেস করলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি ভাইস্তা। বললাম, "এত দেরি হলো যে!"
ভাইস্তা বললো, "দেরি কোথায়? আমি তো দশ মিনিটের মধ্যেই চলে এলাম।"
ঘড়িতে সময় দেখলাম। আসলেই তো বেশিক্ষণ হয় নি। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো কয়েক ঘন্টা যাবত হাঁটছি।
"এই ছেলেটাকে চেনো?" যেই ছেলেটাকে দেখাতে গেলাম, দেখি সে নেই।
"কোথায় ছেলে?" ভাইস্তা জানতে চাইলো।
"এখানেই তো ছিল।" আমি বললাম।
"নাম কী?"
"ও বললো তো কামরুল।"
"তুমি ঠিক আছো তো?"
"কেন?"
ভাইস্তা কিছু বললো না।
আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামেই বড়বোনের বিয়ে হয়েছে। বেড়াতে এসেছিলেন। মা তাকে কিছুদূর এগিয়ে দিতে গিয়ে হঠাৎ একটা ভিড় দেখতে পেলেন ঘন জঙ্গলের কাছে। ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে একটা দশ-বারো বছরের ছেলের লাশ দেখতে পেলেন, যার দু হাত বিচ্ছিন্ন; পেট চিরে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছে। পাশে একটা লন্ঠন, একটা টর্চ লাইট পরে আছে।
জঙ্গলের পাশেই যে বাড়িটা পুলিশ সে বাড়িতে ঢুকলো। জামাল নামের এক কিশোরকে যেই ডাক দিলো, সে দৌড়ে পালালো। পুলিশের সন্দেহ রইলো না যে এ উক্ত ঘটনায় জড়িত। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলো।
রাস্তার পাশেই ছিল দোকানটা। কামরুল দোকানে বসেছিলো। তার নানা কী একটা কাজে পাশেই বাড়িতে গিয়েছেন। চলে আসার কথা। এতক্ষণ সে মোবাইলে গেমস খেলছিলো।
জামাল তার সাথে ভাব জমাবার চেষ্টা করছিলো। সপ্তাহব্যাপী তার সাথে খেলেছে। আজও খেলার কথা বলে তাকে ডাকলো। কামরুল গেমস খেলা বন্ধ করে জামালের সাথে গেল।
কামরুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকায় মাইক মারা হলো। কামরুলের মা-বাবা, নানা সহ আত্মীয়স্বজনেরা পুরো এলাকা তন্নতন্ন করে খুঁজলো। কামরুলের হদিস নেই।
রিমান্ডে জামাল স্বীকার করে সবকিছু। কামরুলকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। ভালুকার একটা হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারের সাথে তার যোগসাজশ ছিল। ভুলিয়ে-ভালিয়ে কামরুলকে ঘন জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর অজ্ঞান করে তার কিডনি, চোখ খুলে নেওয়া হয়। "হাত কেন কাটা হলো;" এর উত্তরে বললো, "শিয়াল-কুকুরের কাজ হতে পারে।"
ঘটনা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। "আমার তাহলে গত রাত্তিরে কার সাথে দেখা হলো, কথা হলো?" মাকে এ কথা জিগ্যেস করতে গিয়ে আর জিগ্যেস করলাম না। এমনিতেই আমার অস্বাভাবিক কাজকর্মে তিনি বিরক্ত; এমতাবস্থায় ও কথা পাড়লে আমাকে পাগল আখ্যা দিয়ে বসবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১