somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল থেকে আমাকে বলা হলো বাচ্চাদের জন্য শিট তৈরি করে দিতে হবে। প্রিন্সিপাল মহাশয় বাচ্চাদের পড়ালেখার মানোন্নয়নে বিরাট তোড়জোড় শুরু করেছেন। কয়েকদিন খাটাখাটি করে শিট তৈরি করে বাচ্চাদের দিয়ে দিলাম।

এরমধ্যে আমার মাস্টার্সের একটা মিডটার্মের তারিখ এসে গেল। স্বাধীন, ভালুকায় এসে যার সাথে মোটামুটি একটা সখ্য তৈরি হয়েছে; তাকে বললাম আমার হয়ে একদিন ক্লাশ করাতে। আরও বললাম শিটের কিছু টাকা কয়েকজনের কাছে পাওনা আছে। সে যেন টাকাগুলো তোলে। কাউকে কিছু বলতে হবে না। আমিই বলে এসেছি তারা যেন স্বাধীনের কাছে টাকা দিয়ে দেয়।

বিকেলে স্বাধীনের সাথে দেখা হলো। জিগ্যেস করলাম টাকা তুলেছে কি না। সে জানাল বেশিরভাগই টাকা দেয়নি। আমার বেশ খটকা লাগল। এমন তো হওয়ার কথা না। টাকা তো দিয়ে দেওয়ার কথা।

পরদিন ক্লাশে গিয়ে জিগ্যেস করলাম তারা টাকা দিয়েছে কি না। সবাই জানাল দিয়ে দিয়েছে। স্বাধীনকে ধরলাম। সে স্বীকার করল। আমি তাকে বললাম, আমার শিক্ষার্থীরা কখনোই মিথ্যে বলবে না। তুমি যে মাত্র ক'টা টাকার জন্য মিথ্যে কথা বললে, এখন তোমাকে আর বিশ্বাস করা যাবে? সে চুপ।

বললাম, বাটপারি যদি করতেই হয়, এমনভাবে করতে হবে যেন ধরা পড়ার সুযোগ না থাকে। তুমি এমন জায়গায় বাটপারিটা করলে যে, হাতেনাতে ধরা খেয়ে গেলে।


বছর দুই আগে এক গ্যাঁড়াকলে পড়ে আমার কিছু টাকা আটকে গেল। বাসা ভাড়া দিতে পারছি না, খাবারের টাকা দিতে পারছি না, এছাড়া কিছু টাকা দেনা পড়ে গেছে; সেটা শোধ করতে পারছি না। এ বিষয়গুলো জেনে এক ভদ্রলোক আমাকে মেইল করলেন, ফোনও দিলেন। জানালেন, আমাকে তিনি সহযোগিতা করতে চান।

আমি বললাম, কীভাবে নিশ্চিত হলেন আমি সত্যিই সমস্যায় আছি? এমনও তো হতে পারে আমি মিথ্যে বলছি। লোকে চিকিৎসার কথা বলে, এই সমস্যার কথা বলে, ওই সমস্যার কথা বলে কত প্রতারণা করে। আমিও তো ওই প্রতারক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।

ভদ্রলোক হাসলেন। বললেন, কাউকে না কাউকে তো বিশ্বাস করতেই হয়। তাছাড়া আপনাকে আমার কখনও মিথ্যুক মনে হয়নি। আপনার সম্পর্কে আট বছর ধরে জানি।

ভদ্রলোক আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন। তাও আমি বলি কাউকে এত সহজে বিশ্বাস করা উচিত না। সমাজে সৎ লোকের চেয়ে অসৎ লোক বেশি। এরা কিডনির সমস্যার কথা বলে, এমনকি মা-বাবার নামে টাকা তুলেও প্রতারণা করে। যদি কাউকে সহযোগিতা করতেই হয়, শতভাগ নিশ্চিত হয়ে নেওয়াই ভালো।

অনেকে অবশ্য বিপদে পড়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ভালোভাবে বললে হয়তো কারও দৃষ্টি আকর্ষণ সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কী করা উচিত বা অনুচিত দাতা ব্যক্তিই ভালো জানেন।



মূল কাজের পাশাপাশি বাড়তি উপার্জনের আশায় আমি একটা কাজ করতাম। মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। প্রতিদিন কাজে যাই, কিন্তু আমার কাজ (লেখা) কাজে লাগানো হচ্ছে না। আমি হতাশ হয়ে পড়লাম।

মাস শেষে সবার মতো আমাকেও বেতন দেওয়া হলো। কিন্তু আমি নিতে অস্বীকৃতি জানালাম। আমার মনে হলো টাকাটা আমার প্রাপ্য না। যদিও টাকাটা আমার অনেক দরকার ছিল। আমি মাস শেষ হওয়ার অনেক আগে থেকেই আশায় বসে আছি কবে টাকাটা পাব। কিন্তু বিষয়টা তো আমার স্বভাববিরুদ্ধ। কাজ করিনি, তো টাকা নেব কেন?

টাকা পেয়েছিলাম অবশ্য। আমাকে বলা হয়েছিল আপনি এখানে আছেন, এতেই আমরা খুশি। তাছাড়া আপনার কাজ রেখে দেওয়া হচ্ছে। পরে কাজে লাগানো হবে। যদিও পরবর্তীতে কাজটা আর করিনি।



অসততা আর লোভ মানুষের সবচেয়ে বদভ্যাসের মধ্যে অন্যতম। আমি অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষকে দেখেছি চরম অসৎ আর লোভী। যদিও সে পর্যায়ে যাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। তাদের বিষয়ে কিছু বলা ধৃষ্টতা। তবে এটা মানি সততার পাশাপাশি দক্ষতারও দরকার। শুধু সততায় কাজ হয় না।

মনে পড়ে ছোটোবেলায় অন্যের গাছে ঢিল ছুড়ে আম বা বরই পাড়তাম। পাশের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় নিজের মনে করে লেবু নিয়ে আসতাম। বড়ো হতে হতে বদভ্যাসগুলো বদলে গেল। এখন কোটি কোটি টাকা দেখলেও লোভ হয় না। সৎ থাকার চেষ্টা করেছি সবসময়। মনে হয় মোটামুটি সচ্ছল একটা জীবনযাপন করতে পারলেই হলো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×