somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনের ইতিহাস পার্ট-১

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলতি আইনসমূহ হচ্ছে যথাক্রমে বাংলাদেশ দন্ডবিধি, ফৌজাদারী কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন,পিআরবি, মটরযান আইন,নারী শিশু নির্যাতন আইনসহ অন্যান্য মাইন আইনসমূহ। তন্মধ্যে বাংলাদেশ দন্ডবিধি, ফৌজাদারী কার্যবিধি,সাক্ষ্য আইন । এই আইন ৩টি বৃটিশের তৈরী। কিভাবে এই আইন আসলো এর ইতিহাস সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নে উল্লেখ করা হলো :-

১। দন্ডবিধি ও ফৌজাদারী কার্যবিধি আইনের ইতিহাস ।

প্রাচীন ভারতে মনু সংহিতা নামে দন্ড আইন চালু ছিল। কিন্তু তা রাজা ও পুরোহিত শ্রেণীর খামখেয়ালীপনা ও পক্ষপাতপুষ্ট ছিল বিধায় অপরাধ ও শাস্তির মধ্যে সামঞ্জস্য ছিল না। মৌর্য্ শাসনামলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়। গুপ্ত শাসনামলে অপরাধের সাধারণ শাস্তি ছিল অর্থদন্ড।
নবম শতাব্দীতে এই উপমহাদেশে মুসলিম রাজত্ব কায়েম হবার পর মুসলমানগণ ধর্মভিত্তিক বিচার ও দন্ডের ব্যবস্থা চালু করেন। সুলতান নিজেই প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করতেন। প্রকাশ্য দরবারে সংক্ষিপ্ত বিচার হতো। এ সময়ই শাসন ও বিচার বিভাগ আলাদা করা হয়। নিয়োজিত কাজীগণ কোরানী বিধান মতে বিচার করতেন।

১৭৫৭ সালে ইংরেজ বণিকদণ কর্তৃক বাংলা জয়ের পরেও ভারত উপমহাদেশে ইসলামী ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। আবার এলাকা ভিত্তিক সামন্ত রাজাগণ দন্ডবিধি প্রচলিত ছিল।
১৭৯৩ সালে ৯নং রেগুলেশন জারী করে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারতের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় প্রথম হস্তক্ষেপ করে। এতে ছোটখাট মারামারি, গালাগালির মতো অপরাধের ক্ষেত্রে তিরস্কার, লঘু দন্ড, কারাদন্ড প্রভৃতি শাস্তি দেয়ার এবং খুন, ডাকাতি, চুরির অপরাধীদের ধরার অধিকার ম্যাজিষ্ট্রেটদের দেয়া হয়। তখনও বড় এসব অপরাধের বিচার করতেন নিজামত আদালত।
১৮০৭ সালে পূর্বোক্ত ৯ নং রেগুলেশন সংশোধন করে ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ১ বৎসর কারাদন্ড ও ২০০/-টাকা জরিমানার ক্ষমতা দেয়া হয়। খুন, ডাকাতি, দাংগা ইত্যাদি বড় অপরাধের বিচারের জন্য সার্কিট জজ নামক পদ সৃষ্টি করা হয়। সার্কিট জজ ম্যাজিষ্ট্রেটদের এলাকায় এসে বিচার করতেন।
১৮০৭ সাল হতে দন্ডবিধি বলবৎ (১৮৬১) হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ এ তিনটি প্রেসিডেন্সী শহরে ইংল্যান্ডের দন্ডবিধি অনুসৃত হতো। অবশিষ্ট মফস্বল এলাকায় ইসলামী ফৌজদারী আইন মোতাবেক নিজামত/সার্কিট জজ/ম্যাজিষ্ট্রেট বিচার ও দন্ডবিধান করতেন।
১৮৩৩ সালে ভারতের শাসনভার ইংরেজ কোম্পানী হাত হতে ব্রিটিশ রাজ গ্রহণ করার পর ভারতবর্ষের জন্য একটি আইন কমিশন গঠন করেন। যা নিম্নরুপ :-

সভাপতি-লর্ড ম্যাকলে।
সদস্য- মিঃ ম্যাকলিউড।
সদস্য-মিঃ এন্ডারসন।
সদস্য-মিঃ মিলার।

এ কমিশন দন্ডবিধির খসড়া প্রণয়ন করে ১৮৩৭ সালের ১৪ই অক্টোবর ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড আ্যাকল্যান্ডের নিকট পেশ করেন। যা কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার বার্নেস পিকক এবং অন্যান্য বিচারপতগণ (যারা ফোর্ট উইলিয়ম লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন)। সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে ১৮৫৬ সালে দন্ডবিধির খসড়া লজেসলেটিভ কাউন্সিলে উপস্থাপিত হয়। ১৮৬০ সালে লেজিসলেটিভ কাউন্সিল আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত খসড়া তৈরী করেন। অতঃপর ভারতে বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিছু সংশোধনী করে ১৮৬২ সালের ৬ই অক্টোবর দন্ডবিধি পাশ হয়। যার নামকরণ করা হয় ১৮৬০ সালের ৪৫ নং আইন, দন্ডবিধি।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ভারতে দন্ডবিধি নামের পরিবর্তন করে রাখা হয় ইন্ডিয়ান পেনাল কোর্ড (আইপিসি) পাকিস্তান নামের পরিবর্তন করে রাখা হয় পেনাল কোড (পিপিসি) ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ অভূদ্যয়ের পর প্রেসিডেন্ট আদেশ নং-৮ তারিখ ৩০/০৬/১৯৭৩ মূলে পাকিস্তান দন্ডবিধি নামের পাকিস্তান শব্দটি তুলে নিয়ে এই আইনের পুনঃ নামকরণ হঃয় দন্ডবিধি । এতে আছে মোট ২৩টি অধ্যায় ৫১১টি ধারা আছে।

ফৌজাদারী কার্যবিধির ইতিহাস :

দন্ডবিধির খসড়া গভর্নর জেনারেলের নিকট পেশ করা হলে ১৮৪৭ সালে গভর্নর জেনারেল দন্ডবিধিকে সামনে রেখে ফৌজদারী কার্যবিধির খসড়া প্রণয়নের জন্য একই কমিটিকে নির্দেশন দেন।
সংশ্লিষ্ট কমিটি খসড়া প্রণয়ন করে১৮৫৩ সালে উপস্থাপন করেন। যা ১৮৬১ সালে লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে গৃহীত ও পাশ হয়। এটাই বৃটিশ ভারতের প্রথম কার্যবিধি। পরে ১৮৭২, ১৮৭৫, ১৮৭৭ এবং ১৮৮২ সালে ব্যাপক সংশোধনী হয়। ১৮৯৮ সালে আমুল সংশোধনীর পর ১৮৯৮ সালের ৫ নং আইন হিসেবে ফৌজদারী কার্যবিধি পাশ হয়। যা আজও চালু আছে। পরবর্তীতে ১৯২৩, ১৯৭৮, ১৯৮২ ও ১৯৯১ সালে আরও সংশোধি হয় ।

আজকে এ পর্যন্ত পার্ট-২ তে সাক্ষ্য আইন ও পিআরবির ইতিহাস বর্ণনা করবো।

তথ্যসূত্রে-ফৌজদারী তদন্ত ও বিবিধ-একেএম আবুল বাছের, ইন্সপেক্টর অপ পুলিশ।







































সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×