somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষার জাতীয়করণ ঃ ধারণাতীত সেকেলে ধারণা!

১৪ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষার গুরুত্ত্ব সম্পর্কিত আলোচনা এবং শিক্ষিত মানুষ হবার উপদেশ শুনতে শুনতে পুরো শিক্ষাজীবনটাই ত্যক্ত-বিরক্তময় হয়ে উঠেছিল। বিদ্যা-শিক্ষা-জ্ঞান-গরিমার প্রতি আকর্ষণ না থাকলেও এসব অর্জন করিয়ে নিতে শিক্ষক-অভিভাবক মণ্ডলীর পুনঃ পুনঃ উপদেশে পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করে নিতে হয়েছিল। শিক্ষা-সততা-সেবার ব্রতে জীবন গড়ার আহবানে একটি স্বর্গীয় আবেশ তৈরি হত। শ্রেণীকক্ষের দেয়ালে দেয়ালে লিখিত শিক্ষাবাণীগুলোর মোহময় আকর্ষণ কোমলমতি'র মনে মিছিল তুলত। পড়া, মুখস্থ করা, ভাল ফলাফল করা ছাড়াও জীবনে আরও অনেক কিছু করতে হবে তা জানা হয়নি। ফলে, এমপিওভুক্তির আন্দোলনও করা হয়নি। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের সর্বোত্তম- মহান পেশাজীবী শিক্ষক নিজের বেতন-ভাতা, বোনাস, এমপিও ইত্যাদির জন্য কান্নাকাটি করবেন, পুলিশের লাঠি খাবেন, জলকামানের টার্গেট হবেন ভাবতেই পারা যায়নি। সবাই বলেছিলেন, এখনও বলেন যে, শিক্ষা- জাতি গঠনের একমাত্র শর্ত। শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ অত্যাবশ্যক। তার পর অন্যান্য খাত বা ব্যবস্থার জাতীয়করণের পরিকল্পনা গ্রহণ করাতেই আদর্শ রাষ্ট্রের পরিচয়। আদর্শ বা উন্নত জাতি গঠনের নীতি গৃহীত হয়ে থাকলেও শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা হলেও অনেক ভাল হতো; দৃশ্যমান ধ্বংস প্রক্রিয়ার চেয়ে।

সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে, প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বর্ধিত বিল প্রদানের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক জরুরী সভায় মিলিত হতে পারেন। সম্প্রতি, পূর্বাচলে স্থায়ী বাণিজ্য মেলা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবসহ ৬ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, গত ২৩ জুন থেকে এমপিওভুক্তির দাবীতে শিক্ষকেরা অনশন- আন্দোলন শুরু করেন। এর মধ্যে ২৬ জুন ১৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার ১৪ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ১১ জুলাই সময়ের মধ্যে সরকার শতশত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকলেও আন্দোলনরত শিক্ষকদের ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, যা জাতীয় জীবনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আশংকার জন্ম দেয়। এসকল প্রকার অসংলগ্নতার জন্য দায়ী কে? অবশ্যই শিক্ষক সমাজ। তারাই এই সময়ে চলমান সকল উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। আদর্শ, ন্যায়নিষ্ঠ ও নির্লোভ শিক্ষক শিখিয়েছেন, সেবার জন্য বের হও। বিপরীতে, জীবনাবদ্ধ ও খাদ্যপ্রান- সর্বস্ব অলস শিক্ষকেরা করে দেখাচ্ছেন- ধরিবে মৎস্য খাইবে সুখে। অতএব, দেশ গোল্লায়। এদেশে ভাল কিছু হয়ে থাকলে তাও করেছেন দুর্নীতিবাজরা, উন্নতি হয়ে থাকলে, তাও ছলনা।
১৯৯০ সালে নতুন করে গনতান্ত্রিক মুক্তি পায়। এরপর, ধীরে ধীরে আজ শিক্ষা খাতে মুল্যায়িত হচ্ছে। শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের ফলে রিটার্নের পরিমাণ গোনা হচ্ছে, যেমনঃ কর্মচারীর বেতন- ভাতা। শিক্ষার মৌলিকতা ও সার্বজনীনতার স্থলে অবকাঠামোগত ভাবমূর্তিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে দপ্তরবন্দি করা হয়েছে। গনতন্ত্র- চর্চা হয়ে উঠেছিল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার্জন। ফলে, ১৯৯১ সালে বা স্বাধীনতার ২০ বছর পর, ১৫ বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল ওই সময়ের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক, তারা শিক্ষার উপযোগিতার ধারণা পায়নি এবং যারা আজও ভাসমান।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় বাজেটের ২১ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে তা কমে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশে। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে দারিদ্র বিমোচন কৌশলপত্রে শিক্ষাখাতে জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ কৌশলপত্রে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ২৫ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছিল। অপরদিকে ইউনেস্কোর প্রস্তাব অনুযায়ী শিক্ষাখাতে জাতীয় আয়ের ৮ শতাংশ অথবা বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকা উচিত। ২০১৮-১৯ বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ, মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা জিডিপির ২ শতাংশ। তাহলে, ১৯৭২ সালের পর থেকে শিক্ষা- আন্দোলনও শুরু হবার কথা নয় কি? বাজেটে গুরুত্ব কমার সাথে সাথে সকল ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কমতে থাকে। শিক্ষার মান আজ শূন্যের কোটায়, যেমনটি, শিক্ষকেরা বেতন-ভাতার দাবীতে না খেয়ে থাকছেন এবং অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা চাকুরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলন করে যাচ্ছেন। উভয়ের লক্ষ্য, বেতন ও চাকুরি। উল্লেখ্য, শিক্ষকেরা শিক্ষার সার্বিক উন্নতির মাধ্যমে জাতীয় উন্নতির কোন ধ্যান- ধারনা নিয়ে আসেননি। অবস্থা এমন যেন, সকলেই কাজ নয়, কর্তব্য নয়, বেতন-ভাতা বা আর্থিক নিরাপত্তার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত হয়ে আছেন। তাহলে, শিক্ষার জাতীয়করণের ধারণা যেখানে ধারণাতীত, সেখানে বিষয়টি নিয়ে কোন বিতর্ক নয়। একদম চুপ।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×