ইরানী ফার্সী মহিলা কবি ফরুগ ফরুখজাদ এর কবিতা
ভূমিকা ও অনুবাদ―রায়ান নূর
কবি পরিচিতিঃ
ফরুগ ফরুখজাদ ইরানের এক আধুনিক ক্ষণজন্মা মহিলা কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক, যিনি বিংশ শতাব্দিতে ইরানে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন ৷ তিনি ইরানের তেহরানে 1935 খ্রীস্টাব্দের 5ই জানুয়ারী একটি মধ্যবিত্ত কর্নেলের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ৷ তার বিয়ে হয় ষোল বছর বয়সে নিকটাত্মীয় পারভেজ সাপুরের সাথে ৷ তার প্রথম ছেলে জন্মগ্রহণ করে আঠারো বছর বয়সে ৷ তিনি স্বামী পরিত্যাক্তা হন তার বিংশতম জন্মদিনের আগে ৷ ছেলেকে তার স্বামী হস্তগত করেন এবং তিনি তার ছেলেকে দেখা থেকে বঞ্চিত হন ৷
তার কবিতায় স্থান পেয়েছে পর্দার অন্তরালে সমাজে অবহেলিত নারীদের চরম বাস্তবতা এবং নারীদের গোপন অস্তিত্বের কথা ৷ তিনিই সমাজে নারীদের অবস্থান ও তাদের গোপন অনুভূতি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন তার কবিতায়; পশ্চিমা ভাষায় যাকে বলে ‘ট্যাবু’৷ একারণে তাকে ‘স্যাটারিস্ট কবি ’ বলে অনেকে অভিহিত করেন ৷
তার কাব্যগ্রন্থগুলো যথাক্রমে আছির(1955),দেভার(1956),এসিয়ান(1958),তভালদি দেগার(1964) ইত্যাদি ৷ গুনাহ্ (পাপ) কবিতাটি তার মূল ‘দেভার’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ৷ স্বামী পরিত্যাক্তা হিসেবে জীবদ্দশায় তিনি কারো কারো সাথে পৃথক সংক্ষিপ্ত সম্পর্ক গড়েছিলেন তা নিম্নের কবিতায় বুঝা যায় ৷ তার কবিতায় ব্যক্তিত্বের চরিতার্থের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে আত্মোপলব্ধি এবং উত্তরণের আভাস ৷ তিনি মাত্র 32 বছর বয়সে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন 1967 খ্রীষ্টাব্দে 13ই ফেব্রয়ারী
পাপ
মূলঃ ফরুগ ফররুখজাদ
অনুবাদঃ রায়ান নূর
আমি পাপিষ্ঠা,মজেছি কামনার পাপে
কামনার তপ্ততায় সেই পূর্ণ আলিঙ্গনে
আমি পাপ করেছি বিদ্ধ হয়ে বীর্য-বাণে
দুরন্ত লৌহশৃঙ্গের চলন্ত প্রতিপ্র-তাপে ৷
সেই অন্ধকার আর নৈশব্দের বেড়াজালে
গভীর-চোখে আমি তার দেখেছি উন্মাদনা,
হৃদয়-আবেগে স্ফীত আমার স্তন-যুগলে
আবেদনে পেয়েছি আমি সে ক্ষণিক-সান্ত্বনা ৷
সেই অন্ধকারে যখন নির্জন নীরবতা
বসেছি পাশে তার শিথিল বসনে
অধর-পিয়াসী প্রিয়র চরম চুম্বনে
ভুলে গেছি হৃদয়ের ব্যথা-ব্যাকুলতা ৷
আমি মৃদুভাষে কানে বলি তার প্রেম-বুলি
আমি তোমাকেই চাই,ও আমার জীবন
আমি তোমাকেই চাই,ও প্রেমার্ত মিলন
তুমিই প্রেমিক আমার দাও যৌবনে ধুলি ৷
তার চোখে বিজলীর ছটা কামনার ঝড়ে
যেন লাল মদ খেলা করে পেয়ালায়
আমার দেহ পাতানো নরম বিছানায়
দোলে তার বুকে আবেগী-নেশার ঘোরে ৷
আমি পাপিষ্ঠা,পাপ যে চিত্তের রসকামী
ক্রমে মিলেছি কত আবেশী-বিলাসে
হে ঈশ্বর,তুমিই জানো কী করেছি আমি
ঘোর অন্ধকারে সেই নির্জন নিবাসে ৷
রায়ান নূর,
বাংলাভাষা ও সাহিত্য,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৷
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০৯