somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকবরনামা-১

১৮ ই এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালো বা মজার জিনিষ প্রিয়জনদের সাথে ভাগাভাগি করে উপভোগ করার আনন্দই আলাদা। না হলে এর অনন্দটা যেন ঠিক পরিপূর্ণতা লাভ করতে চায় না। প্রিয় সামহোয়ারের ব্লগার বন্ধুদের মাঝে যারা আমার মত ইতিহাস পড়তে ও জানতে ভালবাসেন, এ লেখাটি নিঃসন্দেহে তাদের জন্য ভীষণ কৌতুহলদ্দীপক হবে এবং এ বিষয়ে নতুন আলোকে ভাবনার খোরাক যোগাবে। বস্তুতঃ মুঘল সালতানাতের দৌর্দন্ড প্রতাপশালী ও পরাক্রান্ত সম্রাট জালালুদ্দিন মোহাম্মদ আকবরের বৈচিত্রময় জীবনের স্বল্পপ্রচারিত অধ্যায়ের প্রতি আলোকপাতই এ আকর্ষণীয় অংশটির উপজীব্য বিষয় যা প্রত্যেকেরই জানা উচিৎ বলে আমার মনে হয়েছে। আমার আরো মনে হয় চয়িত অংশটুকু সম্পূর্ণ মূল বইটি সংগ্রহের জন্যও অনেককেই আকৃষ্ট করে তুলবে। উৎসাহের বশে বেশ অনেকখানি তুলে দিয়েছি। অনুলিখনের সকল ভুল-ভ্রান্তির দায় দায়িত্ব একান্তভাবেই আমার। যদি ভালো লাগে তবে আরো কয়েক কিস্তি দেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গ্রন্থটির স্বত্ত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত নয়।

অলমিতি অনুলেখকস্ব

(মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ রচিত খ,ম, আমানুল্লাহ কর্তৃক প্রকাশিত হজরত মোজাদ্দেদে আলফে সানি রহঃ -এর অবিস্মরণীয় জীবন কথা ‘নূরে সেরহিন্দ’ গ্রন্থ হতে চয়িত অংশ বিশেষঃ)
সেরহিন্দ প্রকাশন , ৩৮/২-ক, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।
উল্লেখ্য, গ্রন্থটির সর্বস্বত্ত্ব লেখক কর্তৃক সংরতি নয়।


বাদশাহ জালালুদ্দিন আকবর মাত্র তের বৎসর বয়সে সিংহাসন আরোহন করেন। তাহার পিতা হুমায়ুন মৃত্যুর পূর্বে বৈরাম খাঁকে তাহার অভিভাবক নিযুক্ত করিয়া যান। কিন্তু বৈরাম খাঁকে বেশীদিন অভিভাবকত্ব করিতে হয় নাই। অল্পদিন পরেই আকবর রাজ্যের সর্বময় মতা নিজ হাতে গ্রহণ করেন।
তাহার জীবনের প্রথম দিককার ঘটনাবলী হইতে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি প্রথম জীবনে বড়ই ধর্মভীরূ ছিলেন। ঘরে-বাহিরে সর্বত্র তিনি জামাতের সহিত নামাজ আদায় করিতেন। তিনি পাঁচজন আলেমকে ইমামতি করিবার কাজে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। সফরের সময় নামাজের জন্য একটি খাছ তাঁবুর ব্যবস্থা করা হইত । তিনি উহাতে জামাতের সহিত নামাজ আদায় করিতেন। আলেম সমাজের প্রতি ভক্তি ছিল অগাধ। তাঁহার রাজত্বের প্রথম দিকে ছদরে জাহান ছিলেন- আবদুন নবী। বাদশাহ্ কখনো কখনো নিজেই তাহার বাসভবনে হাদিস শুনিবার জন্য যাইতেন। তিনি তাঁহার সামনে থাকা অবস্থায় জুতাও পরিধান করিতেন না।

কোন কোন সময় তিনি পায়ে হাঁটিয়া গরীবে নেওয়াজ খাজা মঈনুউদ্দিন চিশতি (রঃ) এর রওজা মোবারক জেয়ারত করিতে যাইতেন। তৎকালীন বিখ্যাত বুজর্গ শেখ সেলিম চিশতি (রঃ) এর প্রতিবেশী হিসাবে বসবাস করিবার জন্য তিনি ফতেহপুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। ফতেহপুরে তিনি ‘অনুপ তালাও’ নামে একটি সরোবর খনন করান এবং উহার চারিদিকে কয়েকটি ইমারত নির্মান করিয়া সেইগুলির নাম ‘ইবাদতখানা’ রাখেন।
জুমআর দিনে এইসব ইবাদত খানায় আলেমগণের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হইত । আলেম গণের খেদমতের ভার বাদশাহ্ স্বহস্তে গ্রহণ করিয়াছিলেন। ফলে অর্থের লোভে বহু আলেম এই মহফিলে যোগদান করিতেন। তাহারা প্রথ্যেকেই বাদশাহর প্রিয়পাত্র হইবার জন্য সর্বদা চেষ্টা করিতেন । তাই একজন আরেকজনকে হিংসা করিতেন। ফলে তাহাদের মধ্যে বিবাদবিসম্বাদ লাগিয়াই থাকিত। নির্বিবাদে একজন আরেকজনকে ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়া তাঁহারা নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি প্রদর্শনের প্রয়াস পাইতেন। একজন কোন কিছু ‘হালাল’ ফতোয়া দিলে অন্যজনের প্রধান কাজই হইত যেভাবেই হোক উহাকে ‘হারাম’ প্রতিপন্ন করা।

মোল্লা আবদুল্লাহ সোলতানপুরী ‘মখদুমুল মুলক্’ খেতাবে ভূষিত হইয়াছিলেন। তিনি তাঁহার উপর হজ ফরজ নয় বলিয়া ফতোয়া দিয়াছিলেন। বাহানা করিয়া তিনি যাকাত প্রদানও স্থগিত করেন। মৃত্যুর পর তাঁহার লাহোরের বাসভবনে বহু পরিমান লুক্কায়িত ধনরতœ পাওয়া যায়। গোরস্থান হইতেও স্বর্ণভর্তি কয়েকটি সিন্দুক উদ্ধার করা হয়। এইগুলি তিনি মৃত ব্যক্তিদের বাহানায় দাফন করাইয়াছিলেন।

হজরত আবদুল কুদ্দুস গাংগুহী (রঃ) এর পৌত্র মাওলানা আবদুন্ নবী ছিলেন শাহী দরবারের একজন গণ্যমাণ্য ব্যক্তি। বাদশাহ তাঁহাকে খুবই সম্মান করিতেন। উল্লিখিত ‘মখদুমুল মূলক’ ও আবদুন নবীর মধ্যে চরম মতানৈক্য ছিল। উভয়ে উভয়ের প্রতি ফতোয়া দিতেন য়ে, তাঁহাদের পিছনে নামাজ পড়া দুরস্ত নয়।

বাদশাহ আলেমদেরকে এতো বেশী ভক্তি করিতেন যে, তাঁহাদেরকে তিনি ইমাম রাজী (রঃ) ও ইমাম গাজ্জালী (রঃ) হইতেও বড় ধারণা করিতেন। কিন্তু তাহাদের এই সমস্ত জঘণ্য নীচ কার্যকলাপ ল্য করিয়া ধর্ম বিষয়ে তিনি সন্দিহান হইয়া পড়েন। তাহার বিশ্বাসের মূলে ভাঙ্গন ধরে। ক্রমে ক্রমে তিনি পূর্ববর্তী ইমামগণকেও ইহাদের মতো ভাবিতে শুরু করেন এবং ধর্ম বিষয়ে আস্থা হারাইয়া ফেলেন।

সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলেন মোল্লা মোবারক নাগুরী ও তাহার দুই পুত্র আবুল ফজল ও ফৈজি। মোল্লা মোবারক নাগুরী সব মযহাব সম্পর্কে এলম হাসিল করিবার পর নিজেকে এজতেহাদের দর্জা প্রাপ্ত ভাবিতে শুরু করেন। তিনি কোন মযহাবের অনুগত না থাকিয়া ব্যক্তিগত মছলা অনুযায়ী ইবাদত করিতে থাকেন। তিনি এলেমের প্রচার ও প্রসারের কাজ ছাড়িয়া দিয়া পুত্রদের সঙ্গে রাজনীতিতে জড়াইয়া পড়েন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:০৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×