ভালো বা মজার জিনিষ প্রিয়জনদের সাথে ভাগাভাগি করে উপভোগ করার আনন্দই আলাদা। না হলে এর অনন্দটা যেন ঠিক পরিপূর্ণতা লাভ করতে চায় না। প্রিয় সামহোয়ারের ব্লগার বন্ধুদের মাঝে যারা আমার মত ইতিহাস পড়তে ও জানতে ভালবাসেন, এ লেখাটি নিঃসন্দেহে তাদের জন্য ভীষণ কৌতুহলদ্দীপক হবে এবং এ বিষয়ে নতুন আলোকে ভাবনার খোরাক যোগাবে। বস্তুতঃ মুঘল সালতানাতের দৌর্দন্ড প্রতাপশালী ও পরাক্রান্ত সম্রাট জালালুদ্দিন মোহাম্মদ আকবরের বৈচিত্রময় জীবনের স্বল্পপ্রচারিত অধ্যায়ের প্রতি আলোকপাতই এ আকর্ষণীয় অংশটির উপজীব্য বিষয় যা প্রত্যেকেরই জানা উচিৎ বলে আমার মনে হয়েছে। আমার আরো মনে হয় চয়িত অংশটুকু সম্পূর্ণ মূল বইটি সংগ্রহের জন্যও অনেককেই আকৃষ্ট করে তুলবে। উৎসাহের বশে বেশ অনেকখানি তুলে দিয়েছি। অনুলিখনের সকল ভুল-ভ্রান্তির দায় দায়িত্ব একান্তভাবেই আমার। যদি ভালো লাগে তবে আরো কয়েক কিস্তি দেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গ্রন্থটির স্বত্ত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত নয়।
অলমিতি অনুলেখকস্ব
(মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ রচিত খ,ম, আমানুল্লাহ কর্তৃক প্রকাশিত হজরত মোজাদ্দেদে আলফে সানি রহঃ -এর অবিস্মরণীয় জীবন কথা ‘নূরে সেরহিন্দ’ গ্রন্থ হতে চয়িত অংশ বিশেষঃ)
সেরহিন্দ প্রকাশন , ৩৮/২-ক, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।
উল্লেখ্য, গ্রন্থটির সর্বস্বত্ত্ব লেখক কর্তৃক সংরতি নয়।
বাদশাহ জালালুদ্দিন আকবর মাত্র তের বৎসর বয়সে সিংহাসন আরোহন করেন। তাহার পিতা হুমায়ুন মৃত্যুর পূর্বে বৈরাম খাঁকে তাহার অভিভাবক নিযুক্ত করিয়া যান। কিন্তু বৈরাম খাঁকে বেশীদিন অভিভাবকত্ব করিতে হয় নাই। অল্পদিন পরেই আকবর রাজ্যের সর্বময় মতা নিজ হাতে গ্রহণ করেন।
তাহার জীবনের প্রথম দিককার ঘটনাবলী হইতে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি প্রথম জীবনে বড়ই ধর্মভীরূ ছিলেন। ঘরে-বাহিরে সর্বত্র তিনি জামাতের সহিত নামাজ আদায় করিতেন। তিনি পাঁচজন আলেমকে ইমামতি করিবার কাজে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। সফরের সময় নামাজের জন্য একটি খাছ তাঁবুর ব্যবস্থা করা হইত । তিনি উহাতে জামাতের সহিত নামাজ আদায় করিতেন। আলেম সমাজের প্রতি ভক্তি ছিল অগাধ। তাঁহার রাজত্বের প্রথম দিকে ছদরে জাহান ছিলেন- আবদুন নবী। বাদশাহ্ কখনো কখনো নিজেই তাহার বাসভবনে হাদিস শুনিবার জন্য যাইতেন। তিনি তাঁহার সামনে থাকা অবস্থায় জুতাও পরিধান করিতেন না।
কোন কোন সময় তিনি পায়ে হাঁটিয়া গরীবে নেওয়াজ খাজা মঈনুউদ্দিন চিশতি (রঃ) এর রওজা মোবারক জেয়ারত করিতে যাইতেন। তৎকালীন বিখ্যাত বুজর্গ শেখ সেলিম চিশতি (রঃ) এর প্রতিবেশী হিসাবে বসবাস করিবার জন্য তিনি ফতেহপুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। ফতেহপুরে তিনি ‘অনুপ তালাও’ নামে একটি সরোবর খনন করান এবং উহার চারিদিকে কয়েকটি ইমারত নির্মান করিয়া সেইগুলির নাম ‘ইবাদতখানা’ রাখেন।
জুমআর দিনে এইসব ইবাদত খানায় আলেমগণের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হইত । আলেম গণের খেদমতের ভার বাদশাহ্ স্বহস্তে গ্রহণ করিয়াছিলেন। ফলে অর্থের লোভে বহু আলেম এই মহফিলে যোগদান করিতেন। তাহারা প্রথ্যেকেই বাদশাহর প্রিয়পাত্র হইবার জন্য সর্বদা চেষ্টা করিতেন । তাই একজন আরেকজনকে হিংসা করিতেন। ফলে তাহাদের মধ্যে বিবাদবিসম্বাদ লাগিয়াই থাকিত। নির্বিবাদে একজন আরেকজনকে ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়া তাঁহারা নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি প্রদর্শনের প্রয়াস পাইতেন। একজন কোন কিছু ‘হালাল’ ফতোয়া দিলে অন্যজনের প্রধান কাজই হইত যেভাবেই হোক উহাকে ‘হারাম’ প্রতিপন্ন করা।
মোল্লা আবদুল্লাহ সোলতানপুরী ‘মখদুমুল মুলক্’ খেতাবে ভূষিত হইয়াছিলেন। তিনি তাঁহার উপর হজ ফরজ নয় বলিয়া ফতোয়া দিয়াছিলেন। বাহানা করিয়া তিনি যাকাত প্রদানও স্থগিত করেন। মৃত্যুর পর তাঁহার লাহোরের বাসভবনে বহু পরিমান লুক্কায়িত ধনরতœ পাওয়া যায়। গোরস্থান হইতেও স্বর্ণভর্তি কয়েকটি সিন্দুক উদ্ধার করা হয়। এইগুলি তিনি মৃত ব্যক্তিদের বাহানায় দাফন করাইয়াছিলেন।
হজরত আবদুল কুদ্দুস গাংগুহী (রঃ) এর পৌত্র মাওলানা আবদুন্ নবী ছিলেন শাহী দরবারের একজন গণ্যমাণ্য ব্যক্তি। বাদশাহ তাঁহাকে খুবই সম্মান করিতেন। উল্লিখিত ‘মখদুমুল মূলক’ ও আবদুন নবীর মধ্যে চরম মতানৈক্য ছিল। উভয়ে উভয়ের প্রতি ফতোয়া দিতেন য়ে, তাঁহাদের পিছনে নামাজ পড়া দুরস্ত নয়।
বাদশাহ আলেমদেরকে এতো বেশী ভক্তি করিতেন যে, তাঁহাদেরকে তিনি ইমাম রাজী (রঃ) ও ইমাম গাজ্জালী (রঃ) হইতেও বড় ধারণা করিতেন। কিন্তু তাহাদের এই সমস্ত জঘণ্য নীচ কার্যকলাপ ল্য করিয়া ধর্ম বিষয়ে তিনি সন্দিহান হইয়া পড়েন। তাহার বিশ্বাসের মূলে ভাঙ্গন ধরে। ক্রমে ক্রমে তিনি পূর্ববর্তী ইমামগণকেও ইহাদের মতো ভাবিতে শুরু করেন এবং ধর্ম বিষয়ে আস্থা হারাইয়া ফেলেন।
সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলেন মোল্লা মোবারক নাগুরী ও তাহার দুই পুত্র আবুল ফজল ও ফৈজি। মোল্লা মোবারক নাগুরী সব মযহাব সম্পর্কে এলম হাসিল করিবার পর নিজেকে এজতেহাদের দর্জা প্রাপ্ত ভাবিতে শুরু করেন। তিনি কোন মযহাবের অনুগত না থাকিয়া ব্যক্তিগত মছলা অনুযায়ী ইবাদত করিতে থাকেন। তিনি এলেমের প্রচার ও প্রসারের কাজ ছাড়িয়া দিয়া পুত্রদের সঙ্গে রাজনীতিতে জড়াইয়া পড়েন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




