সম্প্রতি আমাদের পরিবারে দুজন নতুন সদস্যের আগমন হয়েছে।
অনেক দিন ধরেই আমার ইচ্ছা ছিল এদেরকে বাসায় নিয়ে আসার, কিন্তু সময় আর সুযোগের অভাবে হচ্ছিল না।
অবশেষে, গত মাসে গাছ মেলায় ঘুরতে গিয়ে দেখা পেয়ে গেলাম কাঙ্খিত জনদের। তাই দেরি না করে নিয়ে আসলাম বাসায়।
হুম, এবার পরিচয় দিয়ে দেই তাদের, এরা হলো কচ্ছপ, কাছিম, টরটয়েস।
ছোটবেলা নিনজা টারটেলস কার্টুনটা দেখার পর থেকেই আমর খুব শখ ছিল কাছিম পুষবো। বড় বড় পোষা কাছিম থাকবে, ভাবতাম বাগানে একটা বাথটাবে পানি আর শুকনো গাছের ডাল দিয়ে বাসা বানিয়ে দেবো তাদের। আর পাশেই থাকবে গাছ পালা ভরা মাটির ছোট ছোট পাহাড়!!
ছোট বেলার অনেক ফ্যান্টাসির মতোই এটা তখন পূরণ হয়নি। আমার মা, কচ্ছপের কথা শুনেই নাক কুচিকে সাথে সাথেই প্রস্তাব নাকোচ করে দিয়েছিলেন
এবারও যখন কাছিম কিনতে গেলাম তখন একটু বাগড়া দিয়েছিলেন, তবে কচ্ছপের আকৃতি আর তার প্রতি সোহার বিশেষ আগ্রহ দেখে আর বেশি কিছু বললেন না।
শেষ পর্যন্ত তাই সাড়ম্বরে নিয়ে আসা হলো ছোট্ট সবুজ রং এর কিউট কছিমদ্বয়কে। এরা লম্বায় দুই ইঞ্চির মতো এবং এক্যুরিয়ামে পোষায় জন্যই তৈরি।
দোকানদার বলে দিল, এরা এ্যকুরিয়ামের অনান্য মাছেদের সাথে এক সাথেই থাকতে পারবে। বাসায় এনে তাই ছেড়ে দিলাম ওখানে , মনের সুখে তারা ডুব সাতার দিতে থাকলো।
কিন্তু কিছু সময় পরে দেখলাম, একটু পরপরই কাছিম গুলো পানির উপরে শুধু মাথা উচু করছে, মনে হলো ডাঙ্গা খুজছে।
কাঠের তক্তা দিয়ে আপাতত সমস্যার সমাধান করা হলো, সাতারের মাঝে মাঝে এরা এই তক্তার উপর উঠে বসে থাকে। আসলে কছিম একটানা পানিতে থাকতে পারেনা (দোকানদার জানে ঘোড়ার ঢিম
এরপরে দেখা দিল নতুন সমস্য, এ্যকুরিয়ামের আগের সদস্য মানে ব্লাক মুর, গাপ্পি, গোল্ড ফিস, এঞ্জেলরা এই নতুন অভিবাসীদের তেমন পছন্দ করছেনা। সবাই এককোনায় জড়ো হয়ে জটাল করছে। ওদিকে সিলভার শার্ক গুলো বারবার তাড়া করছে বেচারাদের।
এই যখন অবস্থা তখন একদিন খাবার দিতে গিয়ে দেখি গোল্ডফিস আর দুটো গাপ্পির লেজের কিছু অংশ উধাউ হয়ে গেছে। ঘটনা কি!!
নজর রাখা শুরু করলাম। দেখি এই মাছ গুলোকে নিরিহ পেয়ে কাছিম বাবাজীরা এদের উপর সিলভার শার্কের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিচ্ছে। সুযোগ পেলেই কামরে দেবার চেষ্টা করছে ওদের
এভাবে চললে এক্যুরিয়াম যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে আর বেশি দেরি হবে না, তাই দেরি না করে উনাদের জন্য আলাদা বাসভূমি বানিয়ে দিলাম।
নতুন বাসায় এসেও তারা কিন্তু পুরানো সাথিদের ভুলে যায়নি। পাশাপাশি কেইস তো, তাই মাঝে মাঝেই এভাবে পাশের কেসের মাছেদের দেখে ওরা।
আমার সোহা খুব খুশি কাছিম দুটো পেয়ে।
দিনের মধ্যে অন্তত একবার এগুলো নিয়ে তার খেলা চাই, এজন্য ককশিট বানিয়ে দিলাম খেলার একটা বাক্স।
বাক্সের মধ্যে কছিম গুলোকে ছেড়ে দিলে খুব দ্রুত দেয়াল বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করতে থাকে, এক সময় দেয়াল টপকে অন্য পাশে নেমে যায়। তখন সোহামনি বিপুল উৎসাহে ধরে আবার বাক্সে রেখে দেয়, এটাই হলো তার খেলা!!
এবার যারা যারা কাছিম পুষতে চান তাদের জন্য কিছু টিপস (প্রাকট্যিকালি শেখা
১। দোকানে দেশি কাছিম আর এক্যুরিয়াম কাছিম পাওয়া যায় কিনতে।
দেশি গুলো একটু সাইজে বড়। তবে দাম একটু বেশি নিলেও পোষায় জন্য এই বিদেশি কাছিম গুলোই ভাল।
২।মাছের দোকানদারেরা যতই বলুক না কেন, কাছিম কিন্তু একটানা পানিতে থাকতে পারে না। তাই এক্যুরিয়াম এমন ভাবে বানতে হবে যাতে কিছু অংশে পানি থাকে আর কিছু শুকনো। শুকনো জায়গাটা কৃত্রিম গাছ পাতা আর ছোট ছোট পাতা দিয়ে সাজিয়ে দেয়া যায়।
৩। এরা ছায়াময় আড়াল পছন্দ করে, তাই এসব গাছ আর পাথর দিয়ে আড়াল করে দিলে এদের থাকতে ভাল লাগবে।
৪। টরটায়েস ফুডের পাশাপাশি শসা আর শসা জাতীয় ফল, লাল শাক খেতে দিলে গায়ের রং সুন্দর উজ্জল হবে।
৫।পানি অবশ্যই তিন দিন পরে পরে বদলে দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



