somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

..........ডাইনী বুড়ি, মুইল্লা ও পাতি শিয়াইল্লার গল্প...........

২২ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন আগে এক গায়ে থাকতো এক মা আর মেয়ে। মেয়ের নাম মুইল্লা। একদিন মুইল্লার খুব পিঠা খেতে ইচ্ছা করলো, সে মাকে বললো, "মা মা মোর খুব পিডা খাইতেচ্চাছা করতে আছে"। মেয়ের কথা শুনে মার খুব মন খারাপ হলো, কারণ ওরা ছিল খুবই গরীব। তো মা বললো, 'চাউলা নাই, তেল নাই কিদ্দা বানামু পিডা"

এই কথা শুনে মুইল্লা মাকে বলে, মা তুমি কোন চিন্তা করিয় না, মুই ব্যবস্তা করতে আছি।
তখন সে বেড়ূলো পাড়া বেড়াতে, মোড়লের বাড়িতে, গিয়ে বসলো তাদের চালের বস্তার উপরে। মোড়ল গিন্নীর সাথে একথা সে কথার বলার পরে, যেই না একটু গিন্নি একটু ওপাশে গেছে, আর অম্নি মুইল্লা করলো কি চালের বস্তা হাতে নিয়ে দিল একটা দৌড়। মোড়ল গিন্নী দৌড়ে এসে বলে 'ঐ মুইল্লা মোগ ধানের ছালা দিয়া যা।' মুইল্লা দৌড়ায় আর উত্তর দেয়,'হে তো মুই নেই নাই, মোর হাতেএ নিছে।'
এর পরে আরেক বাড়িতে গিয়ে বসলো তাদের গুড়ের পিপার উপর, তারপর সুযোগ বুঝে পিপা নিয়ে আবার দৌড়। বাড়ির মালিক দৌড়ে এসে বললো" ঐ মুইল্লা মোগ গুড়ের পিপাগ্গা দিয়া যা।' মুইল্লা দৌড়ায় আর উত্তর দেয়,'হ্যা তো মুই নেই নাই, মোর হাতেএ নিছে।'

এভাবে একে একে তেল, নুন সব জোগার হলো, মুইল্লার মা মহানন্দে পিঠা তৈরি করে দিল, আর মুইল্লা ততোধিক আনন্দে সব পিঠা বসে বসে খেয়ে ফেললো। আর একটা পিঠা নিয়ে তাদের বাড়ির পাশের বনের ধারে মাটিতে পুতে রাখলো। সেদিন খুব বৃষ্টি হলো, পরের দিন সকালে মুইল্লা গিয়ে দেখে, ওমা দিব্যি একটা বড় সর পিঠার গাছ হয়ে আছে আর তাতে নানা রমক পিঠা, পুলি পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, পাকন পিঠা কি নেই। দেখে তার আনন্দ আর কে দেখে, সে সারাদিন গাছে চরে বসে থাকে আর পিঠা পেরে পেরে খায়।


এমন সময় একদিন ঐ দিক দিয়ে একটা ডাইনী বুড়ি যাচ্ছিল, নাদুস নুদুস মুইল্লাকে দেখে তার খুব লোভ হলো, সে ভাবলো কিভাবে এটাকে ধরা যায়! তখন সে থুথ্থুরে বুড়ির চেহারা নিয়ে মুইল্লার পিঠা গাছের নীচে এসে হাজির হলো।
বুড়ি বলে 'ও মুইল্লা মোরে এট্টা পিঠা দে", মুইল্লা একটা গোলাপ পিঠা ছিড়ে দিল নীচে, বুড়ি খেয়ে বলে 'এইডু লাগে নাই মোর লেপেও'। তখন মুইল্লা আরেকটা দুধ চিতই দিল, সাথে সাথে খেয়ে ফেলে বুড়ি বলে "এইডু লাগে নাই মোর ছ্যাপেও। মুইল্লা তুই নীচে নাইম্মা আও, মোর হাতে হাতে দেও মুই পাতে পাতে খাই।" এই কথায় সে যেই না নীচে এসে পিঠা দিতে গিয়েছে, আর অম্নি বুড়ী তাকে খপ করে ধরে ঝপ করে পোটলার মধ্যে নিয়ে চললো।


যেতে যেতে বুড়ির আবার প্রকৃতির ডাক এসে গেলো, সে তখন বস্তাটা একটা রাস্তার পাশে ঝোপের আড়ালে রেখে কাজ সেরে আসতে গেলো। তখন বস্তার ফাঁক দিয়ে মুইল্লা দেখে কাছেই মাঠে এক কৃষক কাজ করছে, সে ডেকে বলে চাষী ভাই আমাকে একটু বস্তা খুলে দাও না, আমি তোমার মাঠের অনেক কাজ করে দেবো। মুইল্লার অনুরোধে চাষী বস্তার মুখ খুলে দিল, আর মুইল্লা তখন করলো কি বস্তার মধ্যে কাদা, কাটা ঝোপ, পাথর এই সব হাবিজাবি ভরে ঝোপের আড়ালে লুকলো। বুড়ি এসে দেখে যেমন বস্তা তেমনই আছে, সে খুশি হয় আবার বস্তা কাঁধে নিয়ে হাটা শুরু করলো। কিছু দুর যায়, ধুম করে পাথর গড়িয়ে পরলো বুড়ির পিঠে, আর বুড়ি করলো মুইল্মলা বুঝি তার পিঠে কিল দিচ্ছে, সে বলে " ও মুইল্লা তুই মোরে কিল মারো, দাড়া বাড়ি যাই, হেপর তোর একদিন কি মোর একদিন।' আবার কিছুক্ষন পরে লাগলো কাঠা ঝোপের খোঁচা, বুড়ি মনে করে মুইল্লা বুঝি চিমটি দিল, সে আবার শাসায় " ও মুইল্লা তুই মোরে চিমটাও, দাড়া বাড়ি যাই, হেপর তোর একদিন কি মোর একদিন।" এভাবে খোঁচা, গুতো খেতে খেতে বুড়ি বাড়ি পৌছে গেল। গিয়ে ছেলের বউকে ডাকলো বউ বউ দেখো কি নিয়ে এসছি, এটাকে কেটে কুটে রান্না করো। বউ এসে গদগদ হয়ে বস্তার মুখ খুলে দেখে, ওমা একি, এযে শুধু পাথর, কাটা ডাল আর কাদামাটি!!
দেখেতো রাগে বুড়ির ব্রক্ষতালু জ্বলে গেলে, রাগে গজ গজ করতে করতে সে আবার রওনা হলো মুইল্লাকে ধরতে।


আবারও আগের মতো পিঠা গাছের নীচে আসে বুড়ি বলে 'ও মুইল্লা মোরে এট্টা পিঠা দে", মুইল্লা একটা চিতই পিঠা ছিড়ে দিল নীচ, বুড়ি খেয়ে বলে 'এইডু লাগে নাই মোর লেপেও'।
তখন মুইল্লা আরেকটা পাটি সাপটা দিল, সাথে সাথে খেয়ে ফেলে বুড়ি বলে "এইডু লাগে নাই মোর ছ্যাপেও। মুইল্লা তুই নীচে নাইম্মা আও, মোর হাতে হাতে দেও মুই পাতে পাতে খাই।'
তখন মুইল্লা যেই আবার পিঠা দিতে নীচে নেমে এসছে, ওমনি বুড়ি তাকে আবার খপাস করে ধরে ঝপাস করে বস্তায় ভরে দে দৌড়, এবার আর রাস্তায় থামাথামি নেই, এক্কেবারে বাড়ি চলে আসলো। বউকে বললো, বউ এইবার আর কোন ভুল হয়নি, তুমি মুইল্লাকে বের করে রান্না করো আমি তোমার বাপের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে আসি।

তখন ডাইনীর ছেলের বউ বস্তা খুলে মুইল্লাকে বের করলো, বের হাবার সাথে সাথে সে বউটার দিকে তাকিয়ে বত্রিশ দাঁত বের করে দিল একটা হাসি। তার দাঁত গুলো ছিল মুক্তোর মতো ধবধবে সাদা, সেই সাদা দাঁতের হাসি দেখেতো বউয়ের চোখ ধাধিয়ে গেলো আর একটু হিংসাও হলো। কারণ বউটার দাঁত ছিল এবরোথেবরো উচু উচু, আর ময়লা। বউ বলে, মুইল্লা তোমার এত সুন্দর দাঁত হলো কিভাবে, আমাকে এমন দাঁত করে দিবা? মুইল্লা বলে অবশ্যি দেবো, যাও তুমি একটা খুন্তী গরম করে নিয়ে আসো, আমি তোমার দাঁত ঠিক করে দিচ্ছি। তখন বউ দৌড়ে গিয়ে চুলা খুন্তি গনগনে গরম করে নিয়ে আসলো, আর মুইল্লা করলো কি সেই খুন্তি দিয়ে দিল ডাইনীর বউটার মুখে একটা ঘা,আর বউটা তাতে গেল ফট করে মরে। তখন মুইল্লা বউটার শাড়ি জামা পরে বউ সেজে রইলো, আর ঘরের পাশ দিয়ে একটা শেয়াল যাচ্ছিল সেটাকে ধরে রেধে বেড়ে চুপ করে বসে রইলো। রাতে সবাই এসে মজা করে খেয়েদয়ে ঘুমাতে গেলো।


তখন বউকে মুইল্লা বুড়িকে বলে, মা মা ঘরে পানি নাই, চলেন পুকুর থেকে পানি নিয়া আসি। বুড়ি বলে না এখন লাগবে মা, না সকালে এনো, মুইল্লা বলে না মা এখনই চলেন!
তখন দুজনে মিলে কলসি নিয়ে গেলো পুকুরে, পুকুরে অনেক পদ্ম ফুটে আছে দেখে মুইল্লা বলে, মা মা আমি একটা ফুল নিয়া আসি। শাশ্বড়ি আর কি করবে, বলে যাও নিয়া আসো। তখন মুইল্লা সাতারে সাতরে একদম পুকুরের অন্যপারে চলে গেলো, তারপর পাড়ে উঠে "বুড়ি তোর বউ তুই খাইলি, মোর দেখলি টিক্কিটা" এই বলে এক দৌড়ে বাড়ি চলে গেলো /:) /:)



এই গল্পটা খাঁটি বরিশালের ভাষায় আমার নানুর কাছ থেকে শুনেছিলাম, ছোট বেলায়। নানুর ঘরে বড় বড় দুটো পালংক ঝোড়া দেয়া থাকতো সব সময়, যাতে তিনি তার সব নাতী নাতনীদের নিয়ে ঘুমাতে পারেন। সেই পালংকে শীতের দিনে লেপ মুড়ি দিয়ে এই সব কিম্ভুত গল্প শুনতে এত ভাল লাগতো, আরেকটা গল্প বলতেন, 'পাতি শিয়াইল্লার' গল্প! কি অদ্ভুত না ছিল সেই সব গল্প গুলো। পাতি শিয়াইল্লার গল্পটা ছিল..............
একবার গ্রামের লোকেরা শিয়ালের যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে বেশ কিছু শিয়াল মেরে ফেললো। এই আক্রমনে পাঁতি শিয়ালের মা, বাবা, ভাই আর বউ মারা গেলো। এই সময়ে সে আবার গিয়েছিল পাশের গ্রামে মুরগি চুরি করতে, ফলে সে যাত্রায় সে বেচে গেলো। তখন পেচা ভাবলো, যাই পাতি শিয়ালকে খবরটা দিয়ে আসি। এই ভেবে পেচা গিয়ে দেখে পাতি শিয়াল গাছের নিচে বসে মুরগীর ঠ্যাং খাচ্ছে, সে তখন তাকে বললো, পাতি শিয়াইল্লা তোর মায় মরছে', পাতি শিয়াল শুনে বলে 'উহ'। তারপর বললো পাতি শিয়াইল্লা তোর বাপ মরছে, পাতি শিয়াল শুনে বলে 'আহ'। এরপর পাতি শিয়াইল্লা তোর ভাই মরছে, পাতি শিয়াল শুনে বলে 'হায়'। তারপর যেই না বললো পাতি শিয়াইল্লা তোর বউ মরছে, পাতি শিয়াল শুনে বলে 'উহ আহ হায় হায় হায় হায়' :(( :(( :((:((:((

যাই হোক সেই খাঁটি বরিশালের ভাষা থেকে অনুবাদ করে দিলাম গল্পটা, কেমন হলো?? B-) :P
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:১৭
১৭৪টি মন্তব্য ১৭৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×