somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবুতর কাহিনী ....

০২ রা মে, ২০১১ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইতো গত সপ্তাহে ছুটির দিনে বাসায় টুকাটাক কাজ করছি, এমন সময় সোহা মনি চিৎকার করতে করত দৌড়ে আসলো ' মা মা একটা কবু পাকি আমান সাথে খেলতে আত্তে"। তিনি আবার কবুতর কে 'কবু পাকি' বলে ডাকে।
বলল্লাম কোথায় আসছে বাবা, তোমার বইতে? না তো, সে চোখ বড় বড় করে বললো, 'দেখ আমান ঘরে আত্তে'। তুমি আতো, এই বলে আমার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিল। অগত্যা আর কি করা, কবু পাখি দেখতে আমিও তার পিছু পিছু হাজির হলাম। বেডরুমে এসে দেখি, ওমা সত্যিই তো জানালার গ্রীলে একটা সাদা কালো ছিট ছিট আর একটা নীল গলা ধুসর কবুতর বসে আছে!

ইনি হলেন তিনি


আর ইনি হলেন তিনি'র উনি

দেখে অবশ্য তেমন অবাক হইনি, কারণ আমাদের দু'বাসা পরেই এক বাসার ছাদে কবুতেরর খোপ দেখেছি, ওদেরই হবে।

তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই অফিস থেকে ফিরে সোহার মুখে তার নুতন বন্ধু কবু পাখিদের বিবরনী শুনতে হলো, বুঝলাম ইদানিং তারা এদিকে বেশ ঘোরাঘুরি করছে!
একদিন সোহা বললো, মা মা আমি কবু পাখির ডিম খাবো। আরে কি মুশকিল, কোথায় কবুতরের ডিম পাবো আমি!!
বাবা ওটা তো দোকানে পাওয়া যায় না, বল্লাম আমি! না মেয়ের ভয়াবহ জেদে, সে বলে 'আতে তো।' কোথায় আছে দেখাও, বলাতে ও ওর
বাবাকে টেনে নিয়ে গেলো জানালার কাছে।

সত্যিই দেখি পাশের বাসার এসি রাখার চৌকা খালি খাঁজের মধ্যে একটা ডিম পরে আছে কয়েকটা খড়কুটোর মধ্যে। এটা হলো সেই সাদা কালো ছিট ছিট কতুবতরের কান্ড, উনি বাসার পাশে বেস আছেন! কিছুক্ষন পরে দেখি, না দেখি আরেকজনও এসে হাজির। আর ইনি হলেন সেই নীল গলা ধুসর কবুতরটা। তারা দু'জনা এখানে বাসা বানিয়েছেন, আমাদের নতুন প্রতিবেশি!


প্রথমে এদের বাসাটা এমনই খড়কুটো শূণ্য ছিল

এখন তারা একটু গুছিয়ে নিয়েছে

এরপর থেকে সোহার সাথে প্রতিবেশিদের খোঁজ খবর নেবার নতুন আরেক সংগী জুটে গেলো, সোহার বাবা। একদিন দেখি একমাত্র ডিমটা গড়িয়ে কারণিশের কোনার চলে এসছে। দেখে বাবা মেয়ের সাথে সাথে সাথে আমারও একটু একটু দুশ্চিন্তা হলো, যদি পরে যায়!! বেশ টেনশনে ছিলাম দু'দিন, কি অদ্ভুত মানুষের মন তাই না!


পরো পরো সেই ডিমটা

পরে দেখি মা কবুতরটা (নীল গলা ধুসর কবুতরটা) কোন এক সময়ে আবার ঠেলে ঠেলে ভেতরে নিয়ে গেছে!

যাই হোক, এদের এমন ফার্নিচার বিহীন শূণ্য বাসা সোহার বাবার তেমন পছন্দ হচ্ছিল না। তাই সে করলো কি, ছাদে উঠে আমাদের পুরানো গাছপালার পাতা, ঘাস, আমার ফুলদানীর ড্রাই ফ্লাওয়ার থেকে ঘাস জাতীয় লতা গুলো নিয়ে পাশের সানসেটে ফেলে রাখতে রাখলো প্রায় প্রতিদিনই। দোকান থেকে সরিষাদানা কিনে আনলো, মায়ের যথেষ্ট পুষ্টির দরকার এখন তাই, সকালে বিকালে সানসেটে সরিষা ফেলে অপ্যায়নও চলছে সমান তালে। যাতে খাবারের জন্য বাবা মায়ের বেশি দূরে কোথাও যেতে না হয়:P


আমাদের ফেলে রাখা ঘাস গুলো নিয়ে যাচ্ছে বাবা কবুতরটা। মজার ব্যাপার হলো এরা শুধু শুকনো ঘাস বা লতাই শুধু নেয়, এই ঘাসের ঝোপটা তাজা ছিল, তখন নেয়নি, শুকিয়ে যাবার পর নিচ্ছে!


সারাদিন এরা পালা করে ডিমে তা দেয়, তবে রাতে শুধু মা কবুতরটা থাকে। বাবা কবুতর সামনের সানসেটে ঘুমায়।

আমি খেয়াল করেছি বাবাটা একটু অগোছালো, উড়ে এসে ধপাস করে বাসায় বসে পরে, খড়কুটো গুলো এলোমেলো করে দিয়ে। একবার উল্টা হয়ে বাসে, আবার সোজা, এমন করতেই থাকে।
এই যে বসেই খড় গুলো এলোমেলো করলো



এরপর সোজা হয়ে বসলো


আবার উল্টো দিকে ঘুরলো!

এরপর আবার সোজা হয়ে বসেছিল, ছবি বেশি হয় যাবার জন্য দিলাম না! ওর রকমসকম একদম মানুষ বাবাদের মতোই অস্থির, চঞ্চল, ঘর অগোছালো করতে ওস্তাদ X((
আর মা কবুতরটা খুব লক্ষী, প্রথমে বাসার কাছে একটু দাড়ায় তারপর সন্তর্পনে সাবধানে বাসার এসে বসে, আর কোন রকম নড়াচড়াই করে না, শুধু ঘার ঘোরানো ছাড়া।



সেদিন দেখি তাদের সংসারে নতুন অতিথি এসেছে, মানে আরেকটা ডিম পেরেছে।
ওদের বাসায় ডিমের সংখ্যা এখন দুটো।


বাবা কবুতরটা খড়কুটো গুলো নিয়ে গিয়ে বাসায় রাখে, আর মা কবুতরটা ডিমে তা দিতে দিতেই ঠোট দিয়ে সেগুলো চারপাশে গুছিয়ে রাখে। আরেকটা খুব মজার ব্যাপার, প্রতিবার খর বা খাবার দিয়ে উরে যাবার আগে বাবা কবুতরটা মা কবুতরের মাথায় ঠোট দিয়ে আস্ত ঠুকরে দেয়ে, দারুন ভালবাসা।

একটি একান্ত মূহুর্তে তারা

তবে তাদের এই ভালবাসাবাসীর সংসারে কিছুদিন হলো দুই ভিলেনের আবির্ভাব হয়েছে।
সেদিন সকালে হলো কি দুই ছেলে এসে হাজির, কবুতর গুলো নাকি ওদের, ওরা খুঁজে খুঁজে বের করেছে। মানে ঘটনা হলো দুই বাসার দু'জন প্রেমে করে পালিয়ে এসে বাসা বেধেছে আমাদের বাসায়। এখন ওরা কবুতর গুলো ধরতে এসেছে। ওদিকে সোহা আর তার বাবা কিছুতেই এখন ধরতে দেবে না ওদের, সে এক বিশাল চৌকাটেবিল মিটিং দুই পক্ষের!
শেষ পর্যন্ত পলাতক কবুতরদ্বয়ের লোকাল গার্জিয়ান হিসাবে সোহার বাবা দাবি করেছে পলাতকদের এখন নেয়া যাবে না, আগে বাচ্চা হোক তারপর দেখা যাবে।

আরেক ভিলেন হলেন আমাদের বাড়িওয়ালার মোটা কালো মেনি বেড়াল, ইনি অবশ্য এখনও মনে হয় খবর পায়নি।
যাই হোক দোয়া করবেন যাতে এদের সুখের সংসারে এই সব দুস্কাকৃতিকারীরা কাটা না হতে পারে। বাচ্চা ফুটলে পোস্টে আপডেট দেবো.....
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:১৬
১৫৯টি মন্তব্য ১৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×