somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রোমহর্ষক পটকাবাজীর কাহিনী :|

০১ লা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন আমরা সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, তো সেই সময় হলে দুই সীটের রুম পেলাম দ্বোতলায়, আর মজার হলো আমাদের ব্যাচের মোটামুটি সবাই সেই রো তে। আমাদের পাশের রুমে ছিল সিনিয়ার দুই আপু, একজন অনেক মোটা এর আবার হালকা গোফ ছিল, আরেক জন অনেক শুকনা। এদের ডিপার্টমেন্টের জটিলতার কারণে মাস্টার্স পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছিল, তো এক দঙ্গল জুনিয়ারের মধ্য থাকতে হয়তো তাদের তেমন ভাল লাগতো না। সেই ভাল না লাগার ঝালটা এনারা অবশ্য ভাল ভাবেই তুলতেন, এই যেমন বারান্দায় বসে জোরে কথা বলল্লে, বা রুমে একটু সাউন্ড দিয়ে গান বাজালে সাথে সাথে ঝাড়িX(। আমারও ইচ্ছা করে ওনাদের রুমের সামনে দিয়ে স্যান্ডেল ঘসটে ঘসটে শব্দ করতে করতে হাটতাম B-)

এই দুই আপুর মধ্যে মোটা আপুটার ছিল চরম কুসংস্কার। সে যখন তারে কাপড় মেলতেন তার আগে সেই তারটা মিনিমাম দশবার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতেন, তার কাপড়ের আশেপাশে আমাদের কোন কাপড় মেলতে পারতাম না। আবার কিচেন থেকে যখন বোতলে পানি নিতেন (সেই সময় আমার সরাসরি টেপের পানিই খেতাম) তখন পানির বোতল আর টেপের মুখটা ধুতেই থাকতেন ধুতেই থাকতেন এর যেন কোন শেষ নেই। আমার অতিষ্ট হয়ে অন্য ফ্লোরের কিচেনে যেতাম তখন X(
ওনার একটা হোৎকা মোটকা বেড়াল ছিল ধুসর রং এর, সেই বজ্জাতটার কাজই ছিল সব সময় বারান্দার ঠিক মাঝখানটাতে নবাবের মতো পা ছড়িয়ে রাতদিন ঘুমানো। একদিন আমি এটার গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছিলাম, তাতে করে সেই বিল্লি করলো কি রাতের বেলায় এসে আমার রুমের দরজার প্রকৃতিক কাজ করে গেলে!

সেই সময় ভার্সিটিতে ইন্টার ডিপার্টমেন্ট ফুটবল খেলা চলছিল। আমদের ডিপার্টমেন্ট ফাইনালিস্ট, সাথে চিরপ্রতিদ্বন্দী গোপাল (গভমেন্ট এন্ড পলিটিক্স কে সংক্ষেপে গোপাল বলতাম আমরা )। এই সব খেলা গুলো আমাদের কাছে বিশ্বকাপের চাইতে কোন অংশে কম ছিল না। এমন কি আমাদের স্যাররাও মাঝে মাঝে প্রাকটিস দেখার জন্য মাঠে চলে আসতেন।
বেশির ভাগ প্লেয়ারই আমাদের ব্যাচের ছিল, আবার প্রতিপক্ষ গোপালের মেইন প্লেয়ারও ব্যাচ মেট। খেলার আগের দিন ওরা আমাদের শুনিয়ে গেল, তোদের আমারা হারাবোই , তারপর দেখবি সবই নেড়া মাথায় তোদের ডিপার্টমেন্টে মিছিল করে যাবো! আর আমরা বললাম তোদের আমরা এত গোল দেবো যে সেগুলো হলে নিয়ে যাবার জন্য বস্তা লাগবে। মানে খেলার আগেই সেই রকম স্লেজিং আরকি! গোপালে আমাদের ব্যাচ মেট ছিল সুমাইয়া শিমু, ও করতো কি সব সময় দলবল নিয়ে অপনেন্ট টিমের গোলপোস্টের আশেপাশে থাকতো, গোলকিপারের কনসেন্ট্রেশন ভংগের জন্য:|

যাই হোক খেলার দিন আমরা মহাসমারোহে পটকা ফটকা বাঁশি নিয়ে মাঠে হাজির, খোলোয়াড়দের চাইতে আমাদের উৎসাই বেশি!! কিন্তু মর্মান্তিক বিষয় হলো আমাদের নাক কেটে দিয়ে আমাদের ফুটবল টিম সেবার হেরে গেলো গোপালের কাছে। পরের দিন ঠিকই তারা নাড়ু মাথা করে চ্যাম্পিয়ান কাপ হাতে নিয়ে ঘুরে গেলো আমাদের বিভাগ থেকে.....কি লজ্জা কি লজ্জা।

রুমে ফিরে একগাদা পটকা দেখে আরও মেজাজ খারাপ হলো। ডাস্টবিনে ফেলে দিতে গেলাম, তখন আমার রুম মেট বললো ফেলিস না ওগুলো, এগুলো দিয়ে আজ শায়েস্তা করবো আজকে লিমাদেব আর চিমাদেবকে মানে আপুদ্বয়কে!


শীতের সময় ছিল সেটা, সেদিন কুয়াশাও পরেছিল খুব। আমাদের হলটা বাংলা ৪ আকৃতির, বিল্ডিং এর মাঝে গোল বড় ফাঁকা লন, তাই কুয়াশা বারান্দাতেও চলে আসে। রাত গভীর হবার পরে আমরা করলাম কি একসাথে দুটো পটাকা বেধেঁ এদের লেজের সুতোর সাথে লম্বা একটা চিকন দড়ি বাধলাম, পটকা রেখে আসলাম লিমাদেব আর চিমাদেবের রুমের সামনে। তারপরে সেই দড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েই এক দৌড় রুমে ঢুকে লাইট নিভিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছি সব। এক মিনিট যায় দু মিনিট যায় পটকার শব্দ আর পাই না! হলো টা কি?
বের হয়ে দেখি হতচছাড়া আগুনটা নিভে গেছে /:)


এইবার করলাম কি দড়িতে একটু নেইলপালিশ রিমুভার লাগালাম, তারপর আবার আগুন এবং রুমে ঢুকে আত্মগোপন।
কিছুক্ষন পরে মনে হলো বিকট শব্দ বাজ পড়লো, ধরাম করে। সেই শব্দে আমরা নিজেরাই হকচকিয়ে গেলাম, এত জোরে যে শব্দ হবে ভাবিনি!!
হলের সুপারা জেগে গেলো, মেয়েরাও কেউ কেউ বারান্দায় এসে বোঝার চেষ্টা করছে কি হলো।
আমরা ভাবলাম আমাদেরও বার হওয়া উচিত না হলে কেমন দেখায়। বের হয়ে দেখি সারা বারান্দা ধোয়ার ভর্তি আর কাগছের কুঁচি ছড়িয়ে আছে। ঐদিকে প্রভোস্টও চলে এসেছেন, উনি যদি কোনভাবে টের পান আমাদের রোতে এমন ধোয়া তাহেল তো কাজ সেরেছে!! আস্তে আস্তে পা দিয়ে কাগজ গুলো সব সরালাম, আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল যে কুয়াশার জন্য দ্বোতালার ধোয়া আলাদা ভাবে টের পাবার কোন উপায় ছিল না।
তো প্রভোস্ট স্যার ও তার সাঙ্গপাঙ্গ গন কিছুক্ষন তদন্ত করে এটা হলের বাইরে ফায়ার হয়েছে এই রায় দিয়ে চলে গেলে মেয়েদের নিশ্চিন্তে থাকতে বলে। আমরাও হাপ ছেড়ে বাচলাম।



তবে সব চাইতে দু:খজনক হলো যাদের জন্য এই আয়োজন তাদের রুমের সামনে গিয়ে দেখি মৃদু নাক ডাকার শব্দ, এরা কিছুই টের পায় নি :((

এর পরে বারান্দা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে মনের দু:খ মনে চেপে রেখে যার যার রুমে ঘুমাতে গেলাম।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:০৭
১১৭টি মন্তব্য ১১৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×