তখন আমরা সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, তো সেই সময় হলে দুই সীটের রুম পেলাম দ্বোতলায়, আর মজার হলো আমাদের ব্যাচের মোটামুটি সবাই সেই রো তে। আমাদের পাশের রুমে ছিল সিনিয়ার দুই আপু, একজন অনেক মোটা এর আবার হালকা গোফ ছিল, আরেক জন অনেক শুকনা। এদের ডিপার্টমেন্টের জটিলতার কারণে মাস্টার্স পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছিল, তো এক দঙ্গল জুনিয়ারের মধ্য থাকতে হয়তো তাদের তেমন ভাল লাগতো না। সেই ভাল না লাগার ঝালটা এনারা অবশ্য ভাল ভাবেই তুলতেন, এই যেমন বারান্দায় বসে জোরে কথা বলল্লে, বা রুমে একটু সাউন্ড দিয়ে গান বাজালে সাথে সাথে ঝাড়ি
এই দুই আপুর মধ্যে মোটা আপুটার ছিল চরম কুসংস্কার। সে যখন তারে কাপড় মেলতেন তার আগে সেই তারটা মিনিমাম দশবার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতেন, তার কাপড়ের আশেপাশে আমাদের কোন কাপড় মেলতে পারতাম না। আবার কিচেন থেকে যখন বোতলে পানি নিতেন (সেই সময় আমার সরাসরি টেপের পানিই খেতাম) তখন পানির বোতল আর টেপের মুখটা ধুতেই থাকতেন ধুতেই থাকতেন এর যেন কোন শেষ নেই। আমার অতিষ্ট হয়ে অন্য ফ্লোরের কিচেনে যেতাম তখন
ওনার একটা হোৎকা মোটকা বেড়াল ছিল ধুসর রং এর, সেই বজ্জাতটার কাজই ছিল সব সময় বারান্দার ঠিক মাঝখানটাতে নবাবের মতো পা ছড়িয়ে রাতদিন ঘুমানো। একদিন আমি এটার গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছিলাম, তাতে করে সেই বিল্লি করলো কি রাতের বেলায় এসে আমার রুমের দরজার প্রকৃতিক কাজ করে গেলে!
সেই সময় ভার্সিটিতে ইন্টার ডিপার্টমেন্ট ফুটবল খেলা চলছিল। আমদের ডিপার্টমেন্ট ফাইনালিস্ট, সাথে চিরপ্রতিদ্বন্দী গোপাল (গভমেন্ট এন্ড পলিটিক্স কে সংক্ষেপে গোপাল বলতাম আমরা )। এই সব খেলা গুলো আমাদের কাছে বিশ্বকাপের চাইতে কোন অংশে কম ছিল না। এমন কি আমাদের স্যাররাও মাঝে মাঝে প্রাকটিস দেখার জন্য মাঠে চলে আসতেন।
বেশির ভাগ প্লেয়ারই আমাদের ব্যাচের ছিল, আবার প্রতিপক্ষ গোপালের মেইন প্লেয়ারও ব্যাচ মেট। খেলার আগের দিন ওরা আমাদের শুনিয়ে গেল, তোদের আমারা হারাবোই , তারপর দেখবি সবই নেড়া মাথায় তোদের ডিপার্টমেন্টে মিছিল করে যাবো! আর আমরা বললাম তোদের আমরা এত গোল দেবো যে সেগুলো হলে নিয়ে যাবার জন্য বস্তা লাগবে। মানে খেলার আগেই সেই রকম স্লেজিং আরকি! গোপালে আমাদের ব্যাচ মেট ছিল সুমাইয়া শিমু, ও করতো কি সব সময় দলবল নিয়ে অপনেন্ট টিমের গোলপোস্টের আশেপাশে থাকতো, গোলকিপারের কনসেন্ট্রেশন ভংগের জন্য
যাই হোক খেলার দিন আমরা মহাসমারোহে পটকা ফটকা বাঁশি নিয়ে মাঠে হাজির, খোলোয়াড়দের চাইতে আমাদের উৎসাই বেশি!! কিন্তু মর্মান্তিক বিষয় হলো আমাদের নাক কেটে দিয়ে আমাদের ফুটবল টিম সেবার হেরে গেলো গোপালের কাছে। পরের দিন ঠিকই তারা নাড়ু মাথা করে চ্যাম্পিয়ান কাপ হাতে নিয়ে ঘুরে গেলো আমাদের বিভাগ থেকে.....কি লজ্জা কি লজ্জা।
রুমে ফিরে একগাদা পটকা দেখে আরও মেজাজ খারাপ হলো। ডাস্টবিনে ফেলে দিতে গেলাম, তখন আমার রুম মেট বললো ফেলিস না ওগুলো, এগুলো দিয়ে আজ শায়েস্তা করবো আজকে লিমাদেব আর চিমাদেবকে মানে আপুদ্বয়কে!
শীতের সময় ছিল সেটা, সেদিন কুয়াশাও পরেছিল খুব। আমাদের হলটা বাংলা ৪ আকৃতির, বিল্ডিং এর মাঝে গোল বড় ফাঁকা লন, তাই কুয়াশা বারান্দাতেও চলে আসে। রাত গভীর হবার পরে আমরা করলাম কি একসাথে দুটো পটাকা বেধেঁ এদের লেজের সুতোর সাথে লম্বা একটা চিকন দড়ি বাধলাম, পটকা রেখে আসলাম লিমাদেব আর চিমাদেবের রুমের সামনে। তারপরে সেই দড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েই এক দৌড় রুমে ঢুকে লাইট নিভিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছি সব। এক মিনিট যায় দু মিনিট যায় পটকার শব্দ আর পাই না! হলো টা কি?
বের হয়ে দেখি হতচছাড়া আগুনটা নিভে গেছে
এইবার করলাম কি দড়িতে একটু নেইলপালিশ রিমুভার লাগালাম, তারপর আবার আগুন এবং রুমে ঢুকে আত্মগোপন।
কিছুক্ষন পরে মনে হলো বিকট শব্দ বাজ পড়লো, ধরাম করে। সেই শব্দে আমরা নিজেরাই হকচকিয়ে গেলাম, এত জোরে যে শব্দ হবে ভাবিনি!!
হলের সুপারা জেগে গেলো, মেয়েরাও কেউ কেউ বারান্দায় এসে বোঝার চেষ্টা করছে কি হলো।
আমরা ভাবলাম আমাদেরও বার হওয়া উচিত না হলে কেমন দেখায়। বের হয়ে দেখি সারা বারান্দা ধোয়ার ভর্তি আর কাগছের কুঁচি ছড়িয়ে আছে। ঐদিকে প্রভোস্টও চলে এসেছেন, উনি যদি কোনভাবে টের পান আমাদের রোতে এমন ধোয়া তাহেল তো কাজ সেরেছে!! আস্তে আস্তে পা দিয়ে কাগজ গুলো সব সরালাম, আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল যে কুয়াশার জন্য দ্বোতালার ধোয়া আলাদা ভাবে টের পাবার কোন উপায় ছিল না।
তো প্রভোস্ট স্যার ও তার সাঙ্গপাঙ্গ গন কিছুক্ষন তদন্ত করে এটা হলের বাইরে ফায়ার হয়েছে এই রায় দিয়ে চলে গেলে মেয়েদের নিশ্চিন্তে থাকতে বলে। আমরাও হাপ ছেড়ে বাচলাম।
তবে সব চাইতে দু:খজনক হলো যাদের জন্য এই আয়োজন তাদের রুমের সামনে গিয়ে দেখি মৃদু নাক ডাকার শব্দ, এরা কিছুই টের পায় নি
এর পরে বারান্দা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে মনের দু:খ মনে চেপে রেখে যার যার রুমে ঘুমাতে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





